খুলনা মহানগরে বেড়েছে মশার উৎপাত। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বিপুল অর্থ ব্যয়েও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মশা। মশার উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পেতে মশারি মিছিল ও সমাবেশ করেছে নাগরিক সমাজ। তবে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) বলছে, মশক নিধনে ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে ক্রাশ প্রোগ্রাম। আর নাগরিকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব প্রোগ্রাম কেবল লোক দেখানো। আদতে ফলাফল শূন্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওষুধ ক্রয়ে ৭৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৩ টাকা খরচ করে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওষুধ ক্রয়ের জন্য ১ কোটি টাকা বাজেটের ইতিমধ্যে খরচ করেছে ৫১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৮ টাকা।
এ ছাড়া ভাসমান ময়লা পরিষ্কার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং খাল ও ড্রেনের পেড়িমাটি খননে বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু টাকা খরচের পরও মশার উৎপাত কমছে না।
মহানগরের পিপলস এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ সাব্বির ফকির বলেন, এত বেশি পরিমাণে মশা বেড়েছে যে, মশার কামড়ে স্থির হয়ে বসা যায় না। তিনি বলেন, বিকেল ও রাতে মশার উৎপাত বেশি হলেও সারা দিনই আছে এর যন্ত্রণা।

খালিশপুরের বাসিন্দা আব্দুল কাদের রাজ বলেন, প্রচুর মশা। আমাদের বাড়ির আশপাশ যেন মশার কারখানায় পরিণত হয়েছে। রাতে তো বিরক্ত করেই, দিনের বেলায়ও ভীষণ বিরক্ত করছে। দিনে অফিস-আদালতের মধ্যেও মশার যন্ত্রণায় টেকা দায় হয়ে পড়েছে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, মাঝেমধ্যে নগরীর সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশে কিছু ওষুধ ছিটালেও মহানগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা এর আওতায় আসেনি। ড্রেন, খাল, পুকুর, ঝোপঝাড় নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পরিকল্পিতভাবে মানসম্মত কীটনাশক ছিটানোর দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, খুলনা মহানগরে প্রায় ১৮ লাখ মানুষের বসবাস। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জন্য মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের যে বাজেট রয়েছে তা খুবই নগণ্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সামনের বাজেটে এই খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার পরমার্শ দেন।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, মশা নিধনে করপোরেশন সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নগরজুড়ে মশার উপদ্রব স্থায়ী রূপ লাভ করলেও সাম্প্রতিক এই উৎপাত মাত্রা ছাড়িয়েছে। দিনে-রাতে স্বাভাবিক জীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ সব কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মশক নিধনে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা কম। সেজন্যই মশক নিধন কার্যক্রম কার্যত কাজে আসছে না। এছাড়া এই খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। তাই কেসিসিকে আরও তৎপর ও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তবে কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ বলেন, মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানো হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক স্প্রেম্যান কাজ করছে। ড্রেনের পেড়িমাটি উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজ চলছে। খুব দ্রুত মশা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সুহাস রঞ্জন বলেন, মশার কামড়ে এখন নানা ধরনের প্রাণঘাতী রোগ ছড়াচ্ছে মানুষের শরীরে। অনেক সময় ত্বকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে মশার কামড়ে। কামড় খেয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে আসার চাইতে মশার কামড় থেকে বাঁচা বেশি জরুরি।
এদিকে, মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণে ৩১টি ওয়ার্ডের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ কনজারভেন্সি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার এক জরুরি সভায় মশক নিধনের কাজ মনিটরিংয়ের জন্য ওয়ার্ডের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেন। একই সঙ্গে মশার বংশ বিস্তার রোধে কেসিসির প্রচেষ্টার পাশাপাশি নিজ নিজ বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
আপনার মতামত লিখুন :