মা-বোনের নামে মামলা করবেন পপি

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৫, ১০:০৮ এএম

মা-বোনের নামে মামলা করবেন পপি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

যেহেতু মা, ভাই ও বোনেরা আমার মান-সম্মানের কথা একবারও ভাবেনি এবং আমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেনি, তাই আমার প্রাপ্য জমি কখনোই ছেড়ে দেব না। প্রয়োজনে আমার হক এতিমখানা কিংবা মাদরাসায় দেব, কিন্তু তাদের আর নয়। কোনো নিমকহারামকে দেব না। আমার ৩০ বছরের কষ্টের মূল্য তারা দেয়নি। আমার সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাদের এখন ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। অনেক ছাড় দিয়েছি। 

ছাড় দিতে দিতে এবং পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে করতে আজ আমি নিঃস্ব। আমার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে কেনা জমি ফেরত পেতে মামলা করব। মা, ভাই ও বোনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে আক্ষেপ নিয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে কথাগুলো বলেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী সাদিকা পারভিন পপি।

পারিবারিক বিরোধের জেরে সম্প্রতি হঠাৎ করে আলোচনায় আসেন পপি। বিরোধের সূত্রে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করেছেন এই নায়িকার বোন ফিরোজা পারভিন খেয়ালি। একসময় তিনিও ‘ভুল’ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্রে নায়িকা হয়েছিলেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে থাকতেন পপি। কখনো দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া যায়নি। 

হঠাৎ করেই পপির পারিবারিক দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় তাই অনেকে হতবাক হয়েছেন। বাবার ছয় কাঠা জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে পপির নামে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার ছোট বোন ফিরোজা পারভিন। এরপর পপিও একই থানায় মা, ভাই ও বোনের নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এরপর এক মাস পেরিয়ে গেছে। সাধারণ ডায়েরির সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে পপি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। আমার করা সাধারণ ডায়েরি তদন্তাধীন। আইনিভাবেই লড়াই করব। বর্তমানে মামলার প্রস্তুতি চলছে। 

অন্যায়ভাবে আমার জমি দখলে রেখেছে। ছয় কাঠা জমির দলিল আমার নামে। সামনের অংশের জমিতে ভাগ পাব। কিন্তু সব কিছু মা-বোনেরা দখলে রেখেছে। সামনে যে ঘর তুলেছিলাম, তা থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ভাড়া আসে। সব তারাই নেয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই অভিনেত্রী বলেন, সংসারে যে দেয় তার বদনাম বেশি হয়। যে দেয় না তার কোনো বদনাম নেই। না দিতে পারলে বা একটু কম হলে সে খারাপ। যেটা আমার সঙ্গে হয়েছে। আমি সমাজের জন্য একটা শিক্ষা। জীবনে কখনো নিজের শতভাগ উজাড় করে দেওয়া উচিত না।

নিজের ব্যাকআপ রেখে দেওয়া উচিত। আমার ভাই-বোন একটাও মানুষ হয়নি, হয়েছে নেশাখোর। তাদের বয়ফ্রেন্ড ফুটানি করেছে আমার টাকায়। নিজে না খেয়ে তাদের কতক্ষণ জোগান দেব। আমার টাকা দিয়ে আমাকেই খুন করার জন্য কিলার ভাড়া করা হয়েছিল।

পপি বলছিলেন, আয়-ব্যয়, ব্যাংক-বিমার খোঁজ তিনি রাখতেন না। খোঁজ রাখতেন তার মা-বাবা। ঢাকার বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে সংসারের অন্য সব ব্যয় তিনিই করতেন। ব্যাংকে কত টাকা জমা হলো, কোথায় কত খরচ হলো, কোনো দিন তিনি খোঁজ রাখেননি; বরং একদিন জানতে পারলেন, তার বাবার সঙ্গে তার যে যৌথ ব্যাংক হিসাব ছিল, সেই হিসাবে যে অর্থ ছিল, সেটি অন্য বোনের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। এই খবর শোনার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এমনকি তার আলমারিতে  রাখা ২০ লাখ টাকা চুরি করেছিল নিজেরই ভাই-বোনেরা।

এত টাকা বাসায় রাখলেন কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে শুটিংয়ে যেতাম আর রাতে ফিরতাম। বেশ ব্যস্ত সময় যাচ্ছিল। কাকে বিশ্বাস করে টাকা ব্যাংকে রাখতে দেব। ব্যাংক চলাকালীন শুটিংয়ে থাকতাম। আমার জীবনে অনেক ঘটনা ঘটেছে, যে কারণে কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনি।

নিজ বাসায় নিরাপত্তা না থাকলে কোথায় নিরাপত্তা থাকবে? আগে তো মানুষ টাকা বাসায়ই রাখত। এখন না হয় ব্যাংক হয়েছে। নিজের ঘরে নিরাপত্তা না পেলে পৃথিবীর কোথায় নিরাপত্তা পাব? বাবা-মাকে বিশ্বাস না করলে পৃথিবীর কাকে বিশ্বাস করব? আমাকে মানুষ দোষ দেয়, কিন্তু আমার সঙ্গে কী ঘটেছে তা দেখে না। বিশ্বাস করে ঠকেছি।

পপি বলেন, ছয় কাঠা জমি কেনার পর থেকে এখনো ভোগ করতে পারিনি। অথচ তাদের দাবিÑ সব জমি আমি দখলে রেখেছি, যা পুরোপুরি মিথ্যাচার। আমার টাকা দিয়ে যে জমি কিনেছি এবং বাবার থেকে যে অংশ পাব, তার ধারেকাছেই যেতে দেয় না। গেলে হিংস্র হয়ে যায়। মফস্বল সাংবাদিকদের দিয়ে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করায়। 

মান-সম্মানের ভয়ে এত দিন চুপ ছিলাম। এখন আর সম্ভব না। আমার সব কিছু মা আত্মসাৎ করেছেন। আমার টাকা থেকে শুরু করে স্বর্ণালংকার- সব কিছু নিয়েছেন। বাবাও এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যদিও বাবা এসব মায়ের প্ররোচনায় করেছেন। তারপরও বাবা অসুস্থ হলে পাঁচ বছর আমার কাছেই ছিলেন।

যোগ করে তিনি বলেন, রাস্তা দিলে ওদের জমির পরিমাণ কমে যাবে। যে কারণে রাস্তা দিচ্ছে না। যখনই সব বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম শত্রু হয়ে গেলাম। সর্বশেষ ওয়াসা ও বিদ্যুৎ অফিস থেকে দুটি পৃথক নোটিশ আসে। সেই নোটিশ পাওয়ার পর খুলনা যাই। বৈধ জমিতে বিদ্যুৎ ও ওয়াসার মিটার নেওয়ার জন্য খুলনার সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করেছিলাম। 

নিয়মমাফিক আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে সরেজমিনে কর্মকর্তারা সেদিন এসেছিলেন। তার জমির কাগজ থেকে শুরু করে সব প্রমাণ দেখাই। এরপরই নতুন করে আমার পিছু লাগে। আমার যে সম্মান, সেটি ধ্বংস করার জন্য মা ও ভাইবোনেরা মিলে থানায় মিথ্যা জিডি করেছেন। 

এই জিডির কোনো সত্যতা নেই। যখন এসব সহ্য না করে কথা বলি, তখন বিষয়গুলো ধামাচাপা দিতে সবাই মিলে আমার সংসারজীবন প্রকাশ্যে আনে। মূল ঘটনা থেকে ফোকাস সরাতেই তারা কৌশলে এটা করেছে।

মায়ের কথা উল্লেখ করে পপি বলেন, মা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ১১ কাঠা জমির খাজনা দিয়েছি। আমার নামে যে ছয় কাঠা জমির দলিল, আমি শুধু তার খাজনা দিয়েছি। বাকি পাঁচ কাঠা নামে না থাকলে কীভাবে দেব। মা প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছেন। এ জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের বিচার-বিশ্লেষণ করে লেখার অনুরোধ রইল।

মায়ের বিরুদ্ধে সংসার ভাঙার অভিযোগ এনে পপি বলেন, নিজের কোনো শখ-আহ্লাদও পূরণ করিনি। নিজের সবটা দিয়ে পরিবারকে দেখেছি। সেই মা আমার স্বামী ও সন্তান নিয়ে মিডিয়ায় ছোট করেছে। আমি চেয়েছিলাম সময়-সুযোগ বুঝে স্বামী-সন্তান নিয়ে কথা বলব। কিন্তু খুব বাজেভাবে স্বামী ও সন্তানকে উপস্থাপন করেছে। আমি বিয়ে করে সংসারী হয়েছি। 

আমার শেষ আশ্রয় যেটা ছিল, যে আমাকে আশ্রয় দিয়েছে; জীবন বাঁচাতে দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু সেই মানুষটাকেও অসম্মান করেছে। সংসার নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এটা পৃথিবীর কোনো মা করতে পারে না। শ্বশুরবাড়ি ফোন করে নানা মিথ্যাচার করেছে। আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য বলেছে। যাদের উপকার করেছি, তারা আমার ক্ষতি করছে।

শ্বশুরবাড়িতে যে সম্মানে থাকব তা-ও দিচ্ছে না। প্রতিনিয়ত অসম্মানিত করছে। এ জন্য উঠতে-বসতে কথা শুনতে হয়। বিয়ে করেছি, সামনে আনিনি। এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। অন্যায় কিছু করিনি। প্রতিটি মানুষের একট ব্যক্তিগত বিষয় থাকে। আমি চাইনি আমার ব্যক্তিগত বিষয় মিডিয়ায় আসুক।

আমার জীবনের ঝুঁকি ছিল। বিয়ের কথা শুধু মা জানতেন না, পরিবারের বাকি সবাই জানতেন। বাবা উপস্থিত ছিলেন। এমনিতেই মা-বোনরা আমাকে মেরে ফেলতে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা জানলে আমাকে মেরে ফেলত। মা হয়ে সন্তানের সঙ্গে সারাক্ষণ ধান্দাবাজি করেছে। বাবার চিকিৎসা বাবদ পাঁচ বছরে কোটি টাকার বেশি খরচ করেছি। তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তার চিকিৎসায় অবহেলা করেছে। আমার বাসায় এনে সুচিকিৎসা দিয়েছি।

পপির সঙ্গে তার মা-বোন যে অন্যায় করছে তা ভাই দীপু স্বীকার করেছেন, যার কয়েকটি ভিডিও দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে। সেই ভিডিও দেখে এমনটাই জানা গেছে। তবে পপির অভিযোগ সত্য নয়, দাবি মা ও বোনের। পপি বলছেন তার কাছে জমি ক্রয়ের দলিল এবং তার ব্যাংক থেকে বোনের ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করার স্টেটমেন্ট রয়েছে। পপির পাঠানো দলিলে ৬ কাঠা জমি ক্রয়ের সত্যতা পাওয়া গেছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!