শেষমেশ বহুল আকাক্সিক্ষত নগর সরকার গঠিত হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মে মাসের মধ্যেই এটি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। এ-সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা এরইমধ্যে প্রস্তুত করেছে সরকার।
বর্তমানে ‘জাতীয় নগরনীতি’ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এটি বাস্তবায়িত হলে সব নাগরিক সেবা এক কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ নগর সরকারের অধীনে চলবে। ফলে রাজউক, ওয়াসা, তিতাস গ্যাস এবং দুই সিটি করপোরেশন পরিচালনার দায়িত্বও বর্তাবে এই সরকারের ওপর।
স্থানীয় সরকার বিভাগের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে এই ‘জাতীয় নগরনীতি’ নিয়ে কাজ চলছিল। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় এটি দু’দুবার ওঠেছিল। কিন্তু কেউই অনুমোদন না দেওয়ায় এটি মাঝপথে মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর আবার ২০২২ সাল থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়।
২০২৪ সালে স্থানীয় সরকারের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন এএইচএম কামরুজ্জামান। তার ব্যক্তিগত আগ্রহে একাধারে চারটি পরামর্শ সভা হয়। এতে ২৫ থেকে ৩০টি মন্ত্রণালয় অংশগ্রহণ করে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ওই সবার সহায়তায় ছিল।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি বরাবরই আলোচনায় ছিল। রাজউক, ওয়াসা, পিডিবি, ডেসা, ডেসকো, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটির মেয়রদের হাতে থাকার কথা থাকলেও সংকটময় মুহূর্তে তাদের ক্ষমতাহীনতার বিষয়টি প্রকট হয়ে ওঠে।
এর একমাত্র সমাধান হতে পারে নগর সরকার। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের সরকার বহাল রয়েছে। কিন্তু বারবার কথা ওঠলে অতীতের কোনো সরকারই এটি করতে আগ্রহী হয়নি।
দফায় দফায় জাতীয় নগরনীতির খসড়া তুলে ধরা হলেও বিএনপি ও আওয়ামী লীগ-কোনো সরকারই এর অনুমোদন দেয়নি। বারেবারেই মন্ত্রিসভায় খসড়াটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নীতিমালাটি করে যেতে জোরেশোরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এইএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, নগর সরকার আমরা অনেকদিন ধরেই চাইছি। সব সার্ভিস যদি এক জায়গায় আনা যায় তাহলে সেটির সমন্বয়টা ভালো হয়। সে জন্য নগর সরকারের ধারণাটা এসেছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটি আছে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা সবার মতামত বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় নগরনীতির খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন্য পাঠাতে যাচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, আগামী মে মাসের মধ্যে নগরনীতির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চূড়ান্ত করা। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বাংলাদেশে এটি হবে কি না জানি না। তবে চেষ্টা তো করতে পারি। তিনি আরও বলেন, আমরা নীতিতে বলেছি, এ কাজগুলো করতে হবে। নীতিতে নগর সরকার শব্দটি নেই। তবে নীতিমালার মধ্যে এ বিষয়টি অন্তর্নিহিত আছে। সমন্বিতভাবে সেবা দিতে হলে সেগুলো একটি জায়গায় আসা উচিত।