ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

হার্ডলাইনে যৌথ বাহিনী

মেহেদী হাসান খাজা
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০২:১৩ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই অবনতি ঘটেছে।

ছিনতাই, রাহাজানি, লুটপাট ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে যৌথ বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলার সার্বিক চিত্র ফুটে উটেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বীকার করেও নেওয়া হয়েছে।

এই বিশৃঙ্খলাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্রিয় হচ্ছে।

এসব বিষয়ে অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে যেমন প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা বেড়েছে, তেমনই অন্যদিকে একধরনের উচ্ছৃঙ্খল জনতার উত্থান ঘটেছে।

বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন, ২০২৪ সালে এক ধরনের বিশৃঙ্খলতা থাকলেও শৃঙ্খলাও ছিল যথেষ্ট।

এখন সেই শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে যথেষ্টভাবে প্রশাসনকে কঠিন হতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার সংকটে পড়বে।

এদিকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সাধারণ মানুষ বলছেন, দেশে কোনো নিরাপত্তা নেই, শান্তি নেই।

এই শান্তি ফেরানো জরুরি। তাদের দাবি, বিগত সরকার ফ্যাস্টিস হলেও মানুষের এক ধরনের নিরাপত্তায় ছিল।

সেই নিরাপত্তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ফিরিয়ে আনতে হবে।  
সাধারণ মানুষের উদ্বেগ প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কঠোর হচ্ছে সরকার।

এ কারণে সারা দেশে নামছে যৌথবাহিনী।সূত্র জানায়, যৌথবাহিনী অপরাধীদের ধরতে অতিরিক্ত চেকপোস্ট ও নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।

তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি আমলে নিয়েই সরকারের নির্দেশে কঠোর হচ্ছেন। 

ঢাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোয় যৌথ বাহিনীর কমবাইন্ড টহল: দেশের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোয় গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে যৌথ বাহিনীর কম্বাইন্ড টহল শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

অবশ্য এসব বিষয় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ও অপরাধীদের ধরতে চেকপোস্ট ও অভিযানের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আরও বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি সরকার সিরিয়াসলি নিয়েছে।

এজন্য সব বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিংয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তারা কাজ করছেন। তা ছাড়া অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোয় যৌথবাহিনীর টহল বাড়ানোসহ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হবে। বাড়ানো হবে গোয়েন্দা তৎপরতা।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, রাজধানীতে পুলিশের টহল আরও বাড়ানোর হয়েছে।

রাজধানীর জায়গায় জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকি করা হবে। সন্ধ্যার পর থেকে অপারেশন আরও জোরদার করা হয়েছে।

অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সারা দেশেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমরা দেখেছি, গত রোববার রাতেও রাজধানীর রামপুরা থানার বনশ্রী এলাকায় আনোয়ার হোসেন নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।

এ সময় তার কাছে থাকা প্রায় ২০০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর এমন অপরাধ বেড়েই চলছে।

দেশের মানুষ এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিরাপত্তা চায়। সাধারণ মানুষকে সবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আসবে না।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে ঢাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ: অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী ছিনতাই, হামলা, চাঁদাবাজি, ধর্ষণের মতো অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে দাবি করে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিকুর রহমান সানি জানান,  ‘দেশে হঠাৎ করে ধর্ষণ, ছিনতাই ও যৌথবাহিনীর ওপার হামলাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে।

এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা, শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসা।

দেশ পরিচালনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আছে: দেশ পরিচালনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আছে, স্বীকার করে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আন্তরিকতার ঘাটতি নেই এমন মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলছেন, ‘নতুন বাংলাদেশে কয়েকটি ধ্বংস প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছে সরকার।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুলিশ বাহিনী। নিয়োগ থেকে শুরু করে বাহিনীটির সব ক্ষেত্রেই ভঙ্গুরতা দেখা যায়। রাষ্ট্র পরিচালনায় বেশকিছু জায়গায় ব্যর্থতা থাকলেও তা উত্তরণে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

উপদেষ্টা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা কোটি কোটি টাকা খরচ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছে। 

ফ্যাসিবাদ দোসরদের কিছু অংশ দেশের বাইরে পালিয়ে গেলেও অধিকাংশই দেশের ভেতরে অবস্থান করছে।

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মাঠে পুলিশের তিন বিশেষায়িত ইউনিট: বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তিনটি বিশেষায়িত ইউনিট মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।

গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এ কথা বলেন।

আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে, বিশেষ করে রাত্রিকালীন ছিনতাই। শুধু গত রাতে নয়, তার আগের রাতেও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

এজন্য বিশেষ একটি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তিন অর্গানাইজেশন মিলে ইনটেনসিভ পেট্রোলিং করবে।

আজকে থেকেই এটা বাস্তবায়িত হবে আশা করছি। আমরা দেখি এভাবে পরিস্থিতি উন্নতি হয় কি না।  না হলে অন্যভাবে এগোতে হবে। 

ছিনতাইগুলোতে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না এমন কথার উত্তরে তিনি বলেন, এটা তদন্তের পর বোঝা যাবে। র‌্যাব একজন ছিনতাইকারীকে ধরেছে।

সরাসরি ছিনতাইয়ের সময় নয়, তবে তার আস্তানায় গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তার থেকে চাপাতি, ছুরি, লাখ টাকা পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

অপারেশন ডেভিল হান্ট নিয়ে তিনি বলেন, ডেভিল হান্ট হচ্ছে যারা সন্ত্রাসী, সমাজবিরোধী তাদের বিরুদ্ধে। আমরা শুরু করেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে।

দেশব্যাপী এটা হচ্ছে। এখন ঢাকা মহানগরের ক্রাইম একটু ডিফারেন্ট। সারা দেশের চিত্রের সঙ্গে মেলে না।

এটার জন্য আলাদা পরিকল্পনা গ্রহণের চেষ্টা করছি। আপনারা আমাদের জানান। আমরা সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও খবর পাচ্ছি।