ঢাকা সোমবার, ০৩ মার্চ, ২০২৫

বিশ্ব ব্যাংকের ১৮৮২ কোটি টাকার প্রকল্পে হরিলুট!

মেহেদী হাসান খাজা
প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৫, ০৯:১৯ এএম
ছবি: রুপালী বাংলাদেশ

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্পে শতকোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০২১ সালের অক্টোবরে দেশের ৩০টি জেলায় পাইপলাইন স্থাপন, গভীর নলকূপ স্থাপন, ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কাজে ১৮৮২ কোটি টাকার এই প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপদ পানির সেবায় বিশ্ব ব্যাংকের সহায়কপুষ্ট এই প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক তবিবুর রহমান, জামালপুর এবং কুমিল্লা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে।  এ নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুদক।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া প্রথম দরদাতাকে কাজ না দিয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা পঞ্চম লোয়েস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ পাইয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে এই তিন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্প পরিচালক তবিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নেতা ছিলেন। সেই সুবাধে আওয়ামীপন্থি ঠিকাদারদের সঙ্গে সখ্য থাকায় তাদের বিশেষ সুবিধা দিতেন। ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতেন। কাজ না করে ঠিকাদারদের কোটি কোটি টাকার বিল প্রদান করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে পিডি তবিবুর রহমান ও আওয়ামী সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের প্রভাব বিস্তারের কারণে ডিপিএইচইতে কোনো কাজ করা যেত না। ফাস্ট লোয়েস্ট হয়েও কাজ পাওয়া যেত না। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম লোয়েস্টকে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশনে কাজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি করেছে। প্রকল্পে নিম্নমানের পাইপ ও ইউরোপিয়ান মোটর দেওয়ার কথা থাকলেও ইন্ডিয়ান নিম্নমানের মোটর দিয়ে বাড়তি টাকা লুটে খেয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগও উঠেছে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে। গোপালগঞ্জের মনির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রোপ্রাইটর মো. কামাল হোসেন ক্ষমতা প্রয়োগ করে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. সারোয়ার হোসেন ও পিডি তবিবুর রহমানকে ম্যানেজ করে শত শত কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দিয়ে পকেট ভারী করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখনো আওয়ামী সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের দখলে ডিপিএইচই- এমনটা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতাদের জিম্মায় এখনো এই অধিদপ্তর। তাহলে শত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে পরিবর্তন কী পেলাম! ৫ আগস্টের পরও তাদের টেন্ডার বাণিজ্য এখনো ঠিকই চলছে। পিডি তবিবুর রহমান দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে প্রকল্পের টাকা লুটপাট করে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। ‘ফাইভ পার্সেন্ট’ ছাড়া তিনি কাজের ওয়ার্ক ওর্ডার দেন না বলে ফাইভ পার্সেন্ট পিডি নামে পরিচিতি পাওয়া এই প্রকল্প পরিচালকের ধানমন্ডিতে রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের একাধিক ফ্ল্যাট। এছাড়া অনুসন্ধানে আরও পাওয়া যায়, ধানমন্ডি ৪/এ লেকের পাড় ক্রিডেন্স হাউজিং থেকে আড়াই হাজার স্কয়ার ফিটের ৫ কোটি টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট স্ত্রীর নামে কেনেন তিনি। রয়েছে নামে-বেনামে একাধিক নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি। ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে আসেন অফিসে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, পিডি তবিবুর রহমান ফেব্রুয়ারি মাসে হোন্ডা সিআরভি একটি গাড়ি নিয়ে অফিসে আসেন, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-৭৩৬৭। গাড়িটির দাম প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাড়িটি মহাখালী ডিএইচএস মোটরস থেকে কিনেছেন তিনি। গাড়ি রেজিস্ট্রেশনে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে NAVANA DEL EVANTHE, ফ্ল্যাট-৬৮, রোড-৯-এ, ধানমন্ডি আর/এ, ঢাকা। মালিকের নামের জায়গায় দিদার ই আলম নামে এক ব্যাক্তির নাম রয়েছে, যার ভোটার আইডি নম্বর ১৯২২৮৫২৫২৮। ফোন নম্বরের জায়গায় তবিবুর রহমানের ব্যবহৃত নম্বরটি রয়েছে।

টেন্ডার বাণিজ্যে অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) তবিবুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আর আওয়ামী লীগ তো যে কেউ করতে পারে। আমরা সব সরকারের লোক।

জামালপুর জেলায় দুর্নীতির অভিযোগ: অনুসন্ধানে জানা যায়, জামালপুর জেলায় মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্পে পুকুরচুরির মতো ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। অনিয়ম আর দুর্নীতির বরপুত্রখ্যাত জামালপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের অন্যতম নেতা মো. সুলতান মাহমুদ আছেন দুর্নীতির এক ধাপ এগিয়ে। নামে-বেনামে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। ২০২৪ সালের মে মাসে হারুন-অর-রশীদ নামে এক ঠিকাদার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. সারোয়ার হোসেন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ এনে তদন্তের দাবি জানান।

প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জামালপুর জেলায় মানব সম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্পে একটি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেন নির্বাহী প্রকৌশলী। দরপত্রটির ওই বছরের অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখ ইজিপি অনলাইনে ওপেনিং রিপোর্ট দাখিল করেন সুলতান মাহমুদ। সেখানে মাত্র দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে এবং প্রথম লোয়েস্ট শামিম ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা দরপত্র মূল্য ১৩ কোটি ৯৪ লাখ ২৭ হাজার ৫০১ টাকা এবং দ্বিতীয় লোয়েস্ট AWCL-GDL-MMC JV সর্বনিন্ম দরদাতার দাখিলকৃত মূল্য ১৬ কোাটি ৭১ লাখ ৫৯ হাজার ১২৮ টাকা। এখানে প্রথম লোয়েস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে দ্বিতীয় লোয়েস্ট পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি পাইয়ে দিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ।

 এ ছাড়া পুকুরচুরির মতো অভিযোগ রয়েছে সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে জামালপুর জেলায় এই প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা, যেখানে দেখা যায় সুলতান মাহমুদ অধিকাংশ কাজ প্রকল্পের বরাদ্দের চেয়ে ১০ শতাংশ রেটে ঠিকাদারদের পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। অনুসন্ধানে তেমন কিছু তথ্য আসে প্রতিবেদকের কাছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্যাকেজের টেন্ডার আইডির তথ্য পাওয়া গেছে, টেন্ডার আইডি-৮৪৭৬৪১ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৭৯ লাখ ৭১ হাজার ৫৪৭ টাকা। এখানে তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আগের রেটে ১০ শতাংশ কমিশনে ৮৭ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৯ টাকায় কাজ পাইয়ে দেন। টেন্ডার আইডি-৮৪৭৬৪০, প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৭৯ লাখ ৭১ হাজার ৫৫৭ টাকা, যা ১০ শতাংশ কমিশনে ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬ টাকা এবং টেন্ডার আইডি-৪৮৩৩৯৪ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ টাকা, যা ১০ শতাংশ কমিশনে ১ কোটি ১৯ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ টাকার রূপসা প্রকৌশলীসহ ১৫টি প্যাকেজের প্রতিটি কাজ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দিয়ে কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠে আসে প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে। 

জামালপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কাউকেই পরোয়া করতেন না তিনি। বুয়েট ছাত্রলীগ শাখার নেতা হওয়ায় মির্জা আজমের সঙ্গে সখ্য ছিল তার। আওয়ামী সরকারের আমলে ডিপিএইচইতে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি পান বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের এই নির্বাহী প্রকৌশলী।

২০২৪ সালের ২০ জুন সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মিজানুর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সুলতানের অনিয়ম, দুর্নীতি আর ক্ষমতা প্রয়োগ করে ডিপিএইচইতে ভীতি সৃষ্টি করা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত রিপোর্ট দেয়নি স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৭ নভেম্বর উপসচিব আশফিকুন নাহার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সুলতান মাহমুদের অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণের অভিযোগ যাচাইপূর্বক মতামত দিতে বলা হলেও দৃশ্যমান কিছু দেখা যায়নি। টাকার বিনিময়ে সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলেন তিনি এমন অভিযোগ করেন কেউ কেউ। সুলতান মাহমুদের ৩ কোটি টাকা দুর্নীতির বিষয়টি বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ড. মুহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও মন্ত্রণালয়ের ঝিমিয়ে চলা তদন্তে হতাশা প্রকাশ করেন কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগী ঠিকাদারেরা।

এ বিষয়ে যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করতে চাইলেও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। 

কুমিল্লা জেলায় দুর্নীতির অভিযোগ: এদিকে কুমিল্লা জেলায়ও মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবারহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্পে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের সময় তড়িগড়ি করে দেশের বেশ কিছু জেলায় টেন্ডার আহŸান করেন প্রকল্প পরিচালক তবিবুর রহমান। তার মধ্যে কুমিল্লা জেলা একটি। কুমিল্লা জেলায় টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে পুকুরচুরির মতো ঘটনা ধরা পড়ে, যার টেন্ডার আইডি-৯২১৩৯৭। যেখানে প্রথম লোয়েস্ট দারদাতা মেসার্স জিলানী ট্রেডার্স ২৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় লোয়েস্ট ম্যান নোয়াব ২৩ কোটি ৫১ লাখ ৪৫ হাজার ১২৭ টাকা এবং তৃতীয় লোয়েস্ট গোপালগঞ্জের মনির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন ২৫ কোটি  ৬৬ লক্ষ ৩৩ হাজার ৬৪১ টাকা।

এখানে নির্বাহী প্রকৌশলী মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে তৃতীয় লোয়েস্ট গোপালগঞ্জের ঠিকাদার কামাল হোসেন ও কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবুল কালাম আজাদকে কাজটি ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেশিতে দিতে প্রকল্প পরিচালকের কাছে সিএস পাঠান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনোয়ার ফাউন্ডেশনের চাহিদা মোতাবেক টার্নওভার নাই এবং পেমেন্ট সার্টিফিকেট বানিয়ে ইজিপিতে জমা দেয়। ভুয়া সনদের কাজটি এই সিন্ডিকেটটি প্রকল্প পরিচালক ও সাবেক চীফ ইঞ্জিনিয়ার মো. সারোয়ার হোসেনকে ম্যানেজ করে ভাগিয়ে নেয়। এতে সরকারের ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি করে নিজেদের পকেট ভারী করে এই সিন্ডিকেট। ওয়ার্কওর্ডার হওয়ার পরপরই কাজ না করেই ৩ কোটি ১০ লাখ টাকার বিল দিয়ে দেন নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মিলে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ সাবেক এলজিইডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সমন্বয়কারী ছিলেন। মন্ত্রীর পার্সোনাল বিষয় দেখাশুনা করতেন এবং মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় অনিয়ম করে কাজ ভাগিয়ে নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।  এখনো ডিপিএইচইতে রয়েছে তার অদৃশ্য প্রভাব। প্রকল্প পরিচালকেরা তাকে বাড়তি সুবিধা দিয়ে সুবিধাও ভোগ করার অভিযোগ ওঠে বঞ্চিত ঠিকাদারদের কাছ থেকে। নির্বাহী প্রকৌশলী নাসরুল্লা কুমিল্লা জেলায় আওয়ামী সরকারের আমলে নানা রকম অনিয়ম আর দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নামে-বেনামে গড়েছেন অর্থসম্পদ, গাড়ি ও বাড়ি। সাবেক এলজিডি মন্ত্রীর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এই কর্মকর্তা। তাকে প্রতি কাজের পার্সেন্টেস পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করতেন এই কর্মকর্তা। সাবেক মন্ত্রীর উন্নয়ন সমন্বয়কারী কামাল হোসেন ও আবুল কালাম আজাদের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থাকায় অনিয়ম আর দুর্নীতি করে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে এই সিন্ডিকেট। নাসরুল্লার অনিয়ম আর দুর্নীতির বিষয় কুমিল্লায় দুদকের অনুসন্ধান এখনো চলমান রয়েছে।

এদিকে প্রকল্প পরিচালক তবিবুর রহমানের অনিয়ম আর দুনীতির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেত্বত্বে একটি টিম এসব বিষয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, দুদক অনুসন্ধানে নেমেছে। অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক কর্মকর্তা জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রকল্পের টাকা লুটে খাচ্ছেন প্রকৌশলীরা।

শোনা যাচ্ছে, আওয়ামী সরকারের আমলে এখান থেকে ১ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রকল্পে হরিলুট হয়েছে। সবকিছু আমলে নিয়েই দুদক তদন্ত করছে বলে জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।