জাতীয় ডিজিটাল রূপান্তর কৌশল

ডেটা সুরক্ষায় স্বাধীন কর্তৃপক্ষের সুপারিশ

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৮:১৭ এএম

ডেটা সুরক্ষায় স্বাধীন কর্তৃপক্ষের সুপারিশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বিশ্বজুড়ে বিকশিত হতে যাওয়া নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের সক্ষমতা তৈরিতে এক ক্রান্তিকালীন মুহূর্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। 

ব্লকচেইন, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামোর (ডিপিআই) মতো উদীয়মান প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে তাই ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্ট্র্যাটেজি’ বা জাতীয় ডিজিটাল রূপান্তর কৌশল’ নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার।

সম্প্রতি এই কৌশলের একটি খসড়া প্রকাশ করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। ১০টি লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এই কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

এর মধ্যে অন্যতম হলো এআই এবং ডেটা তথ্যউপাত্তের সুরক্ষায় সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক সুরক্ষায় বেষ্টিত কর্তৃপক্ষ গঠন।

জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপি, জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের প্রস্তাবনায় জাতীয় ডিজিটাল রূপান্তর কৌশলের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানা যায়।

আইসিটি বিভাগের পলিসি অ্যাডভাইজর (সমন্বয় এবং সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব খসড়াটি সম্পাদন করেন বলে জানান।

খসড়ার ওপর বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে আগামী দুই মাস। দেশ ও বিদেশের শিক্ষক, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধি, পেশাজীবী এবং বিশেষজ্ঞদের থেকে মতামত গ্রহণের পর কৌশলটি চূড়ান্ত করা হবে।

ইউনেস্কো ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট মেথডোলজি (এআই আরএএম)’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। পাশাপাশি ই-গভর্ন্যান্সের বিষয়ে এস্তোনিয়ার ই-গভর্ন্যান্স টিমও একটি ‘রেডিনেস রিপোর্ট’ জমা দেবে।

সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, আগামী মে মাসের মধ্যে এসব প্রতিবেদন জমা হলেই চূড়ান্ত করা যাবে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্ট্র্যাটেজি।

খসড়ার বাকি ৯টি প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে ইন্টার-অপারেবল ডিজিটাল অবকাঠামো গঠন, সাইবার নিরাপত্তা ও ডেটা গভর্ন্যান্স তথ্যউপাত্ত ব্যবস্থাপনা, কার্যকর সেবা প্রদানে আইসিটি বিভাগের সংস্কার, নাগরিক ও ব্যবসার জন্য ডিজিটাল সেবার পরিধি বাড়ানো, ডিজিটাল অর্থনীতি ও সৃজনশীল ইকো সিস্টেম গড়ে তোলা, ২০৩০ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে দক্ষ কর্মসংস্থান ৮০ লাখে উন্নীতকরণ, ২০২৭ সালের মধ্যে ২০ হাজার ও ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ হাজার সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান, এআই এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে তৈরি পোশাক খাতের কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রভাব ও হস্তক্ষেপমুক্ত একটি ডেটা ও এআই কর্তৃপক্ষ গঠন, যা সর্বোচ্চ আদালতের অধীনে থেকে কাজ করবে।

এগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের অধীন ডেটা ও এআইবিষয়ক স্বাধীন কর্তৃপক্ষের গঠন। এ বিষয়ে খসড়া কৌশলের সম্পাদক ও আইসিটি বিভাগের পলিসি অ্যাডভাইজর (সমন্বয় এবং সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতো কিছু ব্যক্তিদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ ছিল।

যেমন- এটুআই এর বিভিন্ন কাজ ৫৮টা মন্ত্রণালয়ের সবাই গ্রহণ করেনি। এমনকি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগও এসবের সমালোচনা করেছে।

তাই এআই এবং ডেটা নিয়ে কাজ করা কর্তৃপক্ষ কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলে জাতীয় রূপ পাবে না।

ভারতে, শ্রীলঙ্কায়, সৌদি আরবে ডেটা এবং এআই নিয়ে আলাদা সংস্থা আছে। আমরাও সে রকম কিছু করতে চাই। ডেটার নিয়ন্ত্রণে কোনো কর্তৃপক্ষ থাকলে সেখানে অপব্যবহারের সুযোগ থাকে। তাই এটিকে সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবকত্বে রাখতে চাচ্ছি, একটা সাংবিধানিক সুরক্ষা দিতে চাচ্ছি।

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যাপক দুর্নীতির বিপরীতে প্রস্তাবিত ডিজিটাল রূপান্তরের প্রশিক্ষণে ভিন্নতা কী থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, আগে প্রশিক্ষণ, অর্থ লোপাটের জন্য হয়েছে; এবার স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে আগাব।

সাইবার সিকিউরিটি এবং ডিজিটাল ইকোনমিতে প্রশিক্ষিত গ্র্যাজুয়েট দরকার। আমরা সেই পর্যায়ের ডিগ্রির কথা বলছি। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কনসেপ্ট পেপার দিয়েছি।

তারা কীভাবে প্রশিক্ষণ দেবে জানতে চেয়েছি। জাপানের সঙ্গেও আলোচনা করছি। আইসিটি বিভাগের নিজস্ব কিছু হবে না।

বিদেশি অংশীদাররা থাকবে। বৈশ্বিক অংশীদাররাই কিন্তু প্রযুক্তি তৈরি করছে। তাই তাদের সঙ্গে প্রযুক্তিগত বিনিময়ে আসতে হবে।

ডিজিটাল রূপান্তরের এই কৌশলকে সাধুবাদ জানিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের সাবেক সভাপতি ও টেকসই অর্থনীতির ভিত তৈরিতে গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য ফাহিম মাশরুর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ডেটা অথরিটি থাকা জরুরি কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট নিতে চাবে কি না সেটা ভিন্ন বিষয়।

বিটিআরসি যেমন কমিশন তেমন একটা ভিন্ন কর্তৃপক্ষ থাকতে পারে এ বিষয়ে। ডিজিটাল রূপান্তরের এই কৌশলকে সাধুবাদ জানাই। আবার প্রশিক্ষণের বিষয়ে সরকারকে কেন জড়িত হতে হবে সেটা একটা প্রশ্ন।

সরকার এমন একটা ইকো সিস্টেম তৈরি করবে যেন প্রাইভেট খাত দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রশিক্ষণসহ নানা সুবিধা নিয়ে এগিয়ে আসবে।

সরকার সেই বিষয়ের প্রশিক্ষণে এগিয়ে আসবে যে বিষয়ে প্রাইভেট খাত মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করছে না বা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে না।

বিষয়টি যেহেতু খসড়া এবং মতামত নেওয়া হচ্ছে, সেখানে এটি বিবেচনা করা যেতে পারে।

আরবি/জেডআর

Link copied!