কাঁচাবাজারের মৌসুমি পণ্যে গ্রাহক স্বস্তি প্রকাশ করলেও পবিত্র মাহে রমজানে ইফতারি পণ্যের দাম বেড়েছে। রমজানে চাহিদার শীর্ষে থাকা কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেক বিক্রেতা।
বিদেশি ফলের চড়া দামের সুযোগে বেড়েছে দেশি ফলের দামও। একই সঙ্গে ঢাকার অধিকাংশ দোকানে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমায় তীব্র ভোগান্তির শিকার হয়েছেন গ্রাহকরা।
রমজানে ভোগ্যপণ্য হিসেবে সয়াবিন তেলের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। গ্রাহক চাহিদার শীর্ষে থাকায় ‘মার্কেট আউট’ বলে জানিয়েছেন অনেক গ্রাহক।
তারা জানিয়েছেন, রমজান আসার আগে থেকে দোকানে সরবরাহ কমেছে। যার কারণে ১৭৬ টাকা লিটার হলেও ২০০ টাকা বা স্থানবিশেষে বেশি দামে কিনছেন গ্রাহক। তবে শিগগিরই সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
এদিকে দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে গতকাল বিশেষ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের রমজানের সময়ের তুলনায় এবার সব ধরনের চালের দাম ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
ভোজ্যতেলের দামও ১১-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে গত রমজানের তুলনায় এবার আটা, ময়দা, চিনি, আলু, টমেটো, আদা ও পেঁয়াজের দাম কমেছে।
ঢাকার কারওয়ান বাজার গতকাল ঘুরে দেখা গেছে, রমজানের আগে ঢাকার বাজারে এক হালি লেবু আকারভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকায় কেনা যেত।
কারওয়ান বাজারে গতকাল সোমবার তা ৬০ টাকা হালিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। লেবুর মতো দাম বেড়েছে শসা, লম্বা বেগুন এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের ফলের। সব মিলিয়ে ইফতারসামগ্রীর দাম চড়া, যা সাধারণ মানুষের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তারা।
অপরদিকে আগামী দুই দিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
গতকাল সোমবার মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজার পরিদর্শন শেষে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এ কথা বলেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সয়াবিন তেলের সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নেই। সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা কম আছে।
এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। আশা করছি আজ (গতকাল) থেকেই সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সয়াবিন তেল বেশি দামে যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনি পামওয়েল তেল সরকার নির্ধারিত দামের থেকে ২৫ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
আমাদের মোট ভোজ্যতেলের ষাট শতাংশ পামওয়েল। বাজারে তেলের দাম একই সঙ্গে কমেছে এবং বেড়েছে। আশা করছি, সয়াবিন তেলের দামও কমে আসবে।
একই সঙ্গে মৌসুমি ফল তরমুজের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হতে দেখা যায়।
কৃষকের কাছ থেকে মণ দরে কেনা হলেও তা কারওয়ানবাজারের আড়তেও কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে ৮ কেজি পরিমাপের বড় সাইজের তরমুজ একশটি ৩০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে আড়ৎদারের কর্মচারীরা।
এই সময়ে ডাবের মূল্য আকাশছোঁয়া। বড় আকারে একটি ডাবের দাম ২০০ টাকার বেশি। ছোট সাইজের ডাব ৮০ টাকার নিচে নয় বলে জানিয়েছেন কারওয়ানবাজারের আড়তদাররা।
ডাবের মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে কারওয়ান বাজারে নোয়াখালী বাণিজ্যালয়ের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ডাবের এই সময়ে উৎপাদন কমে। তা ছাড়া ডাব আমদানিযোগ্য পণ্য নয়।
নোয়াখালী, বরিশাল ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চল থেকে এসব আনা হয়।’ তিনি বলেন, “ঘাটেই একশ ‘মাথি’র ডাবের দাম ১৫-১৮ হাজার টাকা। ভাড়াসহ অন্যান্য আড়তে আনতে খরচ মিলে ২২ হাজার পড়ে।”
দাম বেড়েছে যেসব পণ্যের: প্রতিবছরই রোজায় বেগুনের দাম বাড়ে। এবারও বেড়েছে। গত তিন দিনে খুচরা পর্যায়ে লম্বা বেগুনের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এবার অবশ্য বেগুন ‘শতক’ হাঁকায়নি।
শসার দামও কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে।
গতকাল এক কেজি দেশি শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
আর হাইব্রিড শসা কেনা গেছে ৫০-৬০ টাকা দরে। তবে কাঁচা মরিচের দাম কম। কেজি ৫০-৬০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক দিন পরই বেগুন ও শসার দাম কমে যাবে। প্রতিবছরই রোজার প্রথম কয়েক দিন দাম বেশি থাকে, পরে কমে যায়।
বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দাম। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে। ২১০-২২০ টাকা দরে। আর কেজিতে ৩০ টাকার মতো বেড়ে দেশি গরুর মাংস ৭৮০ টাকার আশপাশের দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
মাছের দামও বেড়েছে। খাল, বিল, নদী-নালার মাছ বেলে, পোয়া, বোয়াল, আইড়, শোল ইত্যাদি ৫০০ টাকা কেজির নিচে পাওয়া কঠিন। তাজা ও আকারে বড় হলে দাম হাঁকা হয় ৭০০-৮০০ টাকা।
এবার মুড়ির দাম বাড়েনি। সাধারণ মানের মুড়ি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর হাতে ভাজা মুড়ির দাম রাখা হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
সরকার এবার ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুরসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যে শুল্ক ছাড় দেয়। এর সুফল পাওয়া যায় চিনি ও খেজুরের বাজারে। তবে সয়াবিন তেলে সুফল পাওয়া যায়নি।
বিদেশি ফলের দাম চড়া: বিদেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের ফলের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত তিন-চার দিনের মধ্যে প্রায় সব ধরনের ফলের দাম কেজিতে ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
গতকাল বাজারে এখন এক কেজি মাল্টা বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩২০ টাকায়, যা তিন দিন আগেও ২৭০-৩০০ টাকায় কেনা যেত। এভাবে কমলা, আপেল, আঙুর, আনারের মতো বিদেশি ফলের দাম কেজিতে ২০-৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বিদেশি ফলের চড়া দামের সুযোগে বেড়েছে দেশি ফলের দামও। যেমন পেয়ারা। ফলটি ১০০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগেও এটি ৭০-১০০ টাকায় কেনা যেত। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির কলা, বরই, পাকা পেঁপে ও আনারসের দামও কমবেশি বেড়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :