সাদামাটা ই-মেইলে প্রেরক একটি কভার লেটার ও জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়েছেন।
যাতে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকারে ডাক পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এটি দেখে যা মনে করা হয়েছিল, তা কিন্তু নয়। মূলত ছদ্মবেশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ-তথ্য হাতিয়ে নিতে স্পিয়ার-ফিশিং পাঠায় হ্যাকাররা।
নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্কিন ডলার অ্যাকাউন্টে ১০০ কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র ছিল এই ই-মেইল।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ৯ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু অর্থ উদ্ধারে নেই কোনো অগ্রগতি।
চুরির বছরই মাত্র ৩৫ শতাংশ অর্থ ফেরত পেয়েছিল বাংলাদেশ। ৫৬১ কোটি টাকা এখনো ফেরত আসেনি।
এমনকি অর্থ ফেরত দেওয়ার আশ্বাসও মেলেনি। এই সময়ে বরং দেশ-বিদেশে মামলা পরিচালনায় আইনজীবী ও আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠানের ফি বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ হচ্ছে। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪৮ কোটি টাকার মতো।
অর্থ ফেরত পেতে ফিলিপিন্স ও যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলছে। রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর মতিঝিল থানায় যে মামলা হয়েছিল, তার তদন্ত ৯ বছরেও শেষ করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সংস্থাটির তদন্ত প্রতিবেদন ৮০ বার পেছানোর পর এখন মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব চাইছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দেশ-বিদেশে মামলা পরিচালনায় আইনজীবী ও আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠানের ফি বাবদ মোটা অংকের অর্থ খরচ হলেও অর্থ ফেরত বা চলমান মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরতের প্রস্তাবেও সাড়া নেই ফিলিপিন্সের।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। শ্রীলঙ্কায় নেওয়া দুই কোটি ডলার ওই সময় ফেরত পায় বাংলাদেশ।
আর ফিলিপিন্সে নেওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দেশটির আদালতের নির্দেশে ক্যাসিনো মালিক কিম অং ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দেন।
বাকি ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারে ফিলিপিন্সের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বাংলাদেশের পক্ষে ১২টি মামলা করে। অর্থাৎ রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত এসেছে মাত্র ৩৫ শতাংশ।
শুরুর দিকে অর্থ ফেরাতে দেশটির জোর তৎপরতা ছিল। পরে তা থেমে গেছে। এখন পর্যন্ত একটি মামলারও রায় হয়নি।
পরে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত এবং দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রথমে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ।
এতে ফিলিপিন্সের আরসিবিসি ব্যাংক, ক্যাসিনো মালিক কিম অংসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে ২০২০ সালের মার্চে এই কোর্ট জানিয়ে দেন, মামলাটি তাদের এখতিয়ারাধীন নয়।
ওই বছরের ২৭ মে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্টে মামলার আবেদন করা হয়।
মামলার বিষয়ে বাংলাদেশের আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান কোজেন ও’কনর বিবাদীদের নোটিশ দেয়।
এরপর আরসিবিসি, অভিযুক্ত ব্যক্তি লরেঞ্জ ভি টান, রাউল টান, সোলায়ের ক্যাসিনো, ইস্টার্ন হাওয়ায়ে এবং কিম অং যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ‘মোশন টু ডিসমিস’ বা মামলাটি না চালানোর অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করেন।
তাঁদের আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর শুনানি হয়। ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল আংশিক রায় হয়।
২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি ছয় বিবাদীর ‘মোশন টু ডিসমিস’ বা মামলা না চালানোর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরসিবিসিসহ অন্য বিবাদীদের মধ্যস্থতার নির্দেশ দেন স্টেট কোর্ট।
তবে সমঝোতায় সাড়া দেয়নি ফিলিপিন্স। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতেও পরে কোনো শুনানি হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ফিলিপিন্স থেকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অর্থ ফেরত না পেয়ে ছয় বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সমঝোতায় অর্থ আদায়ের একটি রায় দেন দেশটির আদালত। সমঝোতার জন্য ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি ফিলিপিন্সে যায় বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
সেখানে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়। তারা দেশটিতে চলমান বিভিন্ন মামলায় তিনটি আদালতে সাক্ষ্য দেয়। তবে সমঝোতায় সাড়া মেলেনি।
আবার ফিলিপিন্সের আদালত থেকে কোনো রায় হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতেও কোনো অগ্রগতি নেই।
ফলে আদৌ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে, নাকি মামলা পরিচালনায় বছরের পর বছর শুধু অর্থ খরচ করতে হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
মামলা তদন্তের দায়িত্ব চাইছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মতিঝিল থানায় যে মামলা হয়েছিল, তার তদন্ত ৯ বছরেও শেষ করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এখন মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব চাইছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি দুদকের তপশিলভুক্ত অপরাধ।
সাবেক শেখ হাসিনা সরকার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি সাজানো মামলা করে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল সিআইডিকে। ঘটনার ৩৯ দিন পর মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়।
মামলায় চুরিসহ তিনটি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি ঘটেছে মূলত হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে, কিন্তু মামলায় কৌশলে চুরির ধারা দেওয়া হয়।
আইনে হ্যাকিংয়ের স্পষ্ট ধারা থাকলেও সেটি মামলায় উল্লেখ করা হয়নি, যাতে অভিযোগপত্র দিলেও মামলাটি বিচারে গিয়ে আসামিরা ছাড় পান। আসামিদের সুবিধা দিতেই এই ধারা যুক্ত করা হয়।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলার সিডি, আলামতসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র চেয়ে সিআইডির কাছে পাঠানো দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির ২১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরসহ জড়িত কর্মকর্তারা সরকারি কর্মচারী বা পাবলিক সার্ভেন্ট।
এটা দুদকের তপশিলভুক্ত অপরাধ। তাই মামলাটি দুদকের কাছে হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তৎকালীন গভর্নর বা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান বা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণে সরকার গঠিত টাস্কফোর্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সাইবার হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৬৭৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
কিন্তু এখন পর্যন্ত রিজার্ভ চুরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি।
অন্যদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্তপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার কথাও বলা হয়েছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন ৮০ বার পেছানো হয়। তবে সম্প্রতি সিআইডির তৎপরতা বেড়েছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ ১৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংস্থাটি।
বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ১৪ জনের মধ্যে চারজন ছাড়া অন্যদের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে।
তারা হলেন-বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ও ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক পরিচালক আনিসউদ্দিন আহমেদ খান ওরফে আনিস এ খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার দিপঙ্কর কুমার চৌধুরী, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক এসএম রেজাউল করিম, সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা, মামলার বাদী জুবায়ের বিন হুদা, সাবেক উপপরিচালক (সুইফট অপারেটর) জিএম আব্দুল্লাহ সালেহীন, সহকারী পরিচালক শেখ রিয়াজ উদ্দিন, কর্মকর্তা একলাস উদ্দিন ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগেই দেশ ছেড়ে গেছেন আতিউর রহমান।
মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ১০১ মিলিয়ন ডলার লুটের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
তার নির্দেশনায় রিজার্ভ থেকে ওই অর্থ সরানোর পর এ-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ও তথ্য মুছে ফেলার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়।
রিজার্ভ লুটের স্পর্শকাতর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জেনে গেলে বোর্ডরুমে সবাইকে ডেকে সভা করে তাদের মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ড. আতিউর।
রিজার্ভ থেকে অন্তত ২ বিলিয়ন ডলার লুট করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুইফটের সঙ্গে হঠাৎ করেই আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) কানেকশন স্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহার মধ্যস্থতায় হ্যাকিংয়ের প্রথম অধ্যায়ে আরটিজিএস প্রকল্প আনা হয়।
হ্যাকারদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সুইফটের এক্সেস। পরিকল্পনামতো আরটিজিএস সংযোগ স্থাপনের জন্য ভারতীয় নাগরিক নীলা ভান্নানকে ভাড়া করে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়ে আসেন আতিউর।
আরটিজিএস স্থাপনের পর নীলা ভান্নান বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টারনেটের সঙ্গে সুইফটের সংযোগ স্থাপন করে দেন। এরপর ধাপে ধাপে শুরু হয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর্ব।
হ্যাকিংয়ের ঘটনার পরপর আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সার্ভার রুমে এসে কর্মকর্তাদের শাসিয়ে বলেন, ‘যদি তোমরা কেউ বলো যে হ্যাক হয়েছে, তোমাদের কারও চাকরি থাকবে না।
সবাইকে বরখাস্ত করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এবিডি শাখার (অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড বাজেটিং) কর্মকর্তা বদরুল হককে হুমকি দিয়ে আতিউর বলেন, এই ঘটনা চেপে যেতে হবে। তিনি চাকরি রক্ষায় চুপ হয়ে যান। তিনি হ্যাকিং ঘটনার পরবর্তী পর্বে আতিউরের অপরাধনামার একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী।
আরেকজন সাক্ষী হলেন- তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম। তিনি সুইফটের মাধ্যমে আরটিজিএস সংযোগ প্রদানের বিরোধিতা করেছিলেন।
যে কারণে আরটিজিএসের ফাইল তার মাধ্যমে কানেকটিভিটিসংক্রান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা থাকলেও গভর্নর আতিউর ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সেই ফাইলে নিজেই সই করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।
আলামত ধ্বংস ও অপরাধ ধামাচাপা দিতে দায়িত্ব পান ভারতীয় এক নাগরিক হ্যাকিংয়ের পর এ-সংক্রান্ত আলামত ধ্বংস ও অপরাধ ধামাচাপা দিতে রাকেশ আস্তানা নামে ভারতীয় আরেক নাগরিককে ক্রাইম সিনের (সার্ভার কক্ষ) এক্সেস হাতে তুলে দেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রাকেশ আস্তানাকে দিয়ে ৩৯ দিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে প্রকারান্তরে সব আলামত ডিলেট করান আতিউর।
নিয়ম হচ্ছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি কাউকে এ ধরনের (মুছে ফেলা তথ্য পুনরুদ্ধার) কাজ দিতে চায় তাহলে টেন্ডার করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।
তথ্য গোপনের অসৎ উদ্দেশ্যে এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ঘটনার পর মামলা কিংবা জিডি করতে দেননি আতিউর।
জরুরি ভিত্তিতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা নেওয়া হয়নি বা তাদের অবহিত করা হয়নি।
এমনকি সাবেক অর্থমন্ত্রীকেও কিছু জানাননি। এ অবস্থায় ‘আন-অথরাইজড’ ব্যক্তিকে সার্ভারের কর্তৃত্ব হাতে তুলে দেন আতাউর। যা বড় ধরনের অপরাধ।
গভর্নর ও তার ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের সহায়তায় হ্যাকিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করে বেরিয়ে যান রাকেশ আস্তানা।
আরও জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের পর তা চাপা দেওয়াসহ পুরো বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করতে হুকুম জারি করেন আতিউর। অপরাধে জড়িতদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন তিনি।
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লুটের পর তিনি ঘটনাটি আড়াল করতে কোনো দপ্তর যেমন: গোয়েন্দা সংস্থা, আইসিটি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের বিষয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানেরও সহায়তা নেননি।
ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের বিষয়টি সামনে আসে।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে টাকাটা চলে গেছে সেটা আসলে ডাকাতি হয়েছে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিকিউরিটি সিস্টেমকে হ্যাক করে টাকাটা পাচার করা হয়েছে।
পাচার হওয়ার প্রথম দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে লুকিয়ে রেখেছিল। প্রাথমিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই ওই সুযোগটা আমরা হারিয়েছি। সে কারণে এখন প্রক্রিয়াটা আরও দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকাটা চুরি হয়, তখনকার গভর্নর ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এর দায় এড়াতে পারেন না। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি।’
গত ১১ জানুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের ৮০ শতাংশ ফেরত আনা হয়েছে।
কিন্তু কোন দেশ থেকে ফেরত এসেছে বা তার পরিমাণই বা কত সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, মামলা চলমান থাকায় এখন আমরা এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে পারছি না।
আপনার মতামত লিখুন :