অসমাপ্ত রেখেই শেষ লাখ কোটির প্রকল্প

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫, ০১:২৬ এএম

অসমাপ্ত রেখেই শেষ লাখ কোটির প্রকল্প

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা-সিলেট ছয় লেনের ২০৯ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণকাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। চলছে কচ্ছপ গতিতে।

২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে মহাসড়কের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা হচ্ছে না।

তবে ভূমি অধিগ্রহণে সমস্যাকে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে ২০২১ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত মাত্র ১৩ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। 

একইসঙ্গে, পর্যটন এলাকা সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের (৫৬ দশমিক ১৬ কিলোমিটার) চার লেনে উন্নীতকরণ কাজেও একই চিত্র।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ চলতি ২০২৫ সালের জুনে শেষ হবে।

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজ অসমাপ্ত রেখেই দুটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।

সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের (ঢাকাÑসিলেট প্রকল্প) ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ৯১ হাজার ৮৫৮ কোটি  টাকা।

তার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ৩৬৭৩৮৯.৮৬ কোটি এবং এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়ন করবে ১৩২৪৪৬৮.৯৫ কোটি।

রূপালী বাংলাদেশের হাতে আসা সওজের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুসারে সার্বিক অগ্রগতি ১২.২০ শতাংশ এবং আর্থিক দিক থেকে অগ্রগতি হয়েছে ১৫.৭২ শতাংশ।

সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।

বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান এবং চীনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।

এ মহাসড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ৬ লেনে উন্নীত হলে ঢাকার সঙ্গে নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং বিভাগীয় শহর সিলেটসহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হবে এবং এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধন ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ আরও সহজতর হবে।

সে লক্ষ্যে সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে একপাশ বন্ধ করে সম্প্রসারণ চলছে।

কয়েকটি স্থানে চলছে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণকাজ। যার কারণে সড়ক সরু হওয়ায় প্রতিদিন ধরে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন অসংখ্য মানুষ।

সওজ জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ে ছয় লেনের মহাসড়কের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। তাই প্রকল্প সম্পাদনে আরও সময় বর্ধিত দাবি ও টাকার পরিমাণ বাড়াতে সরকারের কাছে আবেদন করার কথা বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সিলেট-ঢাকা ৬ লেন মহাসড়ক প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

এই প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ সম্প্রসারণের কাজ হাতে নেয় সরকার। ভূমি অধিগ্রহণেই বরাদ্দ পাওয়া সময় শেষ হলেও কাজের বিশেষ অগ্রগতি হয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে সময় বর্ধিত না করলে অসমাপ্ত কাজ রেখেই ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসেই নির্ধারিত সময় শেষ হবে।

‘ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এই প্রকল্পের গতি কমেছে’ বলেন ঢাকা-সিলেট করিডোর রোড ইনভেস্টমেন্ট প্রজেক্টের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকুনুজ্জামান।

তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ল্যান্ড রিকুজিশন নিয়ে বড় সমস্যায় আছি। এ কারণে প্রজেক্টের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ।

নির্ধারিত সময়ে এই প্রজেক্টের বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রয়োজনে সরকারের কাছে বর্ধিত সময়ের জন্য আমরা আবেদন করব।’

সিলেট-তামাবিল প্রকল্প চার লেনে উন্নীতকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানেও ল্যান্ড রিকুজিশন বড় সমস্যা।’

বাস্তবায়নযোগ্য ঢাকা-সিলেট ছয় লেনের মহাসড়ক মূল সড়ক হচ্ছে ২০৯.৩২৮ কিলোমিটার। সড়কে সেতু রয়েছে ৬৬টি (৬০২০.০০ মিটার), ফ্লাইওভার/ ওভারপাস, রেলওয়ে ওভার ব্রিজ রয়েছে ১৩টি (৭৭৮০.১৯ মিটার), স্টিল ব্রিজ ২৬টি এবং বক্স কালভার্ট রয়েছে ৩০৫টি (১৪৮৯.০০ মিটার)।

জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে সিলেটবাসীর স্বপ্নের ৬ লেন প্রকল্পের কাজ।

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সহজ হবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনপদের যাতায়াত ব্যবস্থা।

একইসঙ্গে বদলে যাবে পুরো অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট। ২০২৩ সালে কাজ শুরু হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ১২টি কালভার্ট এবং ১১টি ব্রিজের কাজ রয়েছে।

১২টি কালভার্টের মধ্যে তিনটির কাজ শেষ এবং সাতটির কাজ চলমান। ১১টি ব্রিজের মধ্যে ৯টির কাজ এখনো চলমান।

নিম্নগতির কাজ সম্পর্কে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ইঞ্জনিয়ার এ এস এম শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমেছে। বড় কারণ ভূমি অধিগ্রহণ।’

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ।

সওজের প্রতিবেদন অনুসারে সিলেটের কাঞ্চন এলাকায় সোনাপুর বাসস্ট্যান্ডে দুটি সেতুর কাজ চলমান।

২০টি গার্ডার, ২৯৬টি পাইলের কাজও সমাপ্ত হয়েছে। একই সঙ্গে চারটি কালভার্টের কাজও চলমান।

নরসিংদী এলাকায় দুটি সেতুর মধ্যে একটি কাজ চলমান, ফ্লাইওভার ৩টির মধ্যে দুটির কাজ চলমান, ৩১৪টি পাইল ও ১০টি গার্ডারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

একইসঙ্গে ২১টি কালভার্টের মধ্যে ৬টির কাজ চলমান এবং ৬ কিলোমিটার এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ চলমান।

শায়েস্তাগঞ্জে দুটি সেতুর কাজ চলমানসহ প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কে মাটি ভরাট কাজ চলমান রয়েছে। হালনাগাদ প্রতিবেদনে ডব্লিউ-পি ৬টিতেই সিলেট-ঢাকা ৬ লেন মহাসড়কের কাজ চলমান দেখানো হয়েছে।

প্রকল্পের কাজ শেষ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আরও বর্ধিত সময় ও বিনিয়োগ দাবি করার কথা জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক এ এস এম শাহরিয়ার চৌধুরী।

তা ছাড়া অতি চাহিদাসম্পন্ন এই প্রকল্পের কাজ অসম্পন্ন থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা-সিলেট ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণ হলে সিলেটে পর্যটকরা আরও আগ্রহী হবেন।

একই সঙ্গে, এটি এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডোর এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অন্যদিকে বাণিজ্যিক দিক দিয়েও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

তাই সবদিক বিবেচনায় সড়কের কাজ দ্রত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন ঢাকা ও সিলেটবাসী।

আরবি/জেডআর

Link copied!