রূপালী বাংলাদেশ অনুসন্ধান

প্রাইজবন্ডে ভয়ঙ্কর জালিয়াতি

রহিম শেখ

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ০৮:১৯ এএম

প্রাইজবন্ডে ভয়ঙ্কর জালিয়াতি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে সঞ্চয়প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৭৪ সালে সঞ্চয় কর্মসূচি চালু করে তৎকালীন সরকার। এই সঞ্চয় কর্মসূচির নাম ‘বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড’। 

সমাজের একটি অংশ যারা ভাগ্যে বিশ্বাস করেন তারা ১০০ টাকা মূল্যমানের এই প্রাইজবন্ড কিনে থাকেন। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, যারা এই প্রাইজবন্ড কিনেন তাদের একটা অংশেরই শুধু ভাগ্য শুধু বদল হয়। 

এমনই একজন রাজধানীর রামপুরা এলাকার বাসিন্দা নাসরিন জাহান। পেশায় একজন গৃহিণী। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছিলেন ১০০ টাকা মূল্যমানের জাতীয় প্রাইজবন্ডের লটারিতে পাওয়া পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে। টানা তিনটি লটারিতে ১০টি পুরস্কার বিজয়ী তার পরিবারের চার সদস্য। 

গত বছরের ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত ১১৬তম ড্র বা লটারিতে তৃতীয় পুরস্কার পাওয়া প্রাইজবন্ডের নাম্বার গঝ-০১৬৮০১৮। এই পুরস্কার দাবি করেছেন নাসরিন। 

গত বছরের ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ১১৭তম ড্রয়ে আটটি পুরস্কারেরও দাবিদার নাসরিন। নিজের নামে দাবি করা পাঁচটি পুরস্কারের মধ্যে একটি দ্বিতীয় (৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা), একটি তৃতীয় (১ লাখ টাকা) এবং আর তিনটি চতুর্থ পুরস্কার (৫০ হাজার টাকা)। 

ছেলের নামে তিনটির মধ্যে একটি তৃতীয় এবং দুটি চতুর্থ পুরস্কার। এর আগেও তারা অনেক পুরস্কার নিয়েছেন। অথচ লাখ লাখ টাকার প্রাইজবন্ড কিনে কখনো একটিও পুরস্কার পাননি এমন লোক হাজার হাজার। বিস্ময়কর এমন লটারিভাগ্যের পরিবারের তথ্য পেয়ে অনুসন্ধানে নামে রূপালী বাংলাদেশ। 

টানা দুই মাস অনুসন্ধান শেষে নিশ্চিত হওয়া যায় লটারি বেচাকেনায় ভয়ঙ্কর জালিয়াতি হয়েছে। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে যারা অবৈধ টাকা উপার্জন করেন, তাদের একটি অংশ লটারিতে জেতা প্রাইজবন্ড কিনছেন। 

নিজের নামে অথবা স্ত্রী-সন্তানের নামে লটারিতে পাওয়া অর্থ হিসেবে আয়কর ফাইলে দেখাচ্ছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একটি বিজয়ী প্রাইজবন্ড কয়েকদফায় হাতবদল হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে দেখা যায়, গত আওয়ামী লীগ সরকারের অন্তত ৩২ জন সংসদ সদস্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন তারা সবাই প্রাইজবন্ড থেকে আয় দেখিয়েছেন।

জানা যায়, প্রাইজবন্ড মূলত জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের একটি আর্থিক পণ্য। তবে এর সবকিছু দেখভাল করে বাংলাদেশ ব্যাংক।  বছরে চারবার ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সম্মেলন কক্ষে ঘটা করে এর ড্র অনুষ্ঠিত হয়। 

প্রাইজবন্ডে প্রতি সিরিজের জন্য ৪৬টি পুরস্কার রয়েছে, যার মূল্যমান ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রথম পুরস্কার একটি ৬ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার একটি ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার দুটি ১ লাখ টাকা করে, চতুর্থ পুরস্কার দুটি ৫০ হাজার টাকা করে এবং পঞ্চম পুরস্কার ৪০টি ১০ হাজার টাকা করে। 

অর্থাৎ বছরে প্রদত্ত পুরস্কারের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রতিবছরের ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই এবং ৩১ অক্টোবর প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে প্রতিবছর জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর মোট ১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা মূল্যের ৩ হাজার ৮২টি পুরস্কার ঘোষণা করে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন ওঠে প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের টাকা পায় কয়জন?

প্রাইজবন্ড বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে প্রক্রিয়ায় ড্র অনুষ্ঠিত হয়, একজন বারবার অনেক পুরস্কার পাওয়া অস্বাভাবিক। এভাবে পুরস্কার পাওয়ার জন্য অন্তত কয়েক কোটি টাকার প্রাইজবন্ড কিনে রাখতে হবে। 

যদিও মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, একই ব্যক্তির নামে অনেক প্রাইজবন্ডের দাবি জমা হচ্ছে। তবে প্রাইজবন্ডের পুরস্কার দেওয়ার বিদ্যমান ব্যবস্থায় এ বিষয়ে কিছু বলা না থাকায় তারা পুরস্কারের অর্থ দিয়ে দেন। 

তারা জানান, এমন অনেক ঘটনা তারা শুনেছেন- প্রাইজবন্ডে কেউ হয়তো ৬ লাখ টাকার প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন। কর কাটার পর তিনি পাবেন ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। 

এ জন্য তাকে প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। অথচ ওই চক্র তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ বা আরও বেশি টাকায় কিনে নিচ্ছে। এরপর আবার অন্যদের কাছে তারা বিক্রি করছে। যিনি কিনছেন তিনি নিজের আয়কর নথিতে দেখান যে, প্রাইজবন্ডের পুরস্কার থেকে ওই আয় এসেছে। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় আরেকজনের পুরস্কার কেউ কিনে নিজের নামে চালিয়ে দিলে ধরার উপায় থাকে না। 

তবে সময়ের পরিবর্তনে এখন যদি প্রাইজবন্ড বিক্রি ও পুরস্কার প্রদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা ভেবে দেখবে। এ ছাড়া এসব জালিয়াতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের নিচতলায় তিনজন নারীকে দেখা গেল এক ব্যক্তির কাছ থেকে বেশকিছু ছেড়া-ফাঁটা নোট নিতে। বিনিময়ে কিছু টাকা দিলেন ওই ব্যক্তি। 

কিছুক্ষণ পর ওই নারী সদস্যদের দেখা গেল তারা প্রাইজবন্ড বিক্রির কাউন্টারে গিয়ে আবেদন ফরম চাইছেন। ফরম নিয়ে আবার ওই ব্যক্তির কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললেন। 

তারপর বেশকিছু প্রাইজবন্ড দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। খুব অল্পসময়ের মধ্যে ওই নারী সদস্যদের পরিচয় পাওয়া না গেলেও ওই ব্যক্তির পরিচায় পাওয়া যায়। তার নাম মাইনুল ইসলাম। সারা বছরই বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখার নিচতলায় ছেড়া-ফাঁটা নোট বিনিময়ের ব্যবসা করেন। 

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে যারা নতুন নোট বিক্রি করেন তাদের কাছে সরবরাহ করেন। মোটাদাগে এই পরিচয়ে সবার কাছেই পরিচিত মাইনুল। কিন্তু এর বাইরে প্রাইজবন্ড বিক্রির হাতবদলের নেটওয়ার্ক রয়েছে তার। 

যেসব প্রাইজবন্ড ড্রতে বিজয়ী হয় সেইসব প্রাইজবন্ড নগদ টাকায় কিনে নেয় মাইনুল চক্র। এরপর কয়েক দফায় হাতবদল হয়ে পৌঁছে যায় ভিআইপিদের কাছে। 

সেই প্রাইজবন্ড আবার ফেরত আসে বাংলাদেশ ব্যাংকে। এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যায় মাইনুল।

রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের ভেতরে প্রকাশ্যেই চলে এই বেচাকেনা। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আব্দুল হামিদ। 

১০০ টাকা মূল্যমানের জাতীয় প্রাইজবন্ডের একটি দাবিদার উল্লেখ করে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে আবেদন জমা দিতে এসে জানতে পারেন পুরস্কারের টাকা পাবেন তিন মাস পর। তাই পাশে থাকা এক দালালের কাছে নগদ টাকায় বিক্রি করে দেন প্রাইজবন্ডটি। 

আব্দুল হামিদ রূপালী বাংলাদেশকে জানান, তিন মাস পর টাকা নিতে আসাও আরেকটা ঝামেলা। তারওপর ২০ শতাশ কর কেটে নিবে। তাই আমি নগদে বিক্রি করে দিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের নিচ তলায় কথা হয় ফরিদ হোসেন নামে এক বক্তির সঙ্গে। যিনি দীঘদিন ধরে প্রাইজবন্ড বেচাকেনা করেন। 

ফরিদ রূপালী বাংলাদেশকে জানান, সর্বশেষ ১১৮তম প্রাইজবন্ড ড্রয়ের মাধমে ৩ হাজার ৭২৬টি পুরস্কার দেওয়া হয়। এরমধে প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা পেয়েছেন ৮১ জন বক্তি। 

যাদের অনেকেই তিন মাস অপেক্ষা করে টাকা নিতে চাননা। এছাড়া কর কেটে নিলে টাকার পরিমাণও কমে যায়। তাই তারা একটু কম দামে আমাদের কাছে বিক্রি করে দেন। 

গত জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ৭০টির মতো প্রাইজবন্ড বিক্রি করেছি। কারা নিয়েছেন এসব প্রাইজবন্ড জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব নেওয়ার জন্য ভিআইপিদের সিরিয়াল দেওয়া আছে। এর চেয়ে বেশিকিছু বলা যাবে না।

ঘটনার সততা যাচাই করতে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে রূপালী বাংলাদেশ। 

২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত আওয়ামী লীগ সরকারের মনোনীত ৩২ জন প্রার্থী যারা অন্যের পাওয়া প্রাইজবন্ড কিনে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শন করেছেন। মোটাদাগে প্রাইজবন্ড বাবদ বিপুল পরিমাণ আয় দেখিয়েছেন তাদের নির্বাচনি হলফনামায়। 

এর মধ্যে গত জাতীয় নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গীবাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। ২০২৩ সালের হলফনামায় তিনি ৩৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড বাবদ আয় উল্লেখ করেছেন। 

কিন্তু ২০০৮ সালের হলফনামায় প্রাইজবন্ড বাবদ তথ্য ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাইজবন্ড বিক্রি করা চক্রের অন্যতম এক সদস্য দিদার রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ২০২২ সালে মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা নাসির হোসেন নামে এক বক্তি আমার কাছ থেকে বেশকিছু প্রাইজবন্ড কিনেছেন। 

পরে জানতে পারি ওই লোক এমপির পিএস। এছাড়া ফেনীর এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর পিএস মোহাম্মদ ফরিদ লোক পাঠিয়ে প্রাইজবন্ড নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

 হলফনামা পর্যালোচনা করে আরও যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের গোলাম দস্তগীর গাজী, পঞ্চগড়-১ আসনের মো. মজাহারুল হক প্রধান, নওগাঁ-১ আসনের সাধন সাধন চন্দ্র মজুমদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের আনিসুল হক, রাজশাহী-১ আসনের ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক, রাজশাহী-৬ আসনের শাহরিয়ার আলম, চট্টগ্রাম-১২ আসনের সামশুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা-৬ আসনের আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের আবদুল মমিন মণ্ডল, কুমিল্লা-৮ আসনের আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, গাইবান্ধা-৫ আসনের মাহমুদ হাসান, ঢাকা-৬ আসনের মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, কুমিল্লা-৩ আসনের ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের মো. জাকির হোসেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের মাহমুদ হাসান, যশোর-৩ আসনের কাজী নাবিল আহমেদ, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের জান্নাত আরা হেনরী, ঝিনাইদহ-৪ আসনের আনোয়ারুল আজীম আনার, রাজবাড়ী-২ আসনের জিল্লুল হাকিম, মাদারীপুর-২ আসনের শাজাহান খান, মেহেরপুর-২ আসনের মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন, চট্টগ্রাম-১৬ আসনের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, কুমিল্লা-১০ আসনের আওয়ামী আ হ ম মুস্তফা কামাল, মৌলভীবাজার-৪ আসনের মো. আব্দুস শহীদ, হবিগঞ্জ-৩ আসনের মো. আবু জাহির ও বরিশাল-১ আসনের আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বক্তব্য নেওয়ার জন্য সবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে রূপালী বাংলাদেশ। কিন্তু কারও নাম্বারই সচল পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে কারো নাম্বারে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অন্যের পাওয়া প্রাইজবন্ড কিনে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শনের বিষয়টি এখনো কেন বন্ধ হয়নি কিংবা কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এটি আশ্চর্যের বিষয়। 

প্রথমত, এখন থেকেই বিক্রি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে যখন যিনি যে প্রাইজবন্ড কিনবেন, সঞ্চয়পত্রের মতো তার নামেই রেজিস্ট্রি থাকবে। তখন এভাবে একজনের পুরস্কার আরেকজন কিনে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শনের সুযোগ থাকবে না। এ ছাড়া যারা পুরস্কার পাওয়াদের থেকে প্রাইজবন্ড কিনছে এবং তাদের থেকে যারা কিনছে, উভয় চক্রকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

ফেসবুকে গ্রুপ খুলে প্রাইজবন্ড বিক্রি: প্রাইজবন্ড বাংলাদেশ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে প্রচার চলছে ‘জোড়া বন্ড বিক্রি করা হবে, আগ্রহীরা ইনবক্স করতে পারেন’। 

মোক্তার হোসেন নামে একজন গ্রুপে লিখেছেন কিছু প্রাইজবন্ড হাতবদল করব। ১৬০০ পিস। ঠিকানা-আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ০১৬২২২০৯০২৯ এই নাম্বার। কমেন্ট বক্সে আব্দুল আহাদ নামে একজন বলছেন, ‘ইনবক্স করছি দেখেন’। 

অনলাইনে প্রাইজবন্ড বেচাকেনার জন্য এই গ্রুপে এমন অর্ধশতাধিক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। মানুষের হাতের কাছেই ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাইজবন্ড থাকলেও পোস্ট দিয়ে প্রাইজবন্ড বিক্রির কারণ খুঁজতে গিয়ে চমকপ্রদ তথ্য মিলেছে। 

প্রাইজবন্ড বাংলাদেশ নামে ওই গ্রুপে আফজাল শরীফ নামে এক ব্যক্তির পোস্ট দেখে ক্রেতা সেজে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে রূপালী বাংলাদেশ। শরীফ জানান, তার কাছে জোড়া বন্ড আছে। ১৬০ পিসের মতো জোড়া বন্ড দিতে পারবেন বলে তিনি জানান। 

জোড়া বন্ডের বিষয়টা আসলে কি জানতে চাইলে শরীফ বলেন, ব্যাংক থেকে প্রাইজবন্ড নিলে ড্রতে পাবেন কি-না কোনো গ্যারান্টি নেই। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে জোড় বন্ড নিলে কনফার্ম ড্রতে লাগবে। 

বিষয়টি জানতে আরও কয়েকটি গ্রুপের এমন প্রচার যাচাই করে সত্যতা পাওয়া যায়। মূলত বিভিন্ন সিরিজের একই নাম্বারের প্রাইজবন্ডকে জোড়া প্রাইজবন্ড বলে। যেমন-কঞ০২০৪৭২০, কল০২০৪৭২০, খন০২০৪৭২০, গপ০২০৪৭২০ এবং ঘগ০২০৪৭২০। অর্থাৎ প্রতিটি প্রাইজবন্ডের নাম্বার একই, তবে সিরিজ আলাদা।

অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে দুই দফায় চিঠি দেয় দুদক : প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের পেছনে একটি অসাধু চক্র কাজ করছে বলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত ওই সময়কার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর একটি চিঠি দিয়েছিলেন। 

ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, প্রায়ই দেখা যায়, প্রাইজবন্ডের লটারিতে পুরস্কার বিজয়ী ব্যক্তি নিজে পুরস্কারের অর্থ গ্রহণ না করে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন।

 এভাবে ওই ব্যক্তি অবৈধ অর্থ বৈধ করার সুযোগ পেয়ে যান। এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা দরকার। এরপর ২০২২ সালেও একই ধরনের চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর। 

জানতে চাইলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর-এর মহাপরিচালক জাকিয়া খানম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এসব বিষয়ে আমার জানা নেই। কোনো ধরনের অভিযোগও কেউ করেনি। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!