ঢাকা সোমবার, ০৩ মার্চ, ২০২৫

পানগাঁও-আইসিটি

আয় বাড়াতে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রত্যাহার

হাসান আরিফ
প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৫, ১১:১৬ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী জাহাজ সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়াই চলাচল করতে পারবে। এমনকি এই রুটে মালবাহী ভাড়া এখন থেকে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও জাহাজ মালিক এবং মূল লাইন অপারেটরদের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। এখানেও সরকারের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ থাকবে না। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন সভায়, স্টেকহোল্ডাররা পানগাঁও-আইসিটির পূর্ণাঙ্গ পরিচালনার সুবিধার্থে চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটে মালবাহী ভাড়া উদারীকরণের আহ্বান জানিয়েছেন। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, সরকার ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর জারি করা মালবাহী ভাড়া সার্কুলারটি প্রত্যাহার করেছে। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, এই সিদ্ধান্ত এই রুটে জাহাজের মাধ্যমে কন্টেইনার পরিবহন বৃদ্ধি করবে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটের মধ্যে চলাচলকারী এফবিআর জাহাজের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি সিপিএ কর্তৃক জারি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী সব আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, মূল লাইন অপারেটর এবং জাহাজ মালিকদের এই নির্দেশিকা মেনে চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়াও, এটি লক্ষ্যণীয় যে, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে, বাংলাদেশ রেল, কিছুদিন ধরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকোমোটিভ সরবরাহ করতে অক্ষম। ফলস্বরূপ, চট্টগ্রাম বন্দরে ঢাকা আইসিডির জন্য নির্ধারিত কন্টেইনারের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৭০০ টিইইউ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্বাভাবিক ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি। এর ফলে ঢাকাভিত্তিক আমদানিকারকদের তাদের আমদানিকৃত পণ্য গ্রহণে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব হয়েছে।

এই সমস্যা কমাতে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি সার্কুলার জারি করেছে, যার মাধ্যমে ঢাকা আইসিডির জন্য মনোনীত কন্টেইনারগুলোকে আগামী দুই বছরের জন্য কিছু শর্তে পানগাঁওতে ছাড়পত্রের জন্য পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেসব আমদানিকারকের কন্টেইনার দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকা আইসিডিতে রেল পরিবহনের অপেক্ষায় রয়েছে, তারা এখন বিলম্ব না করে পানগাঁও দিয়ে তাদের পণ্য খালাস করতে পারবেন। এই বিকল্পটি আমদানিকারকদের সময় এবং খরচ উভয়ই সাশ্রয় করবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহনে নৌপথ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। মূলত রেলপথের তুলনায় অধিক ভাড়া ব্যবসায়ীদের পরিবেশবান্ধব এ পথ ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলতে পারছে না। ফলে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে নির্মিত কনটেইনার টার্মিনালটির সক্ষমতার বড় অংশই এখনো অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা কনটেইনারবাহী পণ্যের ৭০ শতাংশের গন্তব্যস্থল ঢাকা ও এর আশপাশের অঞ্চল, যার বড় অংশই পরিবাহিত হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্যবহার করে। চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে থাকা পানগাঁও আইসিটিতে পণ্য পরিবহন না হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল ২০২২ সালে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা জাহাজ ভাড়া নির্ধারণসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি।

এ ক্ষেত্রে বন্দরের যুক্তি নৌ-রুটটিতে ফিক্সড জাহাজ ভাড়া রেলওয়ের ভাড়ার তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের সাড়া মিলছে না। রেলযোগে কমলাপুর আইসিডিতে কনটেইনার পরিবহনের যে ভাড়া তার তুলনায় নৌপথে পানগাঁওয়ের ভাড়া বেশি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা দ্বিগুণ বা তিন গুণ। 

এতে টার্মিনালটির রাজস্ব আয়েও ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এছাড়া শুল্ক জটিলতার কারণে আমদানি পণ্য খালাসে বিড়ম্বনা এবং শিপিং এজেন্টদের বেশির ভাগই পণ্য আমদানি-রপ্তানি ক্ষেত্রে রাউটিং নেটওয়ার্কে পণ্য ডেলিভারির জন্য পানগাঁও আইসিটিকে ডেস্টিনেশন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করাও অন্যতম কারণ।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, পানগাঁও টার্মিনালে বছরে এক লাখের বেশি কনটেইনার ওঠানামা করার সক্ষমতা রয়েছে। ২০২৪ সালে ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) মাত্র ১৭টি জাহাজ গেছে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালে। আর কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ হাজার ১৫০ একক। অথচ ২০২৩ সালের একই সময়ে পানগাঁও আইসিটিতে ১৪২টি জাহাজ ভিড়েছিল। তখন ১০ মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৮ হাজার ৪৪৪ একক। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে ৯২ শতাংশ।

জানা গেছে, জাপান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী কনটেইনার আনতে ১ হাজার ২০০ ডলার ব্যয় হয়। অথচ চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁও টার্মিনালে কনটেইনার আনতে হাজার ডলারের প্রয়োজন হয়।