শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ১০:০৯ এএম

বাজেট ছোট হলেও বাড়বে অনুদান

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ১০:০৯ এএম

বাজেট ছোট হলেও বাড়বে অনুদান

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ব্যয় সংকোচন নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ছোট করা হচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার। তবে বাজেটের আকার ছোট করা হলেও বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে সরকার। মূলত রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের এই পরিকল্পনা। 

চলতি অর্থবছরের বাজেট ৫৩ হাজার কোটি টাকা ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত হতে পারে। বিপরীতে বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে সরকার। যাতে চাপে থাকা রিজার্ভে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরানো যায়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ও মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। যা মূল বাজেটে আছে ৬ দশমিক ৭৫ এবং ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। চলতি বাজারমূল্যে জিডিপির সংশোধিত আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। যা মূল বাজেটে ছিল ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। এর মধ্যে কর রাজস্ব ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। 

এর মধ্যে এনবিআর কর রাজস্ব ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, এনবিআর করবহির্ভূত কর রাজস্ব ১৫ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং করবহির্ভূত রাজস্ব ৪৬ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। যা সংশোধন করে ৫৩ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে মূল বাজেটে ঘাটতি ধরা আছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিততে তা কমিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ঘাটতি পূরণে সরকার অভ্যন্তরীণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা সংশোধন করে ধরা হতে পারে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেয়ার লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধন করে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসতে পারে। 

আর বৈদেশিক অনুদান হিসেবে পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ ছিল ৯৫ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধন করে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ১৪ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ আছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। যা সংশোধন করে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ৪৯ হাজার কোটি টাকার কম উন্নয়ন করা হবে।

চলতি অর্থবছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোট বাজেটের ১৮ দশমিক ০৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বরাদ্দের মাত্র ৬ দশমিক ১১ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। আর পরিচালন ব্যয় হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে। ইতিমধ্যে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এদের অধীন বিভিন্ন দপ্তর স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাকে সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।

চলতি বছরের ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রণয়ন করা হয়েছিল। এরপর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের পর অর্থবছরের এক মাস আট দিনের মাথায় ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্প কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ঠিকাদারেরা কাজ বন্ধ করে দেন এবং বিদেশি অনেক ঠিকাদার দেশ ছেড়ে চলে যান। সেপ্টেম্বরে কিছু প্রকল্প পুনরায় শুরু হলেও অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের বাজেট কাটছাঁট করতে গিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে আরও সাশ্রয় করা সম্ভব হলেও ঋণের সুদ পরিশোধ, বিক্ষোভে হতাহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং অবকাঠামো মেরামতের জন্য বাড়তি ব্যয় দরকার হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি বন্ডে উচ্চ সুদের হার (১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত) এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি এর প্রধান কারণ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে চার বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার আশা করছে। এ ছাড়া বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য সরকার ব্যাংক-ব্যবস্থার বাইরের উৎস- যেমন সঞ্চয়পত্র ও ট্রেজারি বিলকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলেও জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়, ভূমি অধিগ্রহণ খাতে পরিচালন বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ-সংক্রান্ত গত ৪ জুলাই অর্থ বিভাগের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। 

তবে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারের নিজস্ব অর্থে সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ, কর্মশালা ও সেমিনারে অংশগ্রহণও বন্ধ থাকবে। উন্নয়ন ও পরিচালন বাজেটের আওতায় মোটরযান, জলযান, আকাশযানসহ সব ধরনের যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে।

কিন্তু পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের বেশি পুরোনো যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে অর্থ ব্যয় করা যাবে। পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক ভবন, অনাবাসিক ভবন এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে চলমান নির্মাণকাজ ন্যূনতম ৭০ শতাংশ শেষ হয়ে থাকলে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে।

এদিকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পসংখ্যা সীমিত রাখা, মূল সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীন কোনো প্রকল্প না রাখা, সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোকে অগ্রাধিকার বাছাই করে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়ার নির্দেশনা।

জানা গেছে, এডিপির আওতায় নেওয়া প্রকল্পগুলো উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কাটছাঁটের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে মেগাপ্রকল্প এবং গোষ্ঠীস্বার্থের প্রকল্পগুলো। কারণ জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বাজেট কাটছাঁট করার বিষয়টি সরকারের একটি ভালো সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমতির দিকে হলেও বাংলাদেশে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে। 

গত দুই বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও তার সুফল বাংলাদেশ পায় না। আমাদের খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পেছনের কারণ বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব ও সরবরাহব্যবস্থায় চাঁদাবাজি। এ পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতিতে বড় কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। 

তিনি জানান, গত সরকারের প্রণীত বাজেটে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাজেটকে চাপে ফেলেছে। এটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিতে হবে। বিলাসী বিদেশ ভ্রমণ বাদ দিতে হবে। সরকার সেদিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও তিনি বলেন।

এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাতিল করা হবে। সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দিতে হবে। 

রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের জন্য নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে বাজেটের আকার কমবে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাজেট বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলেও মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা।   

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করে। এর মধ্যে এডিপি ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। 

অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটেই ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা অব্যবহৃত ছিল।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!