আসছে মাহে রমজান। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস। পবিত্র রমজান ঘিরে ঢাকার অধিকাংশ বাজারে সব ধরনের পণ্যের বাড়তি চাহিদা থাকলেও দাম খুব একটা বাড়েনি। অন্যদিকে বেড়েছে সব পণ্যের সরবরাহ। তবে আমদানিযোগ্য যেসব পণ্যের দাম বাড়ার অভিযোগ ছিল, সেগুলোরও দাম কমেছে। ফলে স্বস্তি প্রকাশ করছেন ভোক্তারা।
রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে চাল, চিনি, ডিম, তেল ও খেজুরে ভ্যাট ও শুল্ক কমিয়েছে সরকার। বিদেশ থেকে খেজুর আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ, চালে রেগুলেটরি ডিউটি ২০ শতাংশ, তেলে মূসক ৫ শতাংশ ও চিনিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), যার প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
একই চিত্র চট্টগ্রামের বাজারেও। আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, কর্ণফুলী কমপ্লেক্সসহ অন্তত পাঁচটি খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব পণ্যের দাম এখন নিম্নমুখী। দামে বড় ধরনের পরিবর্তনের সুযোগ নেই। সরবরাহ ঠিকঠাক হলে সয়াবিন তেলও নির্ধারিত মূল্যে এসে যাবে। তবে দোকানিদের বিরুদ্ধে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মগবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন করে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়েনি। প্রতি বছর রমজানের আগে ভোজ্যতেল সয়াবিন, খেজুর, ছোলা, বেসন, পেঁয়াজ, মুড়ি ও চিনির দাম বাড়ে। তবে এবার এসব নিত্যপণ্যের দাম বাড়েনি। গত বছরের তুলনায় দাম কমেছে অথবা দুই মাস আগের দামে রয়েছে।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, কিচেন মার্কেটে ভোজ্যতেল সয়াবিনের সরবরাহ অনেক বেড়েছে। তিন দিন আগেও সরবরাহে বেশ ঘাটতি ছিল। ভোক্তা অধিকারের ধারাবাহিক অভিযানে অর্থদণ্ড করায় বেড়েছে সয়াবিনের সরবরাহ। অন্যদিকে গায়ের মূল্যে বিক্রি হচ্ছে তেল। বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৭৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
অন্যদিকে খোলা সয়াবিন দুই লিটার ৩৩০ টাকা হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও সিটি গ্রুপের তেলের সরবরার চোখে পড়ে। তবে বসুন্ধরা, সেনাকল্যাণ ও এস আলম গ্রুপের সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। দাম বেড়েছে লেবুর। প্রতি হালির দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা। গত দুই মাসের তুলনায় প্রতিটির দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটে দেখা যায়, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের তীর মার্কা চিনি প্রতি কেজিতে ২০ টাকা কমে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের আজকের দিনে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। ছোলা প্রতি কেজিতে ২০ টাকা কমে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তার সঙ্গে কমেছে বেসনের (বুটের তৈরি) দাম। তবে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে স্থানবিশেষে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানে অতিপ্রয়োজানীয় পণ্য মুড়ি। নতুন করে দাম না বেড়ে প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে শসা ৫০ টাকা এবং বেগুনের কেজি ৬০ টাকা। ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়।
বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। কিচেন মার্কেটে গরুর মাংস ৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে চালের দাম বাড়েনি বলে জানিয়েছেন চাটখিল রাইস এজেন্সির মালিক বেলাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে যে দাম ছিল, তা-ই আছে। নতুন করে চালের দাম বাড়েনি।’
মগবাজারের আব্দুর রাজ্জাক স্টোরের মালিক মেহেদি হাসান বলেন, সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। তবে পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। চালের দাম আগের মতোই রয়েছে।
দেশের বাজারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয় খেজুর। প্রতি বছর এই সময়ে দাম বাড়লেও এবার বাড়েনি। রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরে ভ্যাট ও শুল্ক কমিয়েছে সরকার। এর মধ্যে খেজুরে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ, চালে রেগুলেটরি ডিউটি ২০ শতাংশ, তেলে মূসক ৫ শতাংশ এবং চিনিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), যার প্রভাবে কমতে শুরু করেছে মূল্যস্ফীতি।
রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখা প্রসঙ্গে এনবিআর সদস্য (ভ্যাট) আব্দুল আজিজ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার মধ্যে রেয়েছে তেল, চিনি, ডিম, চাল ও খেজুর। সরবরাহ বাড়লে এসব পণ্যের দাম কমবে।’
একই কথা বলেন এনবিআরের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (শুল্ক রপ্তানি, বন্ড ও আইটি)। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে চেষ্টা করছে। রমজানে যাতে মানুষের কোনো কষ্ট না হয়, সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের নির্দেশে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে, যার প্রভাব রমজানে পড়বে বলে জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :