সেকেন্ড রিপাবলিক হবে না থার্ড রিপাবলিক হবে তা ঠিক করবে দেশের জনগণ। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের কোনো যৌক্তিকতা দেখছে না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী, বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। দেশের মানুষ বিষয়টি ঠিক করবে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির নতুন চিন্তার প্রতি সম্মান থাকবে বিএনপির।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ ও তাদের দেওয়া বক্তব্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে রাজনীতির মাঠে। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন, সেকেন্ড রিপাবলিক এবং দলটির স্লোগান ইনকিলাব জিন্দাবাদ এগুলো বলে দলটি কী বলতে চেয়েছে কিংবা ভবিষ্যতে কী করতে চাইছে তা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এক সমাবেশের মাধ্যমে ১৭১ সদস্যদের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে নতুন এই দলটি যাত্রা শুরু করেছে। দলের আহŸায়ক নাহিদ ইসলাম দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ (দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র) প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা এই দলের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলা ও গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে তাদের রাজনীতির অগ্রাধিকার। আর সেই থেকেই রাজনীতির মাঠে শুরু হয় নতুন বিতর্ক।
নতুন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘‘আমরা জুলাই বিপ্লব এবং ২০২৪ এর চেতনায় একটি দেশ গড়তে চাই। সেজন্য আমরা সেকেন্ড রিপাবলিকের কথা বলেছি। এজন্য সংবিধান নতুন করে প্রণয়নের দরকার। আমরা যে সেকেন্ড রিপাবলিকের কথা বলছি সেটা সাম্য, মানবিক ও সামাজিক মর্যাদার ভিত্তিতে। এর সঙ্গে আছে সামাজিক সুবিচার, আমাদের যে সংবিধান আছে সেটা এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করে না। এজন্যই আগে সংবিধান পরিবর্তন করা দরকার। আমাদের যে রিপাবলিক আছে তা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেনি।’’ আমরা চাই সেকেন্ড রিপাকলিক স্টাবলিস্ট করতে। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো কিংস পার্টি নই, হতেও চাই না। আমরা সরকার বা কোনো দলের আনুক‚ল্য চাই না। আমরা আমাদের এজেন্ডা নিয়ে মানুষের কাছে যাব। জনমত গঠন করব।’
যদিও ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠায় নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি করছে, সেটা সংসদ নির্বাচনসহ একসঙ্গেই হতে পারে বলে মনে করছে দলটি। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গত মঙ্গলবার বিষয়টি সামনে এনেছেন। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের তাদের চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনার জন্ম দিলে সাভারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে। এর মাধ্যমেই নতুন কাঠামো ও নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে সহায়তা করবে।
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, নতুন দল গঠনের পর আলোচনায় আসতে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে তরুণ নেতারা। সেটা তারা করতেই পারে। তবে সেকেন্ড রিপাবলিক, থার্ড রিপাবলিক, নাকি ফোর্থ রিপাবলিক হবে সেটা ঠিক করবে দেশের জনগণ। সেকেন্ড রিপাবলিকের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমার মনে হয় না। দেশে ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া বা আওয়ামী লীগের স্বৈরাচার হওয়ার পেছনে এটা জড়িত নয়। আওয়ামী লীগ বিরোধীমত দমন করে নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়েছিল। এটা এমন নয় যে, সেকেন্ড রিপাকলিক না থাকায় হয়েছে। সংবিধানকে কেটে ছিঁড়ে তারা তাদের মতো করে নিয়েছে। প্রচলিত আইনেই সংবিধান সংশোধন করা হয়। এর জন্য ছাত্ররা যে বলছে ছুড়ে ফেলে দেবে, সংবিধানকে কবর দেবে। এটা বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। সংবিধান কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় সংসদ গঠনের পর মানুষের প্রয়োজনে হতে পারে তার সংশোধনের। একটি নির্বাচিত সরকার গঠনের পর তারা সংসদে গিয়ে সংবিধান সংশোধন করবে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির ভিন্ন মত থাকলেও তার প্রতি সম্মান থাকবে বিএনপির। ইতোমধ্যে ছাত্রদের কয়েকটি দল গঠন হয়েছে, নির্বাচনের আগে নিশ্চই আরও দল গঠন হবে। তবে তাদের কিছু চিন্তা থাকবে। সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে যেতে হবে মানুষের কাছে। মানুষের মেন্ডেড নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাদের চিন্তাকে আমরা স্বাগত জানাই এই উন্মুক্ত অঙ্গনের জন্যই তো আমরা যুদ্ধ করেছি সবাই মিলে। তাদের চিন্তাভাবনা যাই থাকুক তা নিয়ে যেতে হবে মানুষের কাছে, তাতে কোনো সমস্যা নাই। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য জনগণের মেন্ডেড নিয়ে সংসদে তা পাশ করাতে হবে, পথ একটাই আর তো কোনো পথ নাই। আমারও তো অনেক চিন্তাভাবনা আছে, আমার দলেরও কিছু চিন্তাভাবনা আছে, অন্যান্য দলেরও কিছু চিন্তা আছে। ভিন্ন মত হলেও তাদের রেসপেক্ট করতে হবে, সম্মান জানাতে হবে।
সেকেন্ড রিপাবলিক কিংবা গণপরিষদ নির্বাচনের নামে যথাসময়ে নির্বাচন না হলে দেশের মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে বলে মনে করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
আপনার মতামত লিখুন :