জুলাই যোদ্ধারা পাবেন অনুদান ঋণ, কর্মসংস্থান ও চিকিৎসা

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ০১:০২ এএম

জুলাই যোদ্ধারা পাবেন অনুদান ঋণ, কর্মসংস্থান ও চিকিৎসা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান। ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ হারান অসংখ্য ছাত্র-জনতা। আবার আহত হয়ে অনেকেই এখনো কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে-হাসপাতালে। 

ছাত্র-জনতার এই রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশে রচিত হয়েছে নতুন অধ্যায়। তাই তাদের এই ত্যাগের মূল্যায়ন করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর নামে নতুন একটি অধিদপ্তর গঠন করে অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসন, প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ প্রধান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। 

এ ছাড়াও ৫ আগস্টকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালনের পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি ইতিহাস সংরক্ষণ ও গবেষণা কাজও করবে এই অধিদপ্তর।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া থেকে জানা যায় এসব তথ্য। অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর জনমতামত নেওয়া শেষে আইনটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে সংসদ না থাকায় রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতাবলে এই অধিদপ্তরটি গঠন করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ, শহিদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ, আহতদের চিকিৎসা এবং তাদের পরিবারকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

 বর্তমানের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জুলাই অভ্যুত্থানের হতাহতদের তালিকাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করছে। তবে অধিদপ্তরটি গঠন করা হলে সব কাজ অধিদপ্তরই করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

গণঅভ্যুত্থানে হতাহতরা যে সুবিধা পাবেন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ন্যূনতম এক চোখ/হাত/পা ক্ষতিগ্রস্ত ও স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের অনুপযোগী, সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন, সম্পূর্ণভাবে মানসিক বিকারগ্রস্ত এবং কাজ করতে অক্ষম বা অনুরূপ আহত ব্যক্তি অর্থাৎ যাদের আজীবন সাহায্যের আওতায় আনা হবে তাদের ‘অতি গুরুতর আহত’ উল্লেখ করে ‘এ’ ক্যাটাগরি, আংশিক দৃষ্টিহীন, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বা অনুরূপ আহত ব্যক্তি অর্থাৎ যাদের দীর্ঘদিন সাহায্য দেওয়া হবে তাদের ‘গুরুতর আহত’ উল্লেখ করে ‘বি’ ক্যাটাগরি এবং শ্রবণশক্তি/দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত, গুলিতে আহত বা অনুরূপ আহত ব্যক্তি অর্থাৎ যারা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম হবেন এবং ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন তাদের ‘আহত’ উল্লেখ করে ‘সি’ ক্যাটাগরিভুক্ত করা হবে। আহতদের সব সরকারি এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। এ ছাড়াও তাদের সরকারিভাবে এককালীন ও মাসিক অনুদানসহ অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসন, প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এই অধিদপ্তরের মাধ্যমে।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত এক হাজার ৪০১ জনকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এর আগে, গত ১৫ জানুয়ারি অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহিদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ৮৩৪ জনের পরিবারের সদস্যরা ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পাবেন। এই টাকার মধ্যে চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরে ১০ লাখ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হবে। এছাড়া প্রতিটি পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।

অধিদপ্তর আরও যেসব কাজ করবে
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত ছাত্র-জনতার তালিকা ও ডাটাবেজ সংরক্ষণ, শহিদ ও আহত ছাত্র-জনতার তালিকা সরকার কর্তৃক গেজেটে প্রকাশ ও সংরক্ষণ করবে এই অধিদপ্তর। একইসঙ্গে শহিদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প/কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। 

অভ্যুত্থানে নিহতদের গণকবর সংরক্ষণ এবং স্মৃতি ফলক স্থাপনও করা হবে। গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গবেষণা নীতি প্রণয়ন এবং এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে অধিদপ্তরটির মাধ্যমে। এ ছাড়াও এই অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালন করা হবে। অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত ছাত্র-জনতাকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও এই অধিদপ্তরের অন্যতম কাজ। 

অধিদপ্তরের অর্থের জোগান যেভাবে 
জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর তহবিল নামে অধিদপ্তরের একটি তহবিল থাকবে। সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান, সাহায্য বা মঞ্জুরি; সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, কোনো বিদেশি সরকার, দেশীয় আন্তর্জাতিক এজেন্সি, সংস্থা, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদান; অধিদপ্তরের সম্পত্তি বা যেকোনো কার্যক্রম থেকে লব্ধ আয়সহ নানাভাবে তহবিল গঠন করা হবে। 

অধিদপ্তর গঠনের সর্বশেষ অবস্থা
মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কার্যপরিধির রুলস অব বিজনেস সংশোধন করে ইতোমধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধিতে যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়াও অধিদপ্তরটির জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৬৩টি জনবলকাঠামো অনুমোদনের জন্য সাংগঠনিক কাঠামোর (অর্গানোগ্রাম) মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। 

এ ছাড়া অধিদপ্তর মনিটরিংয়ে ২৭টি জনবল নিয়ে একটি পৃথক ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অনুবিভাগ’ গঠনের প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কিছুটা কাটছাঁট করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জনকাঠামো চূড়ান্ত করলে নথি পাঠানো হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এরপর বাকি প্রক্রিয়া শেষ হলে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। 

সূত্র জানায়, দুই বিভাগে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯০ জনের বেতন সাড়ে ৩ কোটি টাকা। বাকি ৭ কোটি টাকা অধিদপ্তর ও অনুবিভাগ নির্মাণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ে ব্যয় হবে। 

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম বলেন, জুলাই অধিদপ্তর গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অধিদপ্তর করার জন্য নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন বরা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিদপ্তর গঠন হয়ে যাবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!