রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ০১:৫৮ এএম

মাউশিতে প্রাইজ পোস্টিং অনৈতিক কাজের শাস্তি

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ০১:৫৮ এএম

মাউশিতে প্রাইজ পোস্টিং অনৈতিক কাজের শাস্তি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চাকরি আর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অন্তত হাফ ডজন নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করেছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা এম এম মোসলেম উদ্দিন। পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার থাকাকালে এসব অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ওএসডিও করা হয়েছিল। প্রায় ছয় মাস ওএসডি থাকার পর তাকে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করা হয়।

সেখান থেকে প্রাইজ পোস্টিং দিয়ে এবার তাকে করা হয়েছে মাউশির সহকারী পরিচালক। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষা ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগী নারীরা।

তারা বলছেন, তার লালসার শিকার হওয়া অন্তত ছয়জন নারী মাউশিতে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে বিশেষ ক্ষমতার জোরে রক্ষা পেয়ে যান। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও অভিযোগের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে প্রাইজ পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

পাবনা, নওগাঁ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার থাকাকালে রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, পোড়শাসহ বিভিন্ন ঠিকানার পাঁচজন নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক থাকার প্রমাণ এসেছে রূপালী বাংলাদেশের কাছে। মোসলেম উদ্দিনের ভদ্রবেশী মুখোশের আড়ালে তারা প্রতারিত হয়েছে জানিয়ে তার শাস্তির দাবিতে ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মাউশির মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছিলেন তারা।

তথ্যমতে, মোসলেম উদ্দিনের এসব নারীকে খপ্পরে ফেলার মূল হাতিয়ার ছিল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ। এ জন্য টার্গেট ছিল সদ্য গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করা নারী এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত গৃহবধূ।

ফেসবুকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে চাকরি এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। তার এসব অপকর্মের চ্যাট, ছবি এবং অসংখ্য ভিডিও এসেছে এই প্রতিবেদকে হাতে। অসঙ্গতিপূর্ণ ছবি-ভিডিও পাঠিয়ে উত্ত্যক্তও করেছেন অনেক নারীকে।

এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফেসবুকে বন্ধুত্বের পর সম্পর্ক গভীর হলে এসএম মোসলেম উদ্দিন এসব বান্ধবীকে নিজ কার্যালয়ের খাস কামরা অথবা গেস্ট রুমে আসার কথা বলতেন। আর সেখানেই গড়ে তুলেছিলেন বিশেষ কক্ষ। তবে বিশেষ কক্ষে আবদ্ধ না থেকে সময় সুযোগ করে আবাসিক হোটেলে নিয়েও সময় কাটাতেন তিনি। এরপর তার উদ্দেশ্য জেনে গেলে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও এবং চ্যাট ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূদের নিজের খাঁচায় বন্দি রাখতেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওগাঁ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পরিচয়ে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে চাকরি দিবে বলে ‘ই’ অদ্যাক্ষরের নাটোরের এক গৃহবধূর সঙ্গে পরিচয় হয় মোসলেম উদ্দিনের। এই গৃহবধূ তখন সদ্য এমএ সম্পন্ন করেছেন। পরিচয় গভীর হলে তাকে চাকরি দেওয়া ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান মোসলেম।  

শুধু ‘ই’ অদ্যাক্ষরের ওই নারী নন, পাবনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার থাকা সময়ে রাজশাহীর লক্ষ্মীপুরের ‘ক’ অদ্যাক্ষরের নারী ও পাবনার পোড়শা উপজেলার ‘না’ অদ্যাক্ষরের এক নারী, নওগাঁ সদরের ‘র’ এবং ‘ল’ অদ্যাক্ষরের নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান তিনি।

এসব নারীরা বিভিন্ন সময়ে মাউশিতে লিখিত অভিযোগ দেন। মাউশিতে অভিযোগ দিলেও উল্টো কপাল খুলে মোসলেমের। এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতে কখনো হয়েছেন নামকাওয়াস্তে ওএসডি আবার কখনো বদলি বা স্ট্যান্ড রিলিজ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের প্রথমে এক নারী লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর ওই বছরের আগস্টের ১৬ তারিখ পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ এবং একই কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামাল হোসেনকে নিয়ে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় মাউশি।

ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হলে ২০২২ সালের ২৫ জুলাই স্ট্যান্ড রিলিজ করে তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে বদলি করা হয়। তবে এর কিছুদিন পর ৩ নভেম্বর খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করা হয় মোসলেমকে।

২০২৩ সালের জানুয়ারির ১৮ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর অভিযোগ জানালেও কোনো ফল হয়নি। উল্টো এ বছরের জানুয়ারির ১৪ তারিখে প্রমোশন নিয়ে তিনি ঢাকা শিক্ষা ভবনের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন।

এসব বিষয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন নারীর সঙ্গে আলাপ হলে তারা জানান, ভদ্রবেশী এই লোকের টেপে পড়ে আমরা প্রতারিত হয়েছি। তার শাস্তির জন্য আমরা মাউশিতে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু তারা বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রমোশন দেওয়া হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম মোসলেম উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা। ষড়যন্ত্র করে আমাকে হেয় করার জন্য এসব কথা হচ্ছে।

বিষয়টি জানতে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক উইং) অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেলের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আরবি/জেডআর

Link copied!