বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পালনে নমনীয় না হলেও ঋণ দেওয়ার বিষয়ে নমনীয় হয়েছে আইএমএফ। তাই আটকে যাওয়া চর্তুথ কিস্তি এবং নিয়মিত পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে আগামী জুন মাসে ছাড় করবে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। দুই কিস্তির এই অর্থের পরিমাণ ৮৭০ মিলিয়ন বা ৮৭ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একাধিক সূত্র রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনই ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করতে রাজি নয়। বিবি বলছে, বর্তমানের উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা হলে টাকার মান আরও পড়ে যাবে।
এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয় বেড়ে বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে মূল্যস্ফীতিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা সামাল দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে।
সূত্রটি আরও বলেছে, বিবি চায় মূল্যস্ফীতির গতিপ্রকৃতি দেখে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা যায় কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে। বিবির এমন কঠোর মনোভাবের পরও আগামী জুন মাসে ঋণের চর্তুথ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে দিতে রাজি হয়েছে আইএমএফ। এই অর্থের পরিমাণ ৮৭ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চর্তুথ কিস্তির পরিমাণ ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
জানা গেছে, আগামী ৬ থেকে ১৭ এপ্রিলে আইএমএফের নির্ধারিত পর্যালোচনা মিশন আসবে ঢাকায়। আর জুনে হবে আইএমএফের পর্ষদ সভা। পর্ষদ সভায় অনুমোদনের পর কিস্তি দুটির অর্থ একসঙ্গে আগামী জুনেই ছাড় হবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বলেছি যে আমাদের কিছু কাজ আছে।
তাই অত তাড়া করছি না। আর এখন আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো। চলতি হিসাব, আর্থিক হিসাব ও প্রবাসী আয় ইতিবাচক। তাই মরিয়া হয়ে উঠছি না।
কিস্তি পাওয়ার বিষয়টি জুনে চলে যাওয়ার ব্যাপারে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারা পরামর্শ দিয়েছে। আমরাও বলেছি কিছু বিষয় আছে, যা আমরা দ্রুত করতে পারব না।’
সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে আগামী ৬ থেকে ১৭ এপ্রিলে আইএমএফের যে পর্যালোচনা মিশন ঢাকায় আসবে, তার প্রস্তুতির জন্য একটি পর্যালোচনা সভা হয়েছে। এই সভায় অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের দেওয়া বিভিন্ন সংস্কারের অগ্রগতি ভালো হয়েছে। এর মধ্যে এনবিআর তাদের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সংস্কারেরও তারা ভালো করেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু ক্ষেত্রে ভালো করলেও কিছু ক্ষেত্রে এখনো বাকি রয়েছে। এজন্য তাদের আরও সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে।
চতুর্থ কিস্তিতে পাওয়ার কথা ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ, তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
প্রতিবার কিস্তি পাওয়ার আগে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের অনুমোদন লাগে। এর আগে ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য ঢাকায় আসে আইএমএফের দল।
চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের লক্ষ্যে আইএমএফের শর্তাবলি পর্যালোচনা করতে আইএমএফ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাদাকিসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ৩ থেকে ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফর করে। এই সফরের পরই কিস্তিছাড় পিছিয়ে যায়।
এই সফরে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
আইএমএফের শর্তগুলোর মধ্যে আছে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ, বাজেট ঘাটতি, আন্তর্জাতিক লেনদেনর ভারসাম্য, রিজার্ভ মানি, কর রাজস্ব, অগ্রাধিকার সামাজিক ব্যয় এবং সরকারের মূলধন বিনিয়োগ।
অর্থ বিভাগের সূত্রগুলোও বলছে, আইএমএফ ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি পেতে ১২টি শর্তের সবগুলোই পূরণের পথে থাকলেও বিবি সংস্কারে পিছিয়ে রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :