আসন্ন রমজানে রাজধানীর জনসাধারণ যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে এবং পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে পারে, সে জন্য ঈদ পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। নগরবাসীকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে বাড়তি পুলিশ টহল, শপিং মল, স্বর্ণের মার্কেট এবং বাজারগুলোর জন্য পৃথক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ইফতারির পর থেকে তারাবি নামাজ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাঝুঁকিসংক্রান্ত পিকআওয়ার বিবেচনায় নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে ২৪ ঘণ্টা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রমজানে নগরবাসীর নিরাপত্তায় ২৪ ঘণ্টা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মার্কেটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিক নির্দেশনামূলক সভা করেছে ডিএমপি।
৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজধানীতে অপধারীরা যাতে নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পতিত আওয়ামী লীগ ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসররা যাতে অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
ইতিমধ্যে সারা দেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট চলমান ও চলতি সপ্তাহে রাজধানীতে অপ্রতিরোধ্য অপরাধ থামাতে কম্বাইন্ড পেট্রলিং পরিচালনা করছে। ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাং অপরাধীরা রমজানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিংয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে- জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিরসনে ইফতারের আগে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ওই সময় ট্রাফিক ও থানা পুলিশ যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
মাহে রমজান উপলক্ষে ছিনতাই, টানা পার্টি, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও জাল টাকার ব্যবসায়ীদের তৎপরতা ঠেকাতে স্পট চিহ্নিত করে তা রোধকল্পে পোশাকে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। মার্কেটকেন্দ্রিক ফোর্স মোতায়েন, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের প্রতি বিশেষ নজরদারি রাখা হবে।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পুলিশের সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম স্ট্যান্ডবাই রাখা, মাদকের স্পটসমূহে টহল এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং ও সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধী শনাক্তকরণ, গুজব প্রতিরোধে সাইবার পেট্রলিং অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর এলাকার ব্যাংক, বিপণিবিতান, শপিং মলসমূহের নিরাপত্তা, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে ডিএমপি। পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনী ডিএমপির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে।
এ ছাড়া সড়ক, রেল ও নৌযান চলাচলে নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী, ফুলবাড়িয়াভিত্তিক বিভিন্ন টার্মিনালে বাড়তি নজরদারি বাড়ানো হবে।
রাস্তার মোড়ে রিকশা, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা (সিএনজি) যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যানবাহনের গতি ব্যাহত করতে দেওয়া হবে না। প্রধান সড়কে হকাররা যেন কোনো অবস্থাতেই তাদের দোকান সাজিয়ে না বসে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।
টার্মিনাল, মার্কেট, বিপণিবিতানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুশৃঙ্খল করার জন্য ট্রাফিক কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা এবং প্রয়োজনীয় ওয়াচ টাওয়ার রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের বিরুদ্ধে ডিএমপির তত্ত্বাবধানে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভেজালবিরোধী অভিযান চালাবে ডিএমপি। রমজান মাস উপলক্ষে বড় ধরনের লেনদেনের জন্য মানি এস্কর্ট সহায়তা দেবে ডিএমপি।
অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট, দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে সমন্বয় সভা করে মার্কেটের নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে নজরদারি বৃদ্ধি করাসহ প্রশিক্ষণ ও তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি মার্কেট ও দোকানে বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সিঁড়িতে মালামাল রাখা বা দোকান বসানো থেকে বিরত থাকা এবং সংস্কার করা হয়েছে। জরুরি বহির্গমনের রাস্তা ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত নির্দেশক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপক মহড়ায় মালিক ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
বৈদ্যুতিক শর্ট সর্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে রমজানের আগেই বৈদ্যুতিক সংযোগ ও তার পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর দোকানে গাদাগাদি করে মালামাল না রেখে একাধিক গোডাউনে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট ও দোকান মালিক সমিতির মাধ্যমে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও দিনরাত ২৪ ঘণ্টা তা মনিটরিং নিশ্চিত করা হবে। সিসিটিভির ক্যামরা সচল আছে কি না তা যাচাই করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে জানান, রমজানে রাজধানীর নিরাপত্তা ঘিরে ইতিমধ্যে ডিএমপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মার্কেট ও বিপণিবিতানকেন্দ্রিক অপরাধ ঠেকাতে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। ছিনতাই ও জাল টাকা রুখতে সার্বক্ষণিক টহলের পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। নগরবাসী যাতে নির্বিঘ্নে রোজা পালন করতে পারেন, সে জন্য ডিএমপির ৩০ হাজারের বেশি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মুত্তাজুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে জানান, রমজানে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় র্যাব অতিরিক্ত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে। যানজট নিরসন ও ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘ্ন থাকতে পারে, সে জন্য ঢাকার সবকটি ব্যাটালিয়ন দিন-রাত সজাগ রয়েছে। বোম ডিস্পোজাল ও ডগস্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :