এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) জলবায়ু স্থিতিস্থাপক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রকল্প এবং পানির স্থিতিস্থাপকতা ও জলবায়ু-স্মার্ট নগর পরিষেবা সরবরাহ প্রকল্পের জন্য চলতি অর্থবছরেই বাংলাদেশকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা দিবে।
এআইআইবি এই প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে সহ-অর্থায়ন করছে। এডিবিও এই প্রকল্পের জন্য সমপরিমাণ অর্থায়নে রয়েছে।
এডিবি বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যেখানে বার্ষিক গড় ক্ষতি প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।
এডিবির এই ঋণ হলো ৭০০ মিলিয়ন ডলার জলবায়ু স্থিতিস্থাপক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রথম সাবপ্রোগ্রাম।
জানা গেছে, অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নীতিগত সংলাপ পরিচালনা এবং কর্মসূচির জন্য একটি নীতিগত ম্যাট্রিক্স তৈরিতে এআইআইবিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যা নগর ও পানি খাতে জলবায়ু অভিযোজনের ওপর প্রাসঙ্গিক কর্মসূচি এবং নীতিগত রূপগুলোকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
কর্মসূচি (উপ-কর্মসূচি-১) তাৎক্ষণিক নীতিগত পদক্ষেপ এবং উপ-কর্মসূচি-২ এর অধীনে নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ওপর দৃষ্টি দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, এআইআইবির সঙ্গে প্রকল্প বিষয়ে আলোচনায় প্রকল্প সহায়তা এবং ব্যাংককের মূল্যায়নের পর, বাংলাদেশে প্রথম সর্ব-অর্থায়িত শহুরে খাতের কার্যক্রম হিসাবে অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পের ডিপিপি নিয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করা হয়েছে তবে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর এখনো হয়নি। স্বাক্ষরের আগে ইআরডি ঋণের সুদের হার কমানোর সম্ভাব্য উপায়গুলো খতিয়ে দেখছে।
এ জন্য অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে ছাড়কৃত অর্থায়নের সঙ্গে ঋণ সমন্বয় করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এআইআইবি সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে আশ্বস দিয়েছে। আলোচনায় সম্ভাব্য কম সুদের হারসহ অন্যান্য মুদ্রায় ঋণ পরিশোধের বিকল্প নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
তবে আরও আলোচনার জন্য আরেকটি বৈঠকের প্রয়োজন হবে বলে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।
এডিবি জানায়, এই ঋণ বাংলাদেশকে তার জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালী করতে, কম কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে, এর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে এবং সরকারের জলবায়ু কর্মে মূলধারার লিঙ্গ সমতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করবে।
জলবায়ুর প্রভাব বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। জলবায়ু কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে অর্থায়ন প্রয়োজন।
বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এডিবি এই অঞ্চলের জলবায়ু ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশকে তার প্রচেষ্টায় সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
জানা গেছে, এই কর্মসূচি জলবায়ু অর্থায়নকে একীভূত করার জন্য একটি সক্ষম প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত পরিবেশ তৈরি করবে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এজেন্ডায় জলবায়ু কর্মকাণ্ডকে অগ্রাধিকার দেবে এবং কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবহন ও অবকাঠামো, নগর উন্নয়ন এবং জ্বালানিসহ জলবায়ু-সমালোচনামূলক খাতে সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা করবে।
এ ছাড়া সম্প্রতি কপ২৮-এ উদ্বোধন হওয়া ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ও উন্নয়ন অংশীদারিত্ব’ কার্যকর করতে এই কর্মসূচি সরকারকে নিবিড়ভাবে সহায়তা করবে।
এটি সরকারি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সম্পদ বরাদ্দকরণের ক্ষেত্রে জলবায়ু অগ্রাধিকারকে মূলধারায় আনা এবং সবুজ বন্ড ও টেকসই আর্থিক নীতির মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়নের গতিশীলতা সমর্থন করে।
সেক্টরাল পর্যায়ে প্রোগ্রামটি স্মার্ট জলবায়ু এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক কৃষি চর্চাকে উৎসাহিত করে। বিশেষ করে যেগুলো নারী কৃষকদের পক্ষে সৌর সেচ পাম্পগুলোর অভিযোজন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো নকশা ও পরিকল্পনা প্রবর্তন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের অভিযোজনের জন্য নিয়ন্ত্রক কাঠামো ও গণপরিবহন বহরে বৈদ্যুতিক বাসের প্রবর্তন করে।
এ ছাড়াও, বন্যা কমাতে নগর পৌরসভার জন্য জলবায়ু সহনশীল শহরের কর্ম পরিকল্পনা এবং উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রচারে সহায়তা করে এডিবি।
২০২১ সালের অক্টোবরে এডিবি ঘোষণা করেছে, এটি ২০১৯ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত তার উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোতে জলবায়ু অর্থায়ন ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দেওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা বাড়িয়েছে।
এটি নতুন জলবায়ুভিত্তিক প্রযুক্তির অভিগম্যতাকে প্রসারিত করবে এবং জলবায়ু অর্থায়নের দিকে ব্যক্তিগত পুঁজিকে সঞ্চয় করবে।