ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

রেস অ্যাসেটের এমডি হাসান ধরাছোঁয়ার বাইরে

কায়েস আহমেদ সেলিম
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৮:৩৫ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

উন্নত বিশ্বে বিনিয়োগের জনপ্রিয় মাধ্যম ‘মিউচুয়াল ফান্ড’। কিন্তু বাংলাদেশে সেই চিত্র যেন পুরোপুরি বিপরীত। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাত বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। সুশাসন ও স্বচ্ছতার ঘাটতি থাকায় খাতটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। 

অথচ সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি তাদের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে ভালো মুনাফা দেওয়ার কথা। কিন্তু সেই সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কর্তাব্যক্তিই যখন বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতিয়ে নিতে নানা ধরনের ফন্দি আঁটে, তখন বিনিয়োগ শিক্ষাহীন বিনিয়োগকারীদের ভরসা কোথায়? 

এমনটাই ঘটিয়েছেন বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রির কয়েকটি বড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের একক নিয়ন্ত্রক রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাসান তাহের ইমাম। 

এই হাসান ইমাম বিনিয়োগকারীদের শত শত কোটি টাকা লোপাট করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এতে দীর্ঘ বছর ধরে অনাস্থায় ভুগতে থাকা মিউচুয়াল ফান্ডের ভবিষৎ আরও বেশি হুমকিতে পড়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, হাসান তাহের ইমাম সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির সম্মুখীন করতে বিভিন্ন ধরনের ছক করে প্রতারণা করেছেন। তিনি তার নিয়ন্ত্রিত ব্রোকারেজ হাউস মাল্টি সিকিউরিটিজকে ব্যবহার করে অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন শত শত কোটি টাকা। 

ব্যবহার করেছেন তার নিজস্ব ব্যক্তি স্বার্থের বেশকিছু কোম্পানির অ্যাকাউন্টও। তার মধ্যে রিট করপোরেশন, ভাইকিংস, টার্ন বিল্ডার্স, বিডি এসএমই করপোরেশন, একাসিয়া ফান্ডস, ইনভেস্ট এশিয়া ক্যাপের মতো অ্যাকাউন্টগুলো অন্যতম। 

উল্লেখিত তার এই সিকিউরিটিজগুলোর মাধ্যমেই জালিয়াতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীদের কষ্টার্জিত শত শত কোটি টাকা যা সিআইডির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্টত বেরিয়ে এসেছে। 

এ ছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিনিয়োগকারীদের অর্থ লুটপাট ও ফায়দা হাসিলের জন্য তিনি বাংলাদেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির (বিজিআইসি) বোর্ডে থাকা তার নিকটতম ৩ ব্যক্তিকে ব্যবহার করেছেন। তার অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তার বড় বোনকেও বিজিআইসিতে অন্তর্ভুক্ত করেন এই হাসান ইমাম। 

লোপাটের টাকায় নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এই অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণ করে ভাগিয়ে নেওয়া টাকায়। 

৭০০ কোটি টাকা অনৈতিক লেনদেন 
হাসান তাহের ইমামের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর পল্টন মডেল থানায় শত শত কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের করেন মো. রুহুল আমিন আকন্দ নামে একজন বিনিয়োগকারী। 

অভিযোগে বলা হয়, হাসান তাহের ইমাম ছলচাতুরী ও অন্যায় অনিয়মের মাধ্যমে ১২টি মিউচুয়াল ফান্ড ও একটি এসপিভি কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 

এর মধ্যে রুহুল আমিনের ব্যক্তিগত ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ছাড়া হাসান তাহের ইমাম নিয়মবহির্ভূতভাবে তার নিয়ন্ত্রিত ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের থেকে বেশি হারে কমিশন নিয়েছেন। শুধু ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে বিনিয়োগকারীদের থেকে ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেন কমিশন বাবদ ৫০-৬০ কোটি টাকার বেশি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। 

পরবর্তীতে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হাসান ইমাম পাবলিক ফান্ডগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং তার নিজস্ব কোম্পানি, সংস্থা ও তহবিলের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। 

এর মাধ্যমে তিনি অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছেন। মাত্র পাঁচ বছরে অনৈতিক ও আইনবহির্ভূতভাবে লেনদেন করে তিনি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত করে আত্মসাত করেছেন। 

এ ছাড়া তিনি মাল্টি সিকিউরিটিজকে ব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বেশকিছু কোম্পানির অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ অর্থ জালিয়াতি করেছেন। তিনি অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য তার বড় বোন এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তিকে বিজিআইসির বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করেন। 

বিভিন্নভাবে মিউচুয়াল ফান্ডের রুলস ও আইন লঙ্ঘন করে সুবিধা নিয়েছেন। নিজের অনিয়ম ঢাকতে, হাসান ইমাম মাল্টি সিকিউরিটিজের সফটওয়্যার ধ্বংস করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে, ট্রেডসংক্রান্ত তথ্য এখনো ঈউইখ, উঝঊ, ঈঝঊ এবং ইঝঊঈ-এর নজরদারিতে সংরক্ষিত রয়েছে। 

তদন্তে চিহ্নিত তার প্রধান ট্রেড জালিয়াতির কৌশল হিসেবে হাসান ইমাম জনসাধারণের তহবিল অপব্যবহার করে তার নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলোর জন্য অবৈধ মুনাফা অর্জন করেন। জনসাধারণের তহবিল ব্যবহার করে ট্রাস্টি বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং সেটিকে অবৈধ লেনদেনে ব্যবহার করেন।

DSE I CSE প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে বড় ব্লক ট্রেড জটিল করে তোলেন। মূল্য বিকৃতি সৃষ্টি করে অবৈধ আয় করেন এবং জনস্বার্থ নষ্ট করেন। জনসাধারণের তহবিল থেকে অস্বাভাবিক কমিশন আদায় করে সেগুলো নগদ অর্থে তুলে নেয়। সিআইডির তদন্তে এই প্রতারণামূলক কার্যকলাপ উন্মোচিত হয়েছে। 

সিআইডির দেওয়া অনুসন্ধান ও তদন্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশের The Penal Code, ১৮৬০ এর আওতায় কোড নং ১০৯, ৪০৮, ৮২০, ৫০৬, ৪৬৭, ৪৬৮ ধারায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলেও হাসান ইমাম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার সহযোগী পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সহায়তায় তার ভাতিজা সাবিরুলকে নিয়োগ দিয়ে তদন্তে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেন এবং সবকিছু স্থবির করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠে হাসান ইমামের বিরুদ্ধে।

 ফলে এখনো পর্যন্ত হাসান ইমামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। হাসান ইমাম এখন তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করেছেন এবং কিছু বিএনপি নেতা তাকে এই অভিযোগ থেকে মুক্ত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন বলে জানা গেছে।

হাসান তাহের ইমামের বিরুদ্ধে বিএসইসির পদক্ষেপ 
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২৩ সালে কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে হাসান ইমামের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ২০২৪ সালে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। 

তদন্ত চলাকালে ফান্ড থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ যেন না থাকে, সে লক্ষ্যে বিএসইসির পক্ষ থেকে তার ফান্ডগুলোর সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার জন্য বিএফআইইউকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১০ জুন বিএফআইইউ ব্যাংক হিসাব স্থগিতের নির্দেশ দেয়। 

একইসঙ্গে ওই বছরের ২৫ জুন সব ফান্ডের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে দেয় বিএসইসি। তবে এই তদন্ত কমিটি গঠনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

দুদকের অনুসন্ধান
মাল্টি সিকিউরিটিজ ইন্ডাস্ট্রির এই ধূর্তমান হাসান ইমামের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের কয়েকশ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকেও। লুটপাট করা অর্থে তিনি বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে সংস্থাটির কাছে অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে দুদক তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে। 

অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে চিঠিও দিয়েছে সংস্থাটি। দুদকের তথ্যমতে, হাসান ইমামের বিরুদ্ধে তার ব্রোকারেজ হাউসে বিনিয়োগকারীদের কয়েকশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে দেশে-বিদেশে সম্পদের মালিকানা রয়েছে এমন অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। 

কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আফিয়া খাতুনকে নিয়োগ দেন। তিনি অনুসন্ধানের স্বার্থে হাসান তাহের ইমাম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ব্যাংক-বিমা, সিটি করপোরেশন, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। 

গত বছরের ৭ মে এসব চিঠি পাঠানো হয়। তবে সব দপ্তর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র এখনো দুদকে এসে পৌঁছায়নি। ফলে আটকে আছে অনুসন্ধান কাজও। এদিকে হাসান তাহের ইমাম ও তার পরিবারের নামে ঢাকায় কয়েকটি বাড়ি ও প্লট থাকার প্রমাণ দুদকের কাছে রয়েছে। 

এসব বাড়ির মধ্যে ঢাকার অভিজাত এলাকা বনানী ৪ নম্বর রোডের ৬৫ নম্বর প্লট, একই এলাকার জি-ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২১ নম্বর প্লট এবং উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ৪৬ নম্বর বাড়ি। এ ছাড়া ঢাকার একটি আবাসিক প্রকল্পে তার বেশ কয়েকটি প্লট রয়েছে। এসব বাড়ি ও প্লটের মালিক হিসেবে কাদের নাম রয়েছে তাও জানাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গুলশানে বান্ধবীর বাড়ি দখলের অভিযোগ
হাসান তাহের ইমামের বিরুদ্ধে আমেরিকান প্রবাসী এক নারীর ১৫ কাঠা আয়তনের গুলশান এভিনিউয়ের এনই-ব্লকের ৩ নম্বর প্লটটি দখল করার অভিযোগ আছে। প্লটটির বাজার মূল্য ২০০ কোটি টাকার বেশি। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করতে গিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার ভাগিনা সাবিরুলের ক্ষমতার কাছে পরাজিত হয়ে মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি একটি জিডি (যার নম্বর-৬৮৯) করেন। 

গাজীপুরে শত শত বিঘা জমি দখল দখলের অভিযোগ
হাসান তাহের ইমামের বিরুদ্ধে গাজীপুরের গাছা থানার পলাসোনা, ইছরকান্দি ও মুদিপাড়া মৌজা এলাকায় দখলবাজ ঠাকুর বাহিনীর মাধ্যমে শত শত বিঘা জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। 

গাজীপুরের গাছা, পলাসোনা মৌজা ও সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাছা থানার অন্তর্গত পলাসোনা ও গাছা মৌজার প্রায় ৫০০ বিঘা জমি এখন ‘নীড় আর্কিটেকচারাল রিসার্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির দখলে। 

কোম্পানিটির মালিক হিসেবে স্থানীয়রা ড. হাসান তাহের ইমামকেই জানেন। কোম্পানি আইনে ২০১৫ সালে চালু করা এই প্রতিষ্ঠানটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর সি-১২৭৭৬২, যার অফিস দেখানো হয়েছে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে। আর প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হলেন হাসান তাহের ইমাম। 

অভিযোগ রয়েছে নীড় নামে এই আইটি কোম্পানি করার জন্য গাছা এলাকায় এক খণ্ড জমি কেনেন। গাছা ও পলাসোনা মৌজার সহজ সরল লোকদের সঙ্গে প্রতারণা করতে এলাকার মানুষকে নানা ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব দেন হাসান ইমাম ও তার সহযোগীরা। 

প্রথমে তিনি স্থানীয়দের স্বপ্ন দেখান যে, ওই এলাকায় তিনি স্কুল, কলেজ, ইউনির্ভাসিটি, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবেন, উন্নয়ন ঘটাবেন তাদের জীবন-মানের। তারপর তিনি গাছা এলাকায় কিছু কিছু করে জমি কিনতে থাকেন; বিশেষ করে সরকারি খাসজমির আশপাশের জমিগুলো প্রাথমিকভাবে টার্গেট করে কিনেন। 

তারপর খাসজমি দখলে নেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন যেসব জমির কাগজপত্রে সমস্যা রয়েছে, সেগুলো কিনে নেন জমির মালিকদের নানা ফাঁদে ফেলে। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সহযোগিতায় ও প্রভাব বিস্তার করে কারো নামে মামলা দিয়ে আবার কাউকে কাউকে জোর করে উচ্ছেদ করে তার জমি দখল করার মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

তার সহযোগীদের মাধ্যমে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দখল করা জমিতে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এভাবেই সরকার ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে চলছে হাসান ইমামের নীড় আর্কিটেকচারাল রিসার্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মুশফিকুর রহমান রনির মতে, যেসব বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ সম্পর্কিত জ্ঞান স্বল্পতা আছে, তারা তাদের অর্থ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে থাকে। বিশ্বের বড় অর্থনীতির সব দেশেই ‘মিউচুয়াল ফান্ড’ ব্যাপক জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম। কিন্তু বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ড কোনোকালেই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। 

এই খাতটি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে না পারার পেছনে হাসান তাহের ইমামের মতো কিছু কর্তাব্যক্তি দায়ী। তারা তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এই খাতটিকে ব্যবহার করেছে। বিনিয়োগকারীদের ঠিকমতো লভ্যাংশও দেয়নি। বিপরীতে নিজেরা অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। 

হাসান তাহের ইমামের মতো আর্থিক খাতের এসব নীরব মাফিয়াকে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন না করা গেলে হয়তো বাংলাদেশে ‘মিউচুয়াল ফান্ড’ এর ভবিষ্যৎ বিলীন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ঠেকবে। অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে দুটি মোবাইল নম্বরে ফোন দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।