ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

দুই শর্তে আটকাতে পারে আইএমএফের চতুর্থ কিস্তি

হাসান আরিফ
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৭:০২ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়া। যদি বাংলাদেশ ব্যাংক আর এনবিআর তাদের সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন করতে না পারে তাহলে চতুর্থ কিস্তি আটকে যেতে পারে। যা পঞ্চম কিস্তির সঙ্গে মূল্যায়ন করে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড় করা হতে পারে। তবে সংস্কার বাস্তবায়ন হলে আগামী মার্চ মাসেই চতুর্থ কিস্তি ছাড় করবে আইএমএফ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

সূত্র জানায়, আইএমএফের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে, এনবিআর সংস্কার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলারের দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এই শর্ত পূরণ করলেই আগামী মার্চ মাসে ঋণ কর্মসূচির আওতায় আগের তিনটি কিস্তির পর চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ বাংলাদেশের জন্য ছাড় করা হবে। 

নয়তো সংস্কারের জন্য জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ। তবে অর্থ বিভাগের সূত্র রূপালী বাংলাদেশকে বলেছেন, সরকার চেষ্টা করছে শর্ত পূরণ করতে না পারলেও যাতে ঋণের কিস্তি পাওয়া যায়। এই বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চলমান। 

নিয়মানুযায়ী, কিস্তি পাওয়ার আগে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের অনুমোদনের দরকার পড়ে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির যে পর্ষদ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পিছিয়েছে। বৈঠকটি হবে আগামী ১২ মার্চ। ফলে মার্চের আগে বাংলাদেশ চতুর্থ কিস্তির বিষয়ে কোনো আলোচনাই হবে না। আর সময়মতো বৈঠক হলে কিস্তি না পাওয়ার আশংকাই ছিল বেশি।

আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। এবারও ভয়াবহ তুষারপাত হয়েছে। এ জন্য মার্কিন প্রশাসনকে সতর্কবার্তাও জারি করতে হয়েছে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান প্রায় এক মাস বন্ধ ছিল।

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলোও বলছে, আইএমএফ ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি পেতে ১২টি শর্তের সবই পূরণের পথে থাকলেও এনবিআর আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্কারে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে সাত কিস্তিতে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান। এর দুই দিন পরই ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে আসে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে ছাড় হয় ১১৫ কোটি ডলার। 

তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিশ্রুত ঋণের মধ্য আর বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। এ দফায়, অর্থাৎ চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। বাকিগুলো পাওয়া যাবে আরও তিন কিস্তিতে। 

বাংলাদেশ অবশ্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির সঙ্গে একটি আলাদা প্যাকেজে সংস্থাটি থেকে আরও ৭৫ কোটি ডলার বাড়তি চেয়েছে। এর বিপরীতে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, বাংলাদেশ সেগুলোও পূরণের পথে রয়েছে বলে জানা গেছে।

 আইএমএফের শর্তাবলি পর্যালোচনা করতে আইএমএফ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাদাকিসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত ৩ থেকে ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফর করে। এই সফরে আইএমএফ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। আইএমএফের শর্তগুলোর মধ্যে আছে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ, বাজেট ঘাটতি, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য, রিজার্ভ মানি, কর রাজস্ব, অগ্রাধিকার সামাজিক ব্যয় এবং সরকারের মূলধন বিনিয়োগ।