বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং পতিত আওয়ামী লীগ ও স্বৈরাচার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যাবর্তন করাতে আদাজল খেয়ে নেমেছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। দেশটির জাতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (‘র’) দিয়ে গোপন মিশনে নেমেছে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির নীলনকশায় বাংলাদেশে ৩০০ মানুষকে কিলিংয়ের (হত্যা করা) টার্গেট পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া নানা অজুহাতে পরিকল্পিত আন্দোলন-বিক্ষোভ করিয়ে আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ভয়াবহ তথ্য জানা গেছে।
তবে বিষয়টি টের পেয়ে এরই মধ্যে সব গোয়েন্দা সংস্থাকে সতর্ক করা হয়েছে। এদিকে, গত মঙ্গলবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় মিডিয়ায় পরিকল্পিতভাবে অনবরত মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে। আইএসপিআর ‘দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবিচল রয়েছে।’
তবে এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা প্রধান যুগ্ম কমিশনার রেজাউল করিম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সরকারপ্রধানের নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের গোয়েন্দাগুলো নিরলসভাবে কাজ করছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে।
দেশে যারাই অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে আমরা দমন করব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে দেওয়া হবে না।
বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার টার্গেট কিলিং মিশন বা অপতৎপরতার তথ্য গণমাধ্যমের মাধ্যমে পাচ্ছি, এসব বিষয়ও আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্র দেশের অগ্রযাত্রাকে রুখতে পারবে না বলেও জানান ডিবিপ্রধান।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে দেশটি অর্থাৎ ক্ষমতাসীন মোদি সরকার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করতে বহুমুখী ষড়যন্ত্র করেছে এবং তা বর্তমানেও চলমান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে টক্করে পেরে না ওঠায় ভারত এবার এক ভয়ানক পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।
দেশটির শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ তাদের মিত্র আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে কৌশলে অরাজক-নৈরাজ্য পরিবেশ তৈরির প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের রক্তের হলিখেলা খেলতে মরিয়া চেষ্টা চালানোর ছক কষেছে।
এদিকে, পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও থেমে নেই ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রেখে ভারত বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থ লুটে নিয়েছে। পাশাপাশি নানাভাবে বাংলাদেশকে ক্ষতির মুখে ফেলে ভারতীয় স্বার্থ উদ্ধার করেছে।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে অনবরত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। গুজব ছড়ানো ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ, সরকার ও গণমাধ্যম শক্তভাবে তা প্রতিহত করে আসছে। তবুও থেমে নেই ভারতীয় ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশের সিংহভাগ সাধারণ মানুষের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে জি¦-হুজুর বা গোলাম টাইমের মিত্র আওয়ামী লীগের বাইরে ভারত আর কিছু মানতে বা বুঝতে চায় না। কেননা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের স্বার্থ হাসিল হয়।
টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করতে ‘র’ এরইমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে। ড. মোহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার এই তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও কলকাতার একাধিক রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সূত্র বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিতে বলার পাশাপাশি জনসাধারণকে সর্বদা সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
ভারতীয় সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার হলো-সদ্য গঠিত তরুণদের রাজনৈতিক দল ও বর্তমান সরকারকে নভেম্বরের মধ্যে হিযবুত তাহরীর ও শিবির প্রভাবিত সরকার বলে একটা অস্থিরতা তৈরি করা। অন্যদিকে নির্বাচনের পরিবেশের কথা বলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে নিয়ে আসা।
‘র’ বাংলাদেশের মানুষের মতামত নয়, তাদের অনুগত মিত্র আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করতে অভ্যস্ত। দীর্ঘদিন ভারত আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসন বৈধতা দিয়ে এসেছে। আগামীতেও তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে নিজেদের সব ধরনের গোপন ষড়যন্ত্র অস্ত্র ব্যবহার করছে।
সূত্রটি দাবি করেছে, বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ এবং প্রভাবশালী অন্তত অর্ধলক্ষ নেতাকর্মী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আত্মগোপনে আছেন। যারা ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে বিভিন্ন সময়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।
এই অংশটি প্রথমে বিতর্কিত উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনকে দিয়ে একটি আন্দোলনময় পরিস্থিতি তৈরি করে দেশকে কিছুটা অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। কিন্তু বিষয়টি আলোচনায় আসতেই তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতা চিন্ময় প্রভুকে আইনের আওতায় নিয়ে আসে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এখানে ব্যর্থ হয়ে দেশটি বাংলাদেশের টুঁটি চেপে ধরতে সীমান্ত এলাকাসমূহে কাটা তারের বেড়া দেওয়াসহ নানা ইস্যুতে ক্রমাগতভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিতে চাইছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অর্থাৎ বিজিবি ভারত সীমান্তে দাদাগিরি ফলানো রুখে দিলেও আওয়ামী লীগের মিত্র ‘র’ একের পর এক ষড়যন্ত্র করেই চলছে।
অভিন্ন তথ্য দিয়ে কলকাতার একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ধর্ষণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশ উত্তপ্ত। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গেম সাজিয়েছে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী ‘র’। সংস্থাটি তাদের মিত্র শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যাবর্তন করতে বিরোধী মনস্ক ’২৪ এর আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৩০০ মানুষকে হত্যার একটি মিশন নিয়েছে।
কলকাতায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের কজন সাবেক এমপির দেওয়া তালিকা অনুসারে এই ভয়ংকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ তাদের মিশন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে চাইছে, সেক্ষেত্রে কিছুদিন বিলম্বও হতে পারে।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্কের ভাঙন ধরিয়ে এবং ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি দেশবাসীর কাছে ভয়াত্মক রূপে প্রকাশ করতে চাইবে।
দেশের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার দুজন শীর্ষ কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ৫ আগস্টের পর থেকেই বাংলাদেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা। আর তাদের এই ষড়যন্ত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দেশে-বিদেশে পলাতক নেতাকর্মীরা।
সাইবার জগৎকে ব্যবহার করে এবং গত দেড় দশকে অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে তারা দেশকে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে চায়। ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও ড. ইউনূস সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ঢাকাসহ সারা দেশে আন্দোলনের নামে নানাভাবে অরাজক-নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এরই মধ্যে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চায় যারা তাদের তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের অনেকেই সরকারে থেকে তথ্য পাচার ও ষড়যন্ত্রে জড়িত এমন তথ্য উঠে এসেছে। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, র্যাবের সবকটি ব্যাটালিয়ন ও গোয়েন্দা ইউনিট সারা দেশে এবং সীমান্তে বাড়তি নজরদারি বাড়িয়েছে। র্যাব সদস্যরা দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বদা সচেষ্ট।
সীমান্তে, বন্দরগুলো ও সাইবার জগতে আমরা সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি এবং মনিটরিং অব্যাহত রেখেছি। র্যাব ফোর্সেস দেশ ও জণগণের নিরাপত্তায় দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, যে বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা এখনো পর্যন্ত জানি না। তবে গত ৫ আগস্টের পর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। বিশেষ করে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়ত অব্যাহত আছে।
বিপ্লব প্রতি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমাদের দীর্ঘ সময় যেতে হয়েছে। কিন্তু আমরা ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্রগুলো প্রতিহত করছি। দেশের পক্ষে নীতিগতভাবে আমাদের যে অবস্থান এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ও সব ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে আমাদের যে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তা অব্যাহত থাকবে।
স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে তৎপর হতে নির্দেশ দিয়েছে। দেশে যেন কোনো ধরনের অপতৎরতা না হয়। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাওয়া দেশি-বিদেশি চক্রকে কঠোর হাতে মোকাবিলা করতে ড. ইউনূসের সরকার সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, বিজিবি সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরীর কাজ করছে। সীমান্তে কোনো ধরনের অপরাধ হতে দে য়া হবে না। বিজিবি সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রেখেছে। দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড শক্তভাবে প্রতিহত করা হবে।
জানা গেছে, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বর্তমানে সাউথ দিল্লির একটি সরকারি আবাসিকে অবস্থান করছেন। ভবনটি ভারতের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টিলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) সুরক্ষা দিচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ডজনখানেক হাই-প্রোফাইল মিটিং করেছেন তার সঙ্গে।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ‘র’প্রধান নিজে শেখ হাসিনার দেখভাল করছেন এবং তার সঙ্গে প্রায়ই বৈঠক করছেন। মোদি সরকার দুই দিকেই সহমত জানিয়ে চলতে চায়। প্রথমত, ঢাকার নতুন সরকার ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গতিবিধি নজরদারি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য কূটনীতিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মার্চের ২৬ তারিখের আগেই একটি মিশনের টার্গেট ধরা হয়েছে। অপর মিশনটির টার্গেট ধরা হয়েছে নভেম্বর মাস। দেশে ইসলামপন্থিদের একজোট করে ড. ইউনূস সরকারকে বিতর্কিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) ইনামুল হক সাগর রূপালী বাংলাদেশকে জানান, বাংলাদেশ পুলিশের পেশাগত দায়িত্বই হচ্ছে জনজীবনের এবং সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা।
দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টিকারী বা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের পুলিশ আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। এরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে কেউ উদ্যত হলে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পুলিশ সচেষ্ট। পাশাপাশি পুলিশ সাইবার পেট্রোলিং অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান রূপালী প্রতিবেদককে জানান, যে বা যারাই অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করুক না কেন পুলিশ তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে মোকাবেলা করবে।
আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারী সে যেই হোক না কেন, ডিএমপির সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করবে। রাজধানীর নিরাপত্তায় অগ্রিম গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ডিএমপির সবকটি ইউনিট।
দ্য রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) ভারতের গোপন বৈদেশিক গুপ্তচর সংস্থা। এই সংস্থার জন্ম ১৯৬৮ সালে। চীনের সঙ্গে যুদ্ধকালে ভারতের গোয়েন্দাবৃত্তির ব্যাপক ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে। ১৬ জুলাই যখন হাসিনা সরকার শিক্ষার্থীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়, তখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সরকারের অনুকূলে চলে যায়।
পরবর্তীতে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিশেষ অনুরোধ ও ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টার সরাসরি তদারকিতে বাংলাদেশে ‘র’ এর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪০০ কর্মকর্তা পরিচয় লুকিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে গুলি ও নির্যাতনের পরিকল্পনা ‘র’ এর কাছ থেকে আসে।
তারা আন্দোলন কাশ্মীরি কায়দায় দমন করে তারা দিল্লি ফেরেন ২৮ জুলাই। কিন্তু ৫ আগস্ট পরিস্থিতি সামলাতে ‘র’ পুরোপুরি ব্যর্থ হন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দিল্লি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া নয়। ২ আগস্ট প্লান ‘সি’ এর অংশ হিসেবে এই পরিকল্পনা করে রাখে হাসিনা ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিদ ডোভাল। ভারত দক্ষিণ এশিয়াকে তার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অঞ্চল হিসেবে দেখে।
ফলে এসব দেশের ব্যাপারে নিরাপত্তা উপদেষ্টার একটা হস্তক্ষেপ থাকে। ‘র’ ৫ আগস্টের পর ১০ আগস্ট সংখ্যালঘুদের সমাবেশের আড়ালে একটি প্রতিবিপ্লব করার পরিকল্পনা করে। তার জন্য বিপুলসংখ্যক ভারতীয় সাংবাদিকও সেদিন ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন। সেটি ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় ক্যু পরিকল্পনা করা হয় ১৫ আগস্ট। সেটিও ব্যর্থ হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সেনাবাহিনী নিয়ে ভুয়া খবরের প্রতিবাদ: ভারতের কিছু গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গত মঙ্গলবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক প্রতিবাদলিপিতে এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়।
তাতে বলা হয়েছে, সেনাপ্রধানের দক্ষ নেতৃত্বের অধীন সেনাবাহিনী সুসংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ ও সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইএসপিআর বলছে, দ্য ইকোনমিক টাইমস ও দ্য ইন্ডিয়া টুডেসহ ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত একের পর এক ভিত্তিহীন ও মনগড়া প্রতিবেদন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
ওইসব প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর ভেতরে অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা এবং শৃঙ্খলা (চেইন অব কমান্ড) ভেঙে পড়ার কথা বলা হয়েছে। এসব প্রতিবেদন পুরোপুরি মিথ্যা এবং সেগুলো বাংলাদেশ ও এর সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম ও স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন করার জন্য পরিকল্পিত অপপ্রচারের অংশ বলে প্রতীয়মাণ হয়।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলছি যে, সেনাপ্রধানের দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের চেইন অব কমান্ড শক্তিশালী রয়েছে এবং জ্যেষ্ঠ জেনারেলরাসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব সদস্য সংবিধান, চেইন অব কমান্ড ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আনুগত্যে অবিচল।
সেনাবাহিনীর মধ্যে অনৈক্য বা আনুগত্যহীনতার যেকোনো অভিযোগ পুরোপুরি বানোয়াট ও বিদ্বেষপূর্ণ। এটা বিশেষভাবে উদ্বেগের যে, দ্য ইকোনমিক টাইমস বারবার এ ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। সর্বশেষ এই প্রতিবেদনের মাত্র এক মাস আগেও ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি এই গণমাধ্যমে একই ধরনের মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল।
পেশাগত এ আচরণের কারণে এসব সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন ওঠে। এ ছাড়া বেশকিছু অনলাইন পোর্টাল ও কয়েকটি অখ্যাত টেলিভিশন চ্যানেল এসব মিথ্যা প্রচার করেছে, যাতে অপপ্রচার আরও তীব্র হয়েছে।
মনে হচ্ছে, তারা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার নীতি মেনে চলার পরিবর্তে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরির হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।’
আপনার মতামত লিখুন :