রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫, ০১:৫৬ এএম

ভাড়া ভবনে চলছে ১৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫, ০১:৫৬ এএম

ভাড়া ভবনে চলছে ১৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

একুশ শতকের বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার দিকে জোর দিতে ২০১৬ সালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর এলাকায় বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি আইন পাশ করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। 

তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় করেছে।

২০১৯ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। ভাড়া করা ক্যাম্পাসে গাদাগাদি করে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

অবকাঠামো নির্মাণের জন্য দফায় দফায় ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিডি) জমা দিলেও নানা অসংগতির কারণে ফেরত পাঠিয়েছে সরকার।

সর্বশেষ ১০ হাজার কোটির বিশ্ববিদ্যালয় স্থলে ৮৩৯ কোটির ডিপিপি ইউজিসিতে জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আতাউর রহমান খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ডিপিপি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে পাশ হলে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

একই অবস্থা সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এবং পরবর্তী বছরে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টির এখন পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ দূরে থাক, জমি অধিগ্রহণও হয়নি।

স্থানীয় শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মওলানা সাইফ উদ্দীন এহিয়া ডিগ্রি কলেজ ও সীমান্ত কমিউনিটি পার্টি সেন্টারে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম।

কলেজগুলো থেকে নেওয়া কয়েকটি রুমে কোনো রকমে চলছে পাঁচটি বিভাগের ছয়-সাত ব্যাচের ক্লাস, যেখানে নিত্যদিনই থাকে শ্রেণিকক্ষের সংকট।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রোভিসি অধ্যাপক ড. সুমন কান্তি বড়ুয়া রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘অবকাঠামো তৈরির জন্য ডিপিপি চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অর্থ ছাড় পেলেই স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের পক্রিয়া শুরু হবে।

২০২০ সালে যাত্রা শুরু করা হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও একই পথে। বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরুর পাঁচ বছরে পা দিলেও এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া দূরে থাক, ক্যাম্পাসের জন্য জমি অধিগ্রহণ করাও সম্ভব হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আবদুল বাসেত বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে মনোযোগ না দিয়ে ব্যস্ত ছিলেন লুটপাট আর নিয়োগ বাণিজ্যে।

তবে বর্তমানে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন বর্তমান ভিসি অধ্যাপক সৈয়দ ড. সায়েম উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের স্থান চূড়ান্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অংশীজনদের নিয়ে একটি সভা করেছি। সভায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

শিগগির সিন্ডিকেট মিটিংয়ে জায়গার স্থান চূড়ান্ত হবে। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্তমানে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫। এর বাইরেও আইন পাশ করা হয়েছে আরও আট বিশ্ববিদ্যালয়ের।

শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬টির। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই স্থায়ী ক্যাম্পাস। 

এর মধ্যে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণও হয়নি। যেগুলোর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি।

স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের এই ধীরগতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিশ্চিত হচ্ছে না মানসম্মত শিক্ষা। আবাসনসহ শ্রেণিকক্ষ, গবেষণাগার, লাইব্রেরিসহ অনেক সুযোগ-সুবিধার সংকটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

ইউসিজি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও মেরিটাইম-বিষয়ক উচ্চতর পড়াশোনার জন্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম ‘বিশেষায়িত’ বিশ্ববিদ্যালয় মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, অ্যাভিয়েশন-সংক্রান্ত বাংলাদেশের একমাত্র ‘বিশেষায়িত’ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই ক্যাম্পাস।

এর বাইরে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব জমিতে সীমিত পরিসরে ছোট ভবন নির্মাণ করে আপাতত চালাচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

তবে তা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিভিন্ন ব্যক্তির নামে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছিল।

পরে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম পরিবর্তন করে।

ইউজিসি সূত্র জানায়, নতুন প্রতিষ্ঠিত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি ও অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য উচ্চাভিলাষী দফায় ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছিল।

কিন্তু অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানোর কারণে তা আটকে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

পরে তা আবার সংশোধন করে যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত উচ্চভিলাষী ডিপিপি পাঠানোর কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নকাজ আটকে আছে।

আমরা এখন যাচাই-বাচাই করে প্রকল্প পাশ করছি। যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু বরাদ্দ চেয়ে প্রকল্প পাঠালে তা দ্রুত অনুমোদন হবে।

আরও ৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত: এই ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলাসহ এর আগে আরও আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাশ হয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় ও মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ শেষে একাডেমি কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে কাজ চলছে।

বাকি বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাশ হলেও ভিসি নিয়োগ হয়নি।

এই ৮ বিশ্ববিদ্যালয়েরই পরবর্তী কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

তবে এই আট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিএনপি সরকারের আমলে আইন পাশ হওয়া বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগসহ একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে ইউজিসিসহ সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইউজিসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানকে দেওয়া এক চিঠিতে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ‘নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে’ ওই নির্দেশনা দেন।

তাতে তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দিশের বিভিন্ন জেলায় অনেকগুলো নতুন বিশ্ববিদ্যালয় (সাধারণ ও বিশেষায়িত) স্থাপন করা হয়েছিল।

এসব বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দাঁড়াতে পারবে কি না, তা পরিষ্কার নয়। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি, সেগুলো নিয়ে পরবর্তী সময়ে যেকোনো পদক্ষেপ স্থগিত রাখাই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি।

এ ছাড়া যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, সেগুলোতেও নতুন শিক্ষক বা কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি জরুরি প্রয়োজন না হলে এখন স্থগিত রাখাই ভালো।

এসব বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নীতিগতভাবে পরবর্তী সরকারের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার রেখে যাওয়া সমীচীন মনে করে।’ 

সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল হালিম বলেন, শিক্ষা কাগজে-কলমে হলে তো সমস্যা।

স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ছাড়া একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষাদান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

তাই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো ক্যাম্পাসসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি হয়নি, সেসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সরকার ও ইউজিসিকে অবকাঠামোর জন্য চাপ দিতে হবে। আলোচনা করে সব সুযোগ-সুবিধা নিতে হবে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম ফায়েজ বলেন, ‘কার্যক্রম চলমান রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুষ্ঠুভাবে চলার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা আমরা পূরণ করব।

আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালোভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করুক।

তবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাশ হয়েছে কিন্তু শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান শুরু হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে আপাতত আমাদের কোনো কিন্তু নেই। এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমরা আরও চিন্তাভাবনা করব।’

আরবি/জেডআর

Link copied!