ঢাকার পল্টন মোড়ে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মিছিল লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় মিছিলটি ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা অলিগলিতে অবস্থান নেন। আটক করা হয় বেশ কয়েকজনকে।
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পরেই হিযবুত তাহ্রীরের ব্যানার নিয়ে একটি মিছিল বের হয়। পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মিছিলটি পল্টন মোড় পার হয়ে বিজয়নগর মোড়ের দিকে যায়। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা অলিগলিতে ঢুকে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে তারা আবার সংগঠিত হয়ে পল্টন মোড়ের দিকে আসতে থাকে। পুলিশ আবারও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে মিছিলটি ফের ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধায় পণ্ড হয়ে যায় নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ‘মুক্তির এক পথ, খিলাফত, খিলাফত’ স্লোগানে মিছিলটি পল্টন থেকে বিজয়নগরের দিকে এলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। তবে তার আগে প্রায় ১৫ মিনিট নির্বিঘ্নে মিছিল করে নিষিদ্ধ এই সংগঠন। পরে অবশ্য পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে এক দফা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় হিযবুত তাহরীরের কর্মীরা।
পরে আবার একত্রিত হয়ে মিছিল শুরু করার চেষ্টা চালায় তারা। তখন আবারও কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এ সময় হিযবুত তাহরীরের কর্মীদেরও ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে। তখন আবারও কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় হিযবুত তাহরীরের কর্মীদেরও ইটপাটকেল ছুঁড়তে দেখা গেছে। মিছিল থেকে কয়েকজনকে আটক করতেও দেখা গেছে।
হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন: এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একটি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন। জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি বিবেচনায় ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী নিষিদ্ধঘোষিত যেকোনো সংগঠনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার-লিফলেট বিতরণ ও অন্যান্য উপায়ে প্রচারণাসহ সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
হিযবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধঘোষিত কোনো সংগঠন সভা, সমাবেশ ও যেকোনো উপায়ে প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করলে ডিএমপি প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচি: নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্রীরের ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে ও আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থান নেন সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের বিভিন্ন শাখার সদস্যরা।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বায়তুল মোকাররম এলাকায় গিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করার এমন দৃশ্য দেখা যায়।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পল্টন মোড়ে প্রচুর পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা থাকেন। পল্টন মোড় থেকে গুলিস্তানমুখী সড়কে (সচিবালয়ের বিপরীত পাশের রাস্তায়) একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি), একটি জলকামান ও একটি প্রিজন ভ্যানও ছিল।
বায়তুল মোকাররম থেকে পল্টন মোড়মুখী সড়কে পুলিশের একাধিক প্রিজন ভ্যান দেখা গেছে। এর মধ্যেও হিযবুত তাহ্রীরের ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচি পালন করতে যায় এবং পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
হিযবুত তাহরীরের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ: পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স
হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে জানিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। গতকাল শুক্রবার এক বার্তায় এ কথা জানায় সংস্থাটি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী নিষিদ্ধঘোষিত যেকোনো সংগঠনের কার্যক্রম দণ্ডনীয় অপরাধ। এর আওতায় হিযবুত তাহরীর সভা, সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার-লিফলেট বিতরণ বা প্রচারের যেকোনো প্রচেষ্টা আইন লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।
আটক ৩ জনের রিমান্ড মঞ্জুর: এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি বিবেচনায় সরকার ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর যেকোনো প্রচারণামূলক কার্যক্রম কঠোর নজরদারিতে রয়েছে এবং প্রয়োজন হলে তা দমনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে ওই রাতে সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার উত্তরা থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- মনিরুল ইসলাম (৪০), মোহতাসিন বিল্লাহ (৪০) ও মাহমুদুল হাসান (২১)। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)-এর সাব-ইন্সপেক্টর আলমগীর কবির জানান, গতকাল আটক ৩ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় ‘মার্চ ফর খিলাফত’ নামে সমাবেশ পালন-সংক্রান্ত গোপন পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে সিটিটিসির একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, উত্তরা সেক্টর-১১ ও সেক্টর-১২ এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্যরা ৭ মার্চ বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় ‘মার্চ ফর খিলাফত’ নামে একটি সমাবেশ করতে গোপন পরিকল্পনা করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে সিটিটিসির একটি দল উত্তরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করে।
ডিসি তালেবুর বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) এ মামলা করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রত্যেকে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে এবং তাদের কাছে জব্দ করা আলামত থেকে প্রাথমিকভাবে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
আটক রিকশাচালককে ছাড়ালেন উপদেষ্টা আসিফ
গতকাল রাজধানীতে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছিল। সংগঠনটির এক কর্মীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করার সময় এক রিকশাচালক তার দিকে মারমুখী ভঙ্গিমায় তেড়ে যান।
এ ভিডিও দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই রিকশাচালকের সাহসিকতার প্রশংসাও করেন। পরে জানা যায়, সেই রিকশাচালককেও আটক করা হয়েছে। বিকেলে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া মিন্টো রোডের ডিবি অফিস থেকে ওই রিকশাচালককে ছাড়িয়ে নিতে যান।
এই বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, ৫ আগস্টের পর এই জনতাই সব সংকট থেকে দেশকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে। তিনি জানান, উনি রিকশাওয়ালা না। আগে রিকশা চালাতেন।
এখন বায়তুল মোকাররমের সামনের দোকানগুলোতে পানি সাপ্লাইয়ের কাজ করেন। পুলিশকে সহায়তা করতে গেলে তাকেও আহত করা হয়। পরবর্তী সময়ে আর্মির সদস্যরা তাকে এরেস্ট করে ডিবিতে সোপর্দ করে। তাকে ছাড়িয়ে এখন ঢাকা মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর ‘মার্চ ফর খিলাফত’ মিছিল বের করে। পরে তাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে হিযবুত তাহরীরের অন্তত ১০ সদস্যকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ওই রিকশাচালকও ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :