বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫

গতি বাড়লেই অটো মামলা

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৮:০৮ এএম

গতি বাড়লেই অটো মামলা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আওতায় আসছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।

মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে গতিসীমা লঙ্ঘন করলেই হয়ে যাবে অটো মামলা। আর এ মামলার তথ্য দ্রুতই চলে যাবে যানবাহনের মালিকের ঠিকানা ও মোবাইল ফোনে।

এই প্রযুক্তি মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও দুর্ঘটনা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

পাশাপাশি মহাসড়কে নছিমন-করিমনসহ তিন চাকার বিভিন্ন যান চলাচলও বন্ধ হবে।

এ জন্য ২৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে স্থাপন করা হচ্ছে ১ হাজার ৪২৭টি সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা।

এই ক্যামেরায় এক মাস পর্যন্ত ফুটেজ সংরক্ষণ থাকবে। হাইওয়ে পুলিশের তত্ত্বাবধানে বৃহত্তর একটি ডাটা সেন্টার, ৫টি কন্ট্রোলরুম ও ১৬টি চেকপোস্টের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রিত হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে সংযুক্তি হলেই এআই প্রযুক্তির সুফল পেতে শুরু করবে জনগণ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমান ৯৬টি জাতীয় মহাসড়কের পরিধি ৩ হাজার ৯৯৪ কিলোমিটার ও ১২৬টি আঞ্চলিক মহাসড়কের পরিধি ৪ হাজার ৮৮৩ কিলোমিটার।

এ ছাড়া জেলা সড়ক রয়েছে ১৩ হাজার ৫৯২ কিলোমিটার। এর মধ্যে সবচেয়ে থেকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে জাতীয় মহাসড়কে।

কারণ হিসেবে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এ সড়কে অবাধে নছিমন-করিমনসহ তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল, বেপরোয়া গতি ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ বিচরণ।

এ কারণে দেশের মহাসড়কে নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

পাইলট প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সেন্সরযুক্ত সিসিটিভি বসানো হচ্ছে।

সড়কে যেসব যানবাহন আইন অমান্য করবে, সহজেই তারা আইনের আওতায় আসবে। মহাসড়কে কর্মরত হাইওয়ে পুলিশ সদস্যদের কর্মকাণ্ডও মনিটরিং করা যাবে।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, এআই প্রযুক্তিতে অটোমেটিক নম্বর প্লেট শনাক্তকরণ, যানবাহনের গতিপথ নির্ধারণ, হাইস্পিড ডিটেকশন ও ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী যান দ্রুত শনাক্ত করা যাবে।

শক্তিশালী ক্যামেরায় অন্ধকার ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায়ও রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনের নম্বর প্লেটের স্পষ্ট ছবি ধারণ ও সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকবে।

যানজটসহ কোথাও কোনো ঝামেলা বা অপরাধের কারণে লোকসমাগম বেশি হলে মনিটরিং সেলে আগাম সংকেত চলে আসবে।

আইন অমান্য করার পর পুলিশ না ধরলেও সমস্যা নেই। মামলার তথ্য চলে যাবে যানবাহনের মালিকের ঠিকানা ও মোবাইল ফোনে।

মহাসড়কে কোনো যানবাহন অপরাধ করে পার পাবে না। উন্নত বিভিন্ন দেশে এভাবেই যানবাহনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়াতে ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, দাউদকান্দি ও চট্টগ্রামে জোন করা হয়েছে।

২৫০ কিলোমিটারজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। ১ হাজার ৪২৭টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে ১ হাজার ২০০-এর অধিক ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

বাকিগুলো চলতি বছরের জুনের মধ্যে বসানো শেষ হবে। এসবের মধ্যে লং ভিশন ক্যামেরা ১৬টি, ৪ এমপি পিটিজেড ডোম ক্যামেরা ৪৭১টি, বুলেট ক্যামেরা ৯২৪টি ও চেক পয়েন্ট ক্যামেরা ১৬টি।

বিদ্যুৎ চলে গেলে ব্যাকআপ পাওয়ার সিস্টেমসহ ৪৯০টি স্থানে ভিডিও সাইটপোল থাকবে।

নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাটে অবস্থিত ৫.৩০ টেটাবাইটসম্পন্ন একটি সেন্ট্রাল কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, ৫টি মনিটরিং সেন্টার, ৫ পেটাবাইটের ডেটা সেন্টার, ডেটা সেন্টারের মডিউলার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক সিস্টেম, ভিডিও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ভিপিও অ্যানালিসিস সিস্টেম ও অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনিশন সিস্টেম রয়েছে।

এ ছাড়া হাইওয়েতে সার্বক্ষণিক নজরদারি বৃদ্ধি করে নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে।

বহির্বিশ্বে রপ্তানিকৃত পণ্যবাহী যানবাহন থেকে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকার মালামাল চুরি বা ছিনতাই রোধ করতে সহায়তা করবে।

ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, যানবাহনের গতিপথ শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন, ট্রাফিক ফ্রো বিশ্লেষণ করা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী যানবাহন শনাক্ত, সন্দেহজনক অনুপ্রবেশ শনাক্ত, গুরুত্বপূর্ণ বস্তু শনাক্ত করার লক্ষ্যে সারা দিনের ভিডিও সারাংশ তৈরি করে সংক্ষিপ্ত আকারে দেখা, ভিডিও অনুসন্ধান করা, অপরাধ বিশ্লেষণ ও অপরাধীকে শনাক্ত, হাইওয়ের রিয়েল-টাইম মনিটরিং ও অপরাধী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা বস্তুর আচরণ বিশ্লেষণ এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট তথ্য মোতাবেক মহাসড়কে ট্রাফিক ও অপরাধ সংক্রান্তে ঘটমান যেকোনো তথ্য দ্রুততার সঙ্গে পাওয়া যাবে।

হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) মো. বরকতুল্লাহ খান জানান, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেকোনো যানবাহন সার্চ করে বের করা যাবে। এই প্রযুক্তিতে নম্বর প্লেট, গাড়ির রং বা গাড়ির যেকোনো চিহ্ন দিয়েও যানবাহন শনাক্ত করা যাবে।

 অবৈধ পার্কিং, এলোমেলো লেন পরিবর্তন, তিনজন আরোহণ বা হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেলও শনাক্ত এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে ইতিমধ্যে ডাকাতির কাছে ব্যবহৃত ১১টি গাড়ি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ২টি গাড়ি, চুরিতে ব্যবহৃত ৭টি গাড়ি, দস্যুতায় ব্যবহৃত ২টি গাড়ি, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ৩টি গাড়ি এবং সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত ১৮টি গাড়ি শনাক্ত করা হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা জানান, বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবারে সংযুক্ত এআই প্রযুক্তির ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ২৪ ঘণ্টা হাইওয়ে পুলিশের নজরদারিতে থাকবে এবং যানবাহনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

চলতি বছরের জুনের মধ্যে এডিপির অর্থায়নে নির্মিত এই প্রজেক্টের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হবে। এই মহাসড়কে ৬৬২টি ফেডার রোড রয়েছে।

এসব রোড দিয়ে যানবাহন হাইওয়েতে উঠে পড়ে এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়। প্রতিটি দুর্ঘটনা একটি পরিবার অকল্পনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সার্ভিস রোড থাকলে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। বিআরটিএর সংযোগ পেলেই ডিজিটাল অটোফাইন সিস্টেম চালু হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!