একান্ত সাক্ষাৎকার সালাহউদ্দিন আহমেদ

যুগপৎ সঙ্গীদের নিয়ে নির্বাচনি জোট করবে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫, ০৮:১৭ এএম

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব কী। নির্বাচনের জন্য দেশে কেমন সংস্কার প্রয়োজন। আগামী নির্বাচন সংস্কার শেষে কীভাবে ডিসেম্বরের মধ্যেই হবে। স্থানীয় নির্বাচন আগে, নাকি জাতীয় নির্বাচন। বিএনপি কী ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে। 

কোন দলের সঙ্গে জোট হচ্ছে- এমন নানা বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ কথা বলেছেন রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক এফ এ শাহেদ

রূপালী বাংলাদেশ: অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান প্রধানতম দায়িত্ব কী বলে মনে করেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: জনগণ বহু বছর ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংগ্রাম করেছে দেশে সুষ্ঠু পরিবেশে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার গঠিত হবে। 

যার মধ্য দিয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার ফিরে আসবে। ফ্যাসিবাদের পতনের পর, গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা, শহিদের প্রত্যাশা এবং মানুষের সবচেয়ে বড় চাওয়া দ্রুত গ্রহণযোগ্য নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার। ফলে, নির্বাচিত সরকার গঠনের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করাই অন্তর্বর্তী সরকারের এখন প্রধানতম দায়িত্ব। 

রূপালী বাংলাদেশ: সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কেমন সংস্কার প্রয়োজন, কোন সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে মনে করছেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: আগামী নির্বাচন কবে হবে সেটা একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম এই বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। 

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা প্রণয়ন, যাচাই-বাছাইসহ যেসব আইনি সহযোগিতা প্রয়োজন, সেসব প্রক্রিয়া ঠিক করতে কোনোভাবেই মে-জুনের বেশি সময় লাগে না। 

তবে জুলাই-আগস্ট বর্ষাকাল বলে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত, সে সময় সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব হবে তা নিয়ে। ফলে বর্তমান সরকারকে আমরা যৌক্তিকভাবে যথেষ্ট সময় দিতে চাই। তবে, সে সময়টা অবশ্যই এই বছরের ডিসেম্বের ভেতর নির্বাচন হতে হবে।

অবশ্যই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনমুখী সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। যেগুলো তিন ভাগে বিভক্ত- স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদি বলতে নির্বাচনমুখী যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন যা একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার, অবশ্যই তা করতে হবে। সেই বিষয়ে জাতীয় ঐক্য কমিশন গঠিত হয়েছে। 

বৃহৎ ঐক্যের মধ্য দিয়ে সে সংস্কার করেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।  তবে মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি যে সংস্কার প্রয়োজন তার জন্য নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রয়োজন। কিছু সংস্কার ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে। আর স্বল্পমেয়াদি এমনকি আইনের সংস্কারও এক থেকে দুই মাসের ভেতর সম্ভব। 

প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো একই সঙ্গে চলতে পারে। নির্বাচনের প্রস্তুতি, সংস্কারের বাস্তবায়ন, স্বল্পমেয়াদি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সবকিছু একসঙ্গে চললে খুবই সুন্দরভাবে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব জুলাই-আগস্টের মধ্যেই। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু বলেছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করবে, সে বিষয়ে তারা কাজ করছে। 

রূপালী বাংলাদেশ: জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে, তার কি প্রতিফলন হবে? 
সালাহউদ্দিন আহমেদ: রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে, তাদের কাজ সংস্কার প্রস্তাবনা একত্র করে যেসব সংস্কারগুলোর প্রতি রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিশিষ্টজন একমত হতে পারে সেগুলো নির্ধারণ করা। কারণ, একটা বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টি হলে সেসব সংস্কার বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। 

একই সঙ্গে যেসব সংস্কারে আমরা ঐকমত্য হতে পারব, সে সম্পর্কে আমাদের প্রতিশ্রুতি থাকবে, অঙ্গীকার থাকবে। যা আগামী নির্বাচনে প্রতিফলন হবে, জাতির কাছে আমরা ওয়াদাবদ্ধ থাকব। একই সঙ্গে যারাই রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবে তারা এগুলো বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। 

রূপালী বাংলাদেশ: বিএনপি কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে মাঠের কর্মসূচি দিচ্ছে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: আমরা এখন জনগণের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করছি। দেশে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তার জন্য বর্তমান সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে হয়তো ভুল ছিল, নয়তো তারা সময়ক্ষেপণ করছেন। 

যেভাবেই হোক, জনগণের কাছে প্রধানতম এবং উল্লেখযোগ্য বিষয়, জীবনযাত্রার মান কেমন সেটি বর্তমান এবং পূর্বের সময়ের সঙ্গে তারা তুলনা করেন। আমরা যেহেতু জনগণের জন্য রাজনীতি করি সুতরাং আমরা জনগণের স্বার্থে সমালোচনা করব, সরকার যেন সঠিক পথে থাকতে পারে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা অবস্থার অবনতি হয়েছে। আমরা বলেছি, কঠোরহস্তে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য। বর্তমানে সারা দেশে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে তা কারো কাম্য নয়। স্বৈরাচারের দোসর যারা পরাজিত শক্তি তারা দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে নানাভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

তাদের এই ফাঁদে দেশের জনগণ যেন কোনোভাবেই পা না দেয়, তার জন্য আমরা সচেতনতামূলক কাজ করছি। কোনোভাবেই তাদের যড়যন্ত্র যেন কার্যকর করতে না পারে তার জন্য মাঠের কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি।

রূপালী বংলাদেশ: বিএনপি শুধুই নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে বেশি চাপ দিচ্ছে, এমন দাবি করছে অনেক রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে কি বলবেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: জনআকাক্সক্ষা বুঝতে হবে, যতবেশি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে সময় নেবে অন্তর্বর্তী সরকার, তত বেশি ফ্যাসিবাদের দোসরা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ পাবে। 

যেকোনো রকমের অগণতান্ত্রিক শক্তিকে আগে বাড়তে দেওয়া আমাদের অবশ্যই উচিত হবে না। সে জন্যই দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছি আমরা। অবশ্যই সেটি যোক্তিক সংস্কার, বর্ষা মৌসুম, নির্বাচনি প্রস্তুতের বিষয়, আইনি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলো মাথায় রেখেই বলছি।  

কেউ কেউ বলছে আমরা বেশি বেশি নির্বাচনের দাবি করছি, সেটা আমরা জনগণ এবং দেশের পক্ষেই করছি। এ ছাড়া কোনো উপায় নেয়। নির্বাচিত সরকার যত দেরিতে আসবে, অনির্বাচিত সরকার তত বেশি চ্যলেঞ্জের সম্মুখীন হবে। 

রূপালী বাংলাদেশ: আগামী নির্বাচনে বিএনপি কোন দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনি জোট করবে?

সালাহউদ্দিন আহমেদ: আমরা যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, যুগপৎ আন্দোলন করেছি। তারা আমাদের যুগপতের সঙ্গি। তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের আগামী নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, যেহেতু এখনো অনেক সময় বাকি নির্বাচনি তপশিল ঘোষণার, সুতরাং অপেক্ষা করতে হবে কারা থাকবেন বা থাকবেন না আমাদের (বিএনপি) জোটে সেটির জন্য। 

কোনো দলকে আমরা লেবেল লাগিয়ে দিতে চাই না। বাংলাদেশে যেসব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের লড়াই-সংগ্রামে সঙ্গে ছিল তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি, যোগাযোগ চলমান।

রূপালী বাংলাদেশ: স্থানীয় নির্বাচন আগে চাচ্ছে অনেক রাজনৈতিক দল-এ বিষয়ে কি বলবেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ: যারা স্থানীয় নির্বাচন এবং আনুপাতিকহারে নির্বাচন চাচ্ছে তারা কোনো না কোনো বাহনায় সাধারণ নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ম্যান্ডেড হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন বা জাতীয় নির্বাচন করা। স্থানীয় সরকার নির্বাচন মূলত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিষয়। 

স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে নির্বাচন কমিশন সে নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে। ইউপি নির্বাচন পরিচালনা করতে ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগে একই সময় লাগে উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের সারা দেশের নির্বাচন করতে।

যদি ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয় এবং নির্বাচনি প্রস্তুতি থেকে থাকে তবে, কেন মানুষের যে প্রধানতম চাহিদা জাতীয় নির্বাচন জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য তা উপেক্ষা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের যে বিশাল গণতন্ত্রহীন অবস্থা থেকে আমরা গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছি সেটা আমাদের প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত। 

দেশে স্থিতিশীলতা আনয়নের জন্য, গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য এবং সাংবিধানিক শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য এই সরকারের ম্যান্ডেড একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। যেটির প্রয়োজন সবার আগে। 
রূপালী বাংলাদেশ: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ: আপনাকে এবং রূপালী বাংলাদেশকে ধন্যবাদ।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!