নানা জল্পনাকল্পনা শেষে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গতকাল শুক্রবার ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
এরপর একে একে পাঠ করা হয় গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে। তারপর পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত। সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের সড়কে তৈরি মঞ্চ থেকে নতুন দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়। শহিদ মো. ইসমাইল হাসান রাব্বির বোন মীম আক্তার দলটির নাম ঘোষণা করেন।
মীম আক্তার বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে, গত ৫ আগস্ট দুই বোনের কাঁধে ভাইয়ের লাশ। সেই দুই বোনের মধ্যে আমি একজন। ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটে নাই। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলের নাম “জাতীয় নাগরিক পার্টি” ঘোষণা করছি।’
এ সময় তিনি আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব হিসেবে আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। এরপর আখতার হোসেন মঞ্চে উঠে নতুন এই রাজনৈতিক দলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন। আখতার জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব।
ডা. তাসনীম জারা ও নাহিদা সারোয়ার সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে নতুন দলের প্রধান সমন্বয়কারী, আবদুল হান্নান মাসউদকে যুগ্ম সমন্বয়ক, হাসনাত আবদুল্লাহকে মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল), সারজিস আলমকে মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) ও সালেহউদ্দিন সিফাতকে দপ্তর সম্পাদক পদে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলাম বলেন, হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় বঙ্গীয় বদ্বীপের জনগোষ্ঠী হিসেবে এক সমৃদ্ধ ও স্বকীয় সংস্কৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পত্তন ঘটে।
তবে শোষণ ও বৈষম্য থেকে এ দেশের গণমানুষের মুক্তি মেলেনি। ফলে দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণকে বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হয়েছে।
১৯৯০ সালে ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সামরিক স্বৈরাচারকে হটিয়েছে। তথাপি স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়েও আমরা গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারিনি; বরং বিগত ১৫ বছর দেশে একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে বেপরোয়া ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছে।
জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াই সূচনা করেছে। একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য।
আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা এবং তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে আমাদের রাজনীতির অগ্রাধিকার। এর মধ্য দিয়েই কেবল আমরা একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারব।
আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই, যেখানে সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান হবে না।
অর্থনীতিতে আমরা কৃষি-সেবা-উৎপাদন খাতের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে এমন একটি জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই, যেটি হবে স্বনির্ভর, আয়বৈষম্যহীন ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল। আমাদের অর্থনীতিতে সম্পদ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে পুঞ্জীভূত হবে না, বরং সম্পদের সুষম পুনর্বণ্টন হবে আমাদের অর্থনীতির মূলমন্ত্র।
আমরা বেসরকারি খাতের সিন্ডিকেট ও গোষ্ঠীস্বার্থ নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ভোক্তা ও জনস্বার্থ সংরক্ষণ করব। অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে এই অঞ্চলের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করব এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতে জোর দিয়ে উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি টেকসই ও আধুনিক অর্থনীতি গড়ে তুলব।
পরিশেষে, আমরা একটি ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের সংকল্প আবারও পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধেই বিজয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণেরও শপথ।
চলুন আমরা একসঙ্গে, হাতে হাত রেখে এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হবে; যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা, মানুষের অধিকারের সংগ্রামই হবে রাজনীতির অন্যতম লক্ষ্য; যেখানে সাম্য ও মানবিক মর্যাদা হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি। এখনই সময় নতুন স্বপ্ন দেখার, নতুন পথ চলার এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার!
এই নতুন বাংলাদেশ গড়ায় আমরা প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে শপথ করি। ঐক্যবদ্ধ হই। এবং আমাদের কাক্সিক্ষত সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাই। আমাদের দেশ, আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক অধরা কোনো স্বপ্ন নয়, এটি আমাদের প্রতিজ্ঞা! দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
আপনারা দোয়া করবেন, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আজকে যে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে, মহান রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের সেই দায়িত্ব পালনের তৌফিক দেন। তরুণেরা স্বপ্ন দেখে, আগামীর বাংলাদেশ নতুন এক সংবিধানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। সেই স্বপ্ন নিয়ে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা দেশকে আওয়ামী লীগের জাহেলিয়াত থেকে মুক্ত করে সংসদ ভবনকে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছি; সেই সংসদ ভবনের সামেন গণতান্ত্রিক পক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য আমরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দাঁড়িয়েছে।
দীর্ঘ দেড় দেশকের বেশি সময় ধরে আমাদের দেশে ছিল বিচারহীনতার রাজনীতি। আপনারা দেখেছেন, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহে কীভাবে ভারতীয় আগ্রাসনের মধ্যে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্পষ্ট বিডিআর হত্যাকে বিডিআর বিদ্রোহ বলে চালানো হয়েছে।
শাপলা চত্বরে আমাদের দাড়ি-টুপিওয়ালা ভাইদের ওপর রাতের অন্ধকারে কীভাবে গণহত্যা চালানো হয়েছে। দাড়ি-টুপিওয়ালা ভাইদের সামেন থেকে কীভাবে মাইক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কীভাবে দিনের ভোট রাতে চালু করার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। আমরা ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের এই দুঃশাসনের কবর রচনা করেছি।
এই গণভবনে কে যাবে, তা র্নিধারিত হবে বাংলাদেশ থেকে, ভারত থেকে নয়। এই সংসদে কে যাবে, তা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া জনতা। এই সংসদের মনসদে কে বসবে, তা নির্ধারণ করবে এই ভুখণ্ডের মানুষ। আমরা দীর্ঘ দশকের বেশি সময় ধরে একটি জাতি গড়ে তুলতে পারি নাই।
ইচ্ছা করে বিভাজনের রাজনীতি জিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা সুশাসন নিশ্চিত করতে পারি নাই। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো তারা ভেঙে দিয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানও যাথাযথভাবে ফাংশন করতে দেখি না। আমরা আপনাদের কথা দিচ্ছি, এই তরুণ প্রজন্ম ইনসিটিশনগুলো ফাংশনাল করবে।
এই বিভাগের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমরা একতার রাজনীতি বাংলাদেশে চালু করব। আমরা এই ভূখণ্ডের অধিকার আদায় করতে পারি নাই। বিদেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে। কিন্তু কোনো প্রেসক্রিপশনের সম্পর্ক থাকবে না। এ দেশে কামারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে, কুমারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে। এ দেশে যোগত্যার ভিত্তিতে নেতৃত্ব উঠে আসবে। আমরা সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই।
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর একাবিংশ শতাব্দীর নতুন আরও একটি অধ্যায় ২০২৪। জুলাই আন্দোলনে আমরা সব শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছি।
বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের, ধর্মের, বর্ণের, মতের মানুষর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা শুধু আপানাদের একটা কথা বলতে চাই, ৫ আগস্ট খুনি হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশ গঠনের যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম, সেই স্বপ্নপূরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করত হবে।
যেকোনো বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত থাকবে, যুক্তিতর্ক থাকবে, তবে দিন শেষে দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলকর সেই বিষয়ে সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি সম্মানবোধ থাকে, আগামীর বাংলাদেশ হবে অপ্রতিরোধ্য।
আমরা অনুরোধ করি, দেশে যত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তারা যেন নিজেদর দায়িত্ব বাদ দিয়ে তোষামোদির রাজনীতিতে লিপ্ত না হন। আমরা আশা করি, খুনি হাসিনা যে বাংলাদেশ পুলিশকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তারা তাদের কাজের মাধ্যমে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনে।
আইন, আদালত থেকে শুরু করে সরকারি যত অফিস রয়েছে, আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, জনগণের কাছে হাত পেতে ঘুষের টাকা নেবেন না। সামান্য স্বার্থের জন্য জনগণের সঙ্গে এই অন্যায় আপনারা করবেন না। খুনি হাসিনা রাষ্ট্রীয় এসব সংস্থা নিজ হাতে ধ্বংস করে দিয়েছে।
সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে সেই সব মানুষকে বসাতে হবে, যারা যোগ্য। কোনো ‘মাই ম্যান’কে বসানো যাবে না। এই খুনি হাসিনার বিচার আমদের ঐক্যবদ্ধভাবে করতে হবে। কোনো অপরাধীর জন্য যেন কেউ সুপারিশ না করি।
এই নতুন বাংলাদেশে ধ্বজভঙ্গ শিক্ষা কারিকুলাম আমাদের ঠিক করতে হবে। অনুরোধ করি, আগামীর যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি, সব রাজনৈতিক দলের ছোট ছোট স্বার্থ একপাশে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আমরা স্বপ্নের সেই স্থানে দেশকে নিয়ে যেতে পারব।
আজ আমরা শপথ করি, এই ছোট্ট জীবনে এত বড় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা রয়েছি, এগুলো আমানতস্বরূপ, এর খেয়ানত যেন না করি। কেন্দ্র থেকে গ্রাম পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হোক, কিন্তু পতিপক্ষ যেন না হয়ে যাই। আমিসহ সবাই যেন খুনি হাসিনাকে দেখে শিক্ষা গ্রহণ করি। আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে রাজপথে অথবা বিজয়ে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল্লাহ হায়দার বলেন, এই তরুণদের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ গত ৫৩ বছরে মানুষের যে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় নাই, সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, নাগরিক পার্টি মনে করে, শহিদ ও আহতদের স্পিরিট ধারণ করে কীভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু দেশের স্বার্থে আমরা এক থাকব।
রাজনৈতিক দল: নতুন এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি, লেবার পার্টি, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক ও বিদেশি অতিথিরাও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
বিএনপির নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির আহমেদ আলী কাসেমী, বিকল্পধারার নেতা মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমেদ, ইসলামী ঐক্য জোটের সহসভাপতি জসিম উদ্দিন, বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদেরসহ আরও অনেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর কামরান দাঙ্গাল ও ঢাকায় ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত।
জনমত জরিপের আলোকে দলের নাম নির্ধারণ: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির যাত্রা শুরু হয়।
এ দুই প্ল্যাটফর্মের যৌথ উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হচ্ছে। অবশ্য দল গঠনের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
নতুন দলের বিষয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শিরোনামে জনমত জরিপ শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। অনলাইনের পাশাপাশি জেলায় জেলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত (প্রশ্নোত্তর) সংগ্রহ করা হয়। জরিপে দুই লাখের বেশি মানুষ মতামত দিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :