বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশনের ঋণের (বিএইচবিএফসি) সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে সব ধরনের ঋণের সুদ ১ শতাংশ বেশি দিতে হবে। এতে বাড়ি নির্মাণ ব্যয় বর্তমানের তুলনায় আরও বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতির কারণে চাপে থাকা মানুষের আরও চাপ বেড়ে যাবে।
এতে অনেকের পক্ষে বাড়ি বানানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, বিএইচবিএফসির প্রস্তাবিত ঋণের নতুন সুদহার সরকার অনুমোদন দিয়েছে। সরকার অনুমোদিত দুই পদ্ধতিতে বিএইচবিএফসি ঋণ দিয়ে থাকে। এর একটি হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড ইএমআই পদ্ধতি (শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগ ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক কর্তৃক দ্বিতীয় ফেজের অর্থায়নের বিনিয়োগ)। অপরটি হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড ইএমআই পদ্ধতি (কৃষক আবাসন ঋণ/বিনিয়োগ)।
সমমানের মাসিক কিস্তি (ইএমআই) একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বকেয়া ঋণ পরিশোধের অংশ হিসাবে কোনো ব্যাংক বা ঋণদানকারীকে প্রদত্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থকে বোঝায়।
সহজ কথায় বলতে গেলে, ইএমআই হলো এমন একটি সুবিধা যা ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের তাৎক্ষণিক নগদ প্রবাহের চাহিদাপূরণের জন্য ধার নিতে এবং তারপরে একটি নির্দিষ্ট হারে কিস্তিতে পরিশোধ করতে নির্ধারিত ঋণের মেয়াদে সুদ। গ্রাহককে প্রতি ক্যালেন্ডার মাসে নির্দিষ্ট তারিখে এই অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
চিঠি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার সব প্রকার ঋণ বা বিনিয়োগ এবং দেশের অন্যান্য এলাকার ফ্ল্যাট ঋণ অথবা বিনিয়োগের জন্য সুদ ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়া দেশের অন্য এলাকার ফ্ল্যাট ঋণ ছাড়া সব প্রকার ঋণ বা বিনিয়োগের জন্য ঋণের সুদ ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ করা হয়েছে। এবং পেরি আরবান, উপজেলা সদর এবং তৎসংলগ্ন গ্রোথ সেন্টার এলাকার জন্য সুদ ৭ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পেরি-আরবান অর্থ ‘শহরের চারপাশে’ যা শহর এবং গ্রামাঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থানগুলোকে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ফ্ল্যাট এবং বাড়ি নির্মাণে গৃহঋণের সীমা ২ কোটি টাকা। দেশের নির্মাণসংশ্লিষ্ট পেশা, উপকরণ উৎপাদন ও ব্যবসার বিকাশের মূল কারিগর বিএইচবিএফসি।
প্রতিষ্ঠানটি এত দিন ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় তিন লাখ গৃহ ইউনিট নির্মাণে অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। পরিবেশ ও মানসম্মত এই বিপুলসংখ্যক গৃহ ইউনিট নির্মাণের ফলে অন্তত ১৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এর সুফল ভোগ করছেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বরাবর লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি সরকারের রাজস্ব আয়েরও অন্যতম উৎস। সরকারের নীতি, আদর্শ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিশ্বস্ত সহযোগী বিএইচবিএফসি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিএইচবিএফসি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএসডিবির তহবিলসহ সরকারের দেওয়া মূলধন ও ঋণের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ঋণ ও বিনিয়োগ প্রবাহ আরও বৃদ্ধি করেছে।
বর্তমানে বিএইচবিএফসির ঋণ ও বিনিয়োগ প্রোডাক্টের সংখ্যা ১২টি। ঋণ ও বিনিয়োগ সেবার পরিসর শহরকেন্দ্রিক উন্নত এলাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মফস্বলের উন্নয়নশীল এলাকা পর্যন্ত। জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন তথা সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বর্তমানে সারা দেশে প্রতিষ্ঠানটির ৬১টি শাখা অফিস নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা, আদর্শ ও মূল্যবোধের নিরিখে সরকারি চাকরিজীবী, কৃষক ও প্রবাসীদের জন্য ঋণ বহুমুখী কারণের পাশাপাশি ইসলামিক শরিয়াহভিত্তিক গৃহনির্মাণ বিনিয়োগ প্রোডাক্টের প্রবর্তন করেছে।
সুদ ও মুনাফার হার হ্রাস, ঋণ ও বিনিয়োগের সিলিং বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেবা ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছে। সেবা বিতরণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতির আওতায় শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন, জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি দীর্ঘসূত্রতা হ্রাসের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিএইচবিএফসি বাংলাদেশের গৃহায়ণ খাতে অর্থায়ন ব্যবস্থার পথপ্রদর্শক। মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা মানসম্মত আবাসনের সংস্থান করার জন্য ১৯৫২ সালে হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের আবাসন অবকাঠামো বিনির্মাণসহ স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সরকারি পর্যায়ে গৃহনির্মাণে নিরন্তর ঋণ সহায়তা দেওয়ার জন্য ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে পুনর্গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠা ও পুনর্গঠন থেকে গৃহনির্মাণে ঋণ দেওয়ায় সরকারের বিশেষায়িত একমাত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিএইচবিএফসি প্রায় সাত যুগ ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে যুগপৎ সেবা ও ব্যবসায় পরিচালনা করে আসছে।
আবাসন ঋণ পেতে যেসব নথিপত্র লাগে: বাড়ি তৈরির ঋণের জন্য প্রথমেই দরকার যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত বাড়ি বা ভবনের নকশা, মূল দলিল, নামজারি খতিয়ান, খাজনা রসিদের সত্যায়িত ফটোকপি।
এ ছাড়া সিএস, এসএ, আরএস, বিএস খতিয়ানের সত্যায়িত কপি এবং জেলা বা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের ১২ বছরের তল্লাশিসহ নির্দায় সনদ (এনইসি) লাগে। সরকার থেকে বরাদ্দ পাওয়া জমির ক্ষেত্রে মূল বরাদ্দপত্র এবং দখল হস্তান্তরপত্র দেখাতে হয়।
ফ্ল্যাট কেনার ঋণের জন্য অবশ্য কাগজপত্র কম লাগে। এ জন্য ফ্ল্যাট ক্রেতা ও ডেভেলপারের মধ্যে সম্পাদিত ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রির চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিতে হয়।
এ ছাড়া জমির মালিক ও ডেভেলপারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্র, অনুমোদিত নকশা ও অনুমোদনপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং ফ্ল্যাট কেনার রেজিস্ট্রি করা বায়না চুক্তিপত্রের মূল কপি ও বরাদ্দপত্র লাগবেই।