হবিগঞ্জের শাহজিবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি প্ল্যান্টের একটি কোনো রকমে চলছে, যা থেকে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বাকি দুটির মধ্যে ১০০ মেগাওয়াটের প্ল্যান্টটি উদ্বোধনের পর চার বছরে মাত্র ৬৭ দিন চলেছে।
সবচেয়ে বড় ৩৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্ল্যান্টটি ২০২২ সালে আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে এটি মেরামতে কালক্ষেপণ করা হয়েছে, ফলে এখনো এটি উৎপাদনে সক্ষম হয়ে ওঠেনি। এ কারণে এ দুটি প্ল্যান্টে ৪ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশের মানুষ। এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে উৎপাদনে থাকা ৩৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্টটিতে ২০২২ সালের ২৯ মে আগুন লাগে। এর তিনটি ট্রান্সফরমারসহ বেশ কিছু যন্ত্রাংশ পুড়ে যায়, যা মেরামতের জন্য তৎকালীন জ্বালানিসচিবের নির্দেশে সে বছরের অগাস্টেই প্রস্তাব পাঠানো হলে বোর্ড সম্মতিও দেয়, যা বাস্তবায়ন হলে তিন মাসেই উৎপাদনে ফেরানো যেত প্ল্যান্টটি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে কালক্ষেপণ করা হয়।
সেই ক্রয় প্রক্রিয়া বাতিল করে প্রায় ১৫ মাস পর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। সে প্রক্রিয়ায় যায় আরও ৯ মাস। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বাংলাদেশি একটি কোম্পানির সঙ্গে আট মাসে একটি ইউনিট সংস্কারের চুক্তি হয়। যে কারণে প্রায় ২৪ মাসেও উৎপাদনে যেতে পারেনি প্ল্যান্টটি।
প্রস্তাব অনুযায়ী সংস্কার হলে তিন মাসেই উৎপাদন সম্ভব ছিল। সে হিসাবে বাকি ২১ মাসে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ, যা রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট ও আমদানি মূল্যের সঙ্গে তুলনা করলে প্রতিদিন ৪ কোটি টাকার ক্ষতি। ২১ মাস হিসেবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সূত্র বলছে, বিগত সময়ে সরকারি প্ল্যান্টগুলো চালু রাখার বিষয়ে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ ষড়যন্ত্র করে তারা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকেই বিদ্যুৎ কিনেছে। তাতে তারা কীভাবে লাভবান হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তহবিল গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তা বরাদ্দ দিতে নানা টালবাহানা ছিল। মূলত বেসরকারি প্ল্যান্টকে সুবিধা দিতেই সরকারি প্ল্যান্টগুলো বন্ধ রাখার চেষ্টা ছিল। সরকারের ভেতরে ও বাইরের লোকজন মিলেই এই ষড়যন্ত্র করেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ উৎপাদন বোর্ডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এই ক্ষতির দায় সাবেক সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বোর্ড সুপারিশ করলেও তিনি চাননি বলেই দ্রুত সংস্কার হয়নি।
কেন্দ্রটির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি এপ্রিলেই একটি চালু করতে পারব। এতে ১১০ মেগাওয়াট উৎপাদন সম্ভব হবে। বাকি ২২০ মেগাওয়াটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দ্রুত সেই দুটি ইউনিটও সংস্কারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ সচল হবে, তা তিনি বলতে পারেননি।
অন্যদিকে ৮৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত ১০০ মেগাওয়াট প্লান্টটি পরীক্ষামূলক চালু হয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু বারবার যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায় সর্বশেষ বন্ধ হয় ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল।
চার বছরে প্ল্যান্টটি চলেছে মাত্র ১৬১০ ঘণ্টা বা ৬৭ দিন। শুধু পুরোনো মেয়াদোত্তীর্ণ একটি ৬০ মেগাওয়াটের প্ল্যান্ট বর্তমানে চালু আছে, যা থেকে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট উৎপন্ন হচ্ছে। অবিলম্বে শাহজিবাজারে স্থাপিত অচল প্ল্যাটগুলো সচল করলে বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ সম্ভব বলে অভিজ্ঞরা জানিয়েছেন।