ঢাকা শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

বঙ্গবন্ধু কর্নার প্রকল্পের অপচয় ২২ কোটি টাকা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১১:৫০ এএম
ছবি: সংগৃহীত

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার প্রকল্প শুরু হয় ২০২০ সালের জুলাই মাসে। শেষ হয় ২০২২ সালের জুনে। প্রকল্পে খরচ হয় ২২ কোটি ২৪ লাখ টাকার বেশি অর্থ।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন-কর্ম সম্পাদিত বই সরবরাহের মাধ্যমে পাঠক, গবেষক, তথ্য আহরণকারীদের মাঝে যথাযথ তথ্য তুলে ধরা। দেশের বিভিন্ন কারাগারের ভেতর থাকা পাঠাগারেও বানানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার।

এই প্রকল্পের আওতায় ৭১টি সরকারিসহ দেশের এক হাজার পাঠাগারের কর্নারের জন্য কেনা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, তার লেখা বই, তাকে নিয়ে লেখা বই এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইগুলো। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের কাছ থেকে এ জন্য ২৫০টি করে বই ও বই রাখার তাক পায়।

[34871]

বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন নিয়ে ৩০৫৩ দিন, অমর শেখ রাসেল, ছোটদের বঙ্গবন্ধু, শেখ মুজিব আমার পিতা, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অথবা শেখ হাসিনার নির্বাচিত উক্তি- এমন শিরোনামের বইগুলো দেওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের জন্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সাবেক আওয়ামী সরকারের পতনের পর এই প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি করা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার থেকে বঙ্গবন্ধু নামটি মুছে ফেলা হয়েছে। কর্নারে রক্ষিত শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বা শেখ হাসিনার ছবি যেখানে আছে তা মুছে ফেলা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নিম্নমানের চাটুকারধর্মী কোটি টাকার বই বস্তাবন্দি করে রাখা হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও বই রাখার শেলফ, তাক, টেবিল, চেয়ার কিছু রয়েছে। তবে পাঠকসেবা বলতে তেমন কিছুই নেই।

বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিদর্শনের সঙ্গে যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে তা মনিটরিংয়ের জন্য কোনো বন্দোবস্ত থাকে না। তবে একটি দল ও ব্যক্তির প্রচারের জন্য বিশেষ উদ্দেশ্যে নেওয়া এই প্রকল্প থেকে আসলে কোনো লাভ হয়নি। যেসব বেসরকারি গ্রন্থাগারে এসব কর্নার স্থাপন করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই অকার্যকর। টাকা হাতিয়ে নেওয়াই মূল লক্ষ্য ছিল।

[34869]

একাধিক বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিদর্শন করে মাঠপর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কর্নার থেকে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম এবং ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অধিকাংশ স্থানেই শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা বই বস্তাবন্দি করে গুদামে রাখা হয়েছে।

এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন মোছা. মরিয়ম বেগম। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, প্রকল্প শেষ হওয়ার আগের ছয় মাস প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর তা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই। আর বেসরকারি গ্রন্থাগার তদারকির দায়িত্ব আমাদের নয়। সার্বিকভাবে এই প্রকল্পে ব্যয়িত টাকা অর্থহীন হয়েছে কি না প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।