ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫

একান্ত সাক্ষাৎকারে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান

চলতি সপ্তাহে তেলের বাজার স্বাভাবিক হবে

হাসান আরিফ
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ১১:১৮ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

২৫ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন মাহবুবুর রহমান। এর আগে তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৩তম বিসিএস ক্যাডার তিনি। রমজানের স্বস্তি নেই বাজারে। অনেক বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতাদের অস্বস্তিতে ফেলেছে। 

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল কোনো পণ্যের সংকট হবে না, তবে বাজারে এর প্রভাব পড়ছে না। বাজারের তেল সংকট নিয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার হাসান আরিফ

রূপালী বাংলাদেশ: বেশকিছু দিন ধরে সয়াবিন তেলকেন্দ্রিক বাজারে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ কি? রোজায় সরকারের প্রস্তুতি কি?

মাহবুবুর রহমান: আমদানি অনুযায়ী বাজারে সয়াবিন তেলের কোনো সংকট থাকার কথা না। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৫৬ হাজার টন তেল খালাস হয়েছে। জানুয়ারি মাসেও চাহিদার থেকে বেশি পরিমাণ তেল খালাস হয়েছে। তাই সংকট থাকার কথা না। একটা সংকট আছে যেটা ওরা ভালোভাবে সমাধান করতে পারে না। 

তা হলো, আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা। যা আমদানিকারকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। কারণ হলো, একসাথে ডিমান্ড অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশের মানুষ আমি নিজেসহ অভ্যস্থ রমজানের প্রথম দিকে বাজার সদাই করে সারা মাস একটু ফ্রি থাকা। এই যে ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে একটু আছে।  

রূপালী বাংলাদেশ: এ ছাড়া আরও অনেক বিষয় জড়িত আছে সে বিষয়ে বলেবেন কি? 
মাহবুবুর রহমান: এ ছাড়া আরও কিছু থাকতে পারে। তবে মোরালি আমরা খুব মারাত্মক প্রবলেম পাইনি। ৎ

রূপালী বাংলাদেশ: বোতলজাত সয়াবিনের প্রচণ্ড সংকট রয়েছে বাজারে। এইটা কেন? 

মাহবুবুর রহমান: বোতলজাত সয়াবিনের বিষয়ে একটা অভিযোগ রয়েছে, তা হচ্ছে বোতল খুলে খোলা তেল বানিয়ে তারপর বিক্রি করা হচ্ছে। এটা ধরনের একটা...।

রূপালী বাংলাদেশ: আমদানিকারক বা সাপ্লাইয়ার্সরা আগে প্রতি মাসে যে পরিমাণ সাপ্লাই দিত, এখনো কি সেই পরিমাণ সাপ্লাই দিচ্ছে?

মাহবুবুর রহমান: তারা তো বলছে তারা দিচ্ছে। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে। যেমন- তিনটা ফ্যাক্টরি গত কয়েক দিন ট্রাক সেল করছে। যেটা আমাদের টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এ রকম তারা ১০টা পয়েন্টে বিক্রি করেছে। সেইটা একটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। কিন্তু বাজারে আমরা ভালো প্রভাব দেখি নাই। 

বোতলজাল তেলটা আমরা স্বাভাবিক পাই নাই। আমি নিজে বাজারে গেছি, আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় গেছেন। দেন আমাদের ভোক্তার টিম রেগুলার কাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের টিম রেগুলার কাজ করছে। 

ডিসি সাহেবরা প্রত্যেক দিন, এমকি প্রত্যেক দিন সব জেলায় জেলায় প্রশাসকরা বাজার মনিটরিং প্রতিবেদন পাঠাচ্ছেন। একদম মেসিভ আকারে চলতেছে। যেহেতু বাজার মূল্যের ব্যাপারে অভিযোগটা শুরু হয়েছে এ বছরে একটু আগে। সে জন্য আমরা এ বছরে বেশ সজাগই ছিলাম। আরও বেশি সজাগ ছিলাম। 

রূপালী বাংলাদেশ: অপরিশোধিত তেল আমদানিতে কি কোনো ধরনের সমস্যা আছে? 

মাহবুবুর রহমান: অপরিশোধিত তেল আমদানি এক মাস পিছিয়ে গেছে। এটা ওখানের প্রকৃতিক কারণে। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় প্রকৃতিক কারণে আমাদের এক মাস পিছিয়ে ছিল। তারপর এ রকম ঘাটতি হওয়ার কথা ছিল না। 

তারা (আমদানিকারকরা) আমাদের কথা দিয়েছিল গত মাসের ২৫ তারিখ থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু গতকালকে পর্যন্ত আমরা যেটা দেখেছি, সেটাকে আমরা স্বাভাবিক বলব না। তবে তাদের ব্যবসা করতে হলে তো এই সপ্তাহে এমনিতেই স্বাভাবিক হবে, তাই না।

রূপালী বাংলাদেশ: আমদানিকারক বা সরবরাহকারকরা দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল। এরপর তারা ধারাবাহিকভাবে মন্ত্রণালয়কে দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় তাতে সাড়া দেয়নি। এ জন্য দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে তারা এই সংকট তৈরি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আপনি কি মনে করেন?

মাহবুবুর রহমান: না, এক পশলা দাম বাড়ানো হয়েছে। তারপরও দাম বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তি কতখানি তা আমরা ওইভাবে ইয়ে করতে পারছি না। আমদানি বেড়েছে। 

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাসে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯০ টাকা লিটার দরে। এই দর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে লিটারে ২৮ থেকে ৩৩ টাকা বেশি। খোলা তেলের দাম বোতলের তেলকে ছাড়িয়ে গেছে।

বোতলের সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারিত। দর লিটার প্রতি ১৭৫ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলের দর ৮৫২ টাকা। বাজারে যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তার মোড়কে এই দরই লেখা হচ্ছে। অবশ্য খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে বেশি নিচ্ছেন।

ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, প্রতি মাসে সয়াবিনের চাহিদা ৮৭ হাজার টন। রোজায় চাহিদা আরও বাড়ে। এই চাহিদার বিপরীতে জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি হয়। যেমন- গত জানুয়ারিতে সয়াবিন তেল আমদানি হয় ১ লাখ ১৭ হাজার টন, যা গত ছয় বছরে মাসিক ভিত্তিতে সর্বোচ্চ। আবার সয়াবিন তেল তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজ আমদানি হয় তিন লাখ টন, যা থেকে পাওয়া যাবে ৪৫ হাজার টন সয়াবিন তেল।

সার্বিকভাবে গতবারের তুলনায় সয়াবিন তেল আমদানি বেশি হয়েছে। গত বছর রোজার আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানি হয় ১ লাখ ২০ হাজার টন সয়াবিন তেল। এবার একই সময়ে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার টন। 

টি কে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই) এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড- এই চার প্রতিষ্ঠান আমদানি বাড়িয়েছে। 

ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার গত নভেম্বর মূল্য সংযোজন কর (মূসক-ভ্যাট) কমিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বাড়তি আমদানি ও কর কমানোর পরও রোজার আগে দাম কমেনি, বরং খোলা সয়াবিন তেলের দাম অনেকটাই বেড়েছে।