মব সহিংসতার ফাঁদে প্রাণহানি

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ০৯:৩০ এএম

মব সহিংসতার  ফাঁদে প্রাণহানি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে মব সহিংসতা। প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথাও এ সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এতে নিহত হচ্ছে দুষ্কৃতকারী ছাড়াও নিরপরাধ মানুষ। 

মব সহিংসতার শিকার হচ্ছে পুলিশ, শিক্ষক থেকে শুরু করে চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারী ছাড়াও সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাদ যাচ্ছেন না বিদেশিরাও। বাসা-বাড়িতে লোকজন ঢুকে সবকিছু তছনছ করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সন্ত্রাসী নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে ‘তৌহিদি জনতা’। 

যা অন্তর্বর্তী সরকারের গত সাত মাসেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি এদের। ফলে মব সহিংসতা নিয়ে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-শঙ্কা-আতঙ্ক। 

জানা গেছে, গত সাত মাসে মব সহিংসতার নামে গণপিটুনিতে নিহতের  সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেড়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৭ মাসে দেশে অন্তত ১১৪টি  গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এতে ১১৯ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন।

 বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন স্থানে ঘটা এ ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা প্রতিরোধে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ক্রমাগত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের কারণে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম না হলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, মব প্রতিরোধে কাজ করছে সরকার। 

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মব সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো- অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ-সংক্রান্ত মামলায় শাস্তির নজির নেই বললেই চলে। ফলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগাচ্ছে আরেক অপরাধী চক্র। 

তারা বলছেন, বেশ কিছু কারণে মব সহিংসতা বাড়ছে। তার মধ্যে দীর্ঘদিনের অগণতান্ত্রিক পরিবশে, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, প্রশাসনে অস্থিতিশীলতা ও ভীতি, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করা এবং সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার বা গুজবের কারণে এজাতীয় সহিংসতা বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

এহেন অপরাধে জড়িতদের কঠোর আইনগত ব্যবস্থার মুখোমুখি করতে হবে। মবের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স দরকার। নইলে মব ভায়োলেন্স কমবে না। 

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে দেশে গণপিটুনির অন্তত ১১৪টি ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১৯ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছে। আর গত ১০ বছরে গণপিটুনিতে মারা গেছে কমপক্ষে ৭৯২ জন। আহত হয়েছে ৭৬৫ জন। 

এইচআরএসএসের তথ্য মতে, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে অন্তত ৩০টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে ১৯ জন আর আহত হয়েছে ২০ জন। গণপিটুনি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই দেশের সব নাগরিককে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে আহ্বান জানিয়েছে এইচআরএসএস।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর গণপিটুনিতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। 

২০২৩ সালের আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা ২৯। ২০২৪ সালের দেশের পট পরিবর্তনের মাস আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ মাসে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ১১২ জন। সে হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকারের গত ছয় মাসে গড়ে প্রতি মাসে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ১৯ জন। 

পরিসংখ্যান বলছে, পট পরিবর্তনের মাস আগস্টে গণপিটুনিতে মারা যান ২১ জন। পরের মাস সেপ্টেম্বরে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় ২৮ জনের, যা ২০২১ সালের পুরো বছরের সমান। গত বছরের অক্টোবরে গণপিটুনিতে মারা গেছেন ১৯ জন, নভেম্বরে ১৪ জন ও ডিসেম্বরে ১৪ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে গণপিটুনিতে নিহত হন ১৬ জন।

আসকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগেই নিহত হয়েছেন ৫৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিল ৫১ জন, ২০২২ সালে ৩৬ জন, ২০২১ সালে ২৮ জন এবং ২০২০ সালে ৩৫ জন।

গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গোলাম মোস্তফা (৩৮) নামে এক যুবক মারধরের শিকার হয়েছেন। সাহরির সময় ইমামের ডাকাডাকি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর ক্ষুব্ধ একদল যুবক তার ওপর হামলা চালায়। 

এরপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং গতকাল শুক্রবার তা ভাইরাল হয়। এ ছাড়া একই দিন সিলেট নগরীর আম্বরখানায় ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে দুজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। 

গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানীর গুলশানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর গুলশান-২ নম্বর সার্কেলের ৮১ নম্বর রোডের একটি বাড়ির চতুর্থ তলায় হামলা চালায় একদল লোক।

ওই বাসায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের দোসরদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে; এমন তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে দরজা ভেঙে ‘তল্লাশির’ নামে ২০-২৫ জন লোক ঢুকে পড়ে। তল্লাশির অজুহাতে সেখানে প্রবেশ করে বাসাটি তছনছ, ভাঙচুর ও লুটপাটের চেষ্টা করে তারা।

গত ৩ মার্চ সোমবার রাতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত ঢুকেছে’ বলে মব তৈরি করে দুই যুবককে গণপিটুনি দেওয়া হয়। পিটুনিতে গুরুতর আহত দুই যুবক পরে মারা যান। নিহতরা হলেন- মো. নেজাম উদ্দিন ও আবু সালেক। তারা সাতকানিয়ার কাঞ্চনা ইউনিয়নের বাসিন্দা। 

নিহত নেজাম ও সালেককে নিজেদের কর্মী দাবি করে জামায়াতে ইসলামী সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোসেন বলেন, দুজনই কাঞ্চনা ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী। তাদের পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।

গত শুক্রবার রাতে একদল ডাকাত মাদারীপুরের রাজারচরে বাল্কহেডে ডাকাতির চেষ্টাকালে নৌযান শ্রমিক ও স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে ডাকাতরা গুলি ছুড়ে স্পিডবোটে পালানোর চেষ্টা করে। পরে তারা শরীয়তপুরের ডোমসার এলাকায় ধরা পড়ে। গণপিটুনিতে সাতজন আহত হয়। আহত ডাকাতদের হাসপাতালে নেওয়া হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। কীর্তিনাশা নদী থেকে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মব তৈরি করে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা আউটার রিং রোডে চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইউসুফ আলীর ওপর হামলা করা হয়। হামলাকারীরা তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ এবং ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে সৈকত এলাকায় টহলরত পতেঙ্গা থানা পুলিশের একটি দল ও আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। 

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর উত্তরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে বিএনএস সেন্টারের সামনে ফুট ওভারব্রিজের রেলিংয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলেছেন, আইন প্রয়োগ ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার কারণে গণপিটুনির ঘটনা বেড়ে যায়। 

দিনের পর দিন এসব বৃদ্ধি পেলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে না নেওয়ায় ঘটনা আরও বাড়ছে। আর রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিপক্ষকে ফাঁদে ফেলে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। গণপিটুনি আইনের দৃষ্টিতে ‘হত্যা’ এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা হত্যাকারী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, মব জাস্টিস বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো- নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে কাউকে শারীরিকভাবে আক্রমণ এবং সহিংসতার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। 

ব্যক্তিকে যেকোনো ট্যাগ দিয়ে আক্রমণ, বাসা-বাড়িতে ও অফিসে হামলায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এই যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, এটা আবার অন্যদেরও প্রভাবিত করে। অর্থাৎ যার কোনো ব্যক্তি-উদ্দেশ্য অথবা কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শকে কেন্দ্র করে বিরোধ অথবা ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক বা সম্পদকেন্দ্রিক এই বিরোধগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিশোধ নেওয়ার স্পৃহা থেকে অনেকে আবার মবের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। 

এ সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, মবের সঙ্গে যারা জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি শুরু থেকেই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারত এবং সরকার রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যদি জোরালোভাবে মবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিত, তখন এই অবস্থা তৈরি হতো না। এ ব্যবস্থার ঘাটতি থাকার কারণেই মবের সংখ্যাটা অনেক বেড়েছে। 

তিনি বলেন, যারা এমন অরাজক পরিস্থিতি বন্ধ করবেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ মব সহিংসতা তৈরি করার জন্য উসকানি দিচ্ছেন। আমরা দেখছি যে, দেশের বাইরে থেকে বা দেশের মধ্য থেকে কেউ কেউ মবকে জাস্টিফাই করছেন। তারা বলছেন, এটা ঠিক আছে। 

কিন্তু এটাকে সমর্থন করার কোনো সুযোগ নেই। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। 

তিনি বলেন, মব হওয়ার মতো অনুকূল পরিস্থিতি অনেক। সে অনুযায়ী মব বন্ধ করার মতো কোনো পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা নেই বলেই চলে। সরকারকে খুব জোরালোভাবে মবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে। নইলে মব ভায়োলেন্স দূর করা সম্ভব নয়। 

মব সহিংসতার নামে গণপিটুনির মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, প্রথমত, এটি ঘটছে পরিকল্পিত উসকানির কারণে। 

সরকারের সহযোগী বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় কিছু ব্যক্তি এতে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা একটা বড় কারণ। হয়তো ইচ্ছা করেই এ বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। সর্বোপরি সরকারের উদাসীনতা ও কোনো পদক্ষেপ নিতে অনীহার কারণেই বেড়ে যাচ্ছে গণপিটুনির প্রবণতা।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, মব সহিংসতা বা গণপিটুনি নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো প্রচেষ্টা সরকারিভাবে দেখছি না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের চাকরি ও বদলি নিয়ে তটস্থ। আমলাতন্ত্র পরিচালনাও যথাযথ নয়। 

অপরাধের শিকার হওয়ার আতঙ্ক থেকে মানুষ আইন হাতে তুলে নিতে পারে। সেটা ঠেকাতে অপরাধ দমাতে হবে। আবার যারা আইন হাতে তুলে নেন, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি মনে করেন, দীর্ঘদিনের অগণতান্ত্রিক পরিবেশ, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, প্রশাসনে অস্থিতিশীলতা ও ভীতি এবং আমলাতন্ত্রকে পরিচালনায় অদক্ষতাই গণপিটুনি বেড়ে যাওয়ার কারণ।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা মব জাস্টিস করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। জনগণ এত উচ্ছৃঙ্খল হয়ে গেলে অনেক সময় কিন্তু সমস্যা হয়। বাহিনী দিয়ে তো সব সময় কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করা যায় না। 

গত ছয় মাসে মব জাস্টিস কমছে না। বাসা-বাড়িতে ঢুকে মব জাস্টিসসহ বিদেশিদের ওপর মব জাস্টিসের মতো হামলার ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি দ্বিমত করব না, হচ্ছে। তবে যেখানে হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। পুলিশের ওপরও হামলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করতে হবে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব সময় তৎপর আছে এবং যে জায়গায় (মব) হচ্ছে তাদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বাসা-বাড়িতে হুট করে অভিযানের নামে লুটপাটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কোনো অভিযান চালানোর এখতিয়ার কারো নেই।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!