ঢাকা রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

এবার ট্রাইব্যুনালে জড়ানোর হুমকি বিএনপি নেতাকে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৪:১২ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাকিতে চীনা ‘গিফট আইটেম’ নিতেন। নিতে নিতে কয়েক বছরে প্রায় ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বাকি হয়ে যায়। সেই টাকা আত্মসাৎ করতেই মিথ্যা মামলা দিয়ে পাওনাদার ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করায়। 

এরপর ওই ব্যবসায়ী জামিনে বের হওয়ার পর এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে- এমন অভিযোগ উঠেছে ইংল্যান্ডপ্রবাসী বিএনপি নেতা পারভেজ মল্লিক ও বাংলাদেশে থাকা তার ছোট ভাই জুলফিকার মল্লিকের বিরুদ্ধে। আর এই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের লক্ষ্মীপুর জেলার সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা আবু সাদেক।

এদিকে ওই ব্যবসায়ী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ডিজিএফআই ডিরেক্টরেট জেনারেল ও এনএসআই মহাপরিচালক, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ডিএমপি কমিশনারের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে অভিযোগ করেছেন। 

পারভেজ মল্লিকের বিরুদ্ধে তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছেও। সেই অভিযোগের কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এ ছাড়া পাওনা টাকা উদ্ধারসংক্রান্ত জিডি ও অভিযোগসংক্রান্ত সব কপি সংরক্ষিত আছে।

[35305]

লিখিত অভিযোগে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের নেতা ও ব্যবসায়ী আবু সাদেক বলেন, ২০১১ সালে প্রতারক চক্রের অন্যতম মূল হোতা আমার অফিসে এসে অনেক কান্নাকাটি করে বলেন, ভাই আপনি একজন বড় আমদানিকারক। আপনার সামান্য সাহায্য আমার জীবন বদলে দিতে পারে।

 অনেক আমদানিকারকের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কেউ সহযোগিতা করছে না। একজন আমদানিকারকের কাছে অর্ডার দিয়ে বর্তমানে টাকার অভাবে ছাড়াতে পারছেন না বলে আমাকে জানান প্রতারক জুলফিকার। এমন অবস্থায় সরল মনে তাকে বাকিতে গিফট আইটেম দেওয়া শুরু করি।

 ২০১১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম জুলফিকারকে বাকিতে পণ্য দিই। সেই মোতাবেক জুলফিকার নিয়মিত মালামাল নিতে থাকে এবং কোম্পানি থেকে বিল পাওয়ার পর আমাকে পণ্য বিক্রি করে আস্তে আস্তে টাকা দিতে থাকে।

ব্যবসায়ী সাদেক বলেন, বিশ্বস্ততার সম্পর্কটা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, চীন থেকে মাল আমদানি করে কনটেইনারসহ জুলফিকারের ওয়্যারহাউজে পাঠিয়ে দিই। পণ্য বিক্রি করার পর জুলফিকার যে হিসাব পাঠায়, সেটাই বিশ্বাস করি আমি। 

হঠাৎ করোনাকালীন চীনে আসা-যাওয়া বন্ধ এবং পাঁচটি কনটেইনার নিলামে ওঠার কারণে ব্যাবসায়িকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমদানির আগের তুলনায় গাণিতিক হারে কমতে থাকে। কিন্তু জুলফিকারের কাছে আমার টাকাগুলো পাওনা পড়ে থাকে। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জুলফিকারকে ই-মেইলে বকেয়া বিলের হিসাব পাঠাই। 

[35300]

আর তাকে গোডাউনে আমার যে মাল ছিল, সেটার হিসাব পাঠাতে বলি। সে অনেক দিন পর গোডাউনের মাল বিক্রি শেষ করে আমাকে হিসাব দেয়। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার কাছে পাওনা ছিল ৩ কোটি ২২ লাখ ৮ হাজার ১৬২ টাকা। আর গোডাউনের মাল বিক্রি বাবদ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩ কোটি ৪১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯৪ টাকাসহ সর্বমোট পাওনা দাঁড়ায় ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৬২ হাজার ৯৫৬ টাকা।

তিনি বলেন, এর মধ্যে জুলফিকার ৩ কোটি ৭১ লাখ টাকার সাতটি চেক দেয় আমাকে। বাকি টাকাও পর্যায়ক্রমে দেওয়ার আশ্বাস দেন। চেক দেওয়ার সময় জুলফিকার আমাকে বলেন, ‘ভাই আমি আস্তে আস্তে টাকা দেব। তাই একাধিক চেক দিলাম তারিখ ছাড়া। 

আমি বলে দেব, কোন তারিখে, কোন চেক জমা দেবেন। বাকি টাকাও দিয়ে দেব, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। কিন্তু এর পর থেকে প্রতারক জুলফিকার আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি ফোন করলে ধরে না। লোক পাঠানোর পরও কোনো রেসপন্স করে না। এমনকি আমি নিজে সরাসরি তার অফিসে গেলেও সে দেখা করেনি। সে টাকা না নিয়ে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। পরে উপায়ান্তর না দেখে ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলানগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি (জিডি নং-৮১১)।

সাদেকের দাবি, আমি ২০২০ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সহ-সভাপতি ছিলাম। বর্তমান কমিটিতেও আমি উপদেষ্টা পদে আছি। আমার পরিবারের কেউ বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ কিংবা তার কোনো সহযোগী সংগঠনকে সমর্থনও করেনি। 

[35303]

বরং বিগত দিনে তিনি নিজেও ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। কিন্তু পাওনা টাকা মেরে দিতে তাকে পতিত স্বৈরাচারের দোসর বানানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জুলফিকার ও তার ভাই পারভেজ।

সাদেক অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও নেতাদের নাম ভাঙিয়ে জুলফিকার ও তার লন্ডনপ্রবাসী বড় ভাইসহ কয়েকজন আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হেয় করার অপচেষ্টায় কাল্পনিক অভিযোগ করেন। 

শুধু এখানেই শেষ নয়, প্রতারক জুলফিকার পাওনা টাকা পরিশোধ না করে উল্টো আমার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধী ডিবি হারুনের প্রধান সহযোগী বানিয়ে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দেন। এরপর সেই মামলায় আমাকে গ্রেপ্তার করিয়ে জেল-হাজতে পাঠায়। আমি জুলফিকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় বিজ্ঞ আদালতের জামিন পেয়ে বের হয়েছি। এর পর থেকে প্রতারকচক্র বিভিন্ন মামলায় আমাকে ফাঁসানো, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় জড়ানো এবং নতুন আরও মামলার হুমকি দিচ্ছে।

জুলফিকারকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার পাওনা টাকা আমি ২০১৯ সালে তার অ্যাকাউন্টে দিয়েছি। এরপর চেক ফেরত চেয়েও পাইনি। সাদেকের কাছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা আমি পাই। কে কার কাছে টাকা পাবে তা আদালত নির্ধারণ করবে।