তারুণ্যের ভিড় আজিজ সুপার মার্কেটে

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৫, ১২:৩৩ এএম

তারুণ্যের ভিড় আজিজ সুপার মার্কেটে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

একটা সময় শিল্প আর সংস্কৃতিকর্মীদের আড্ডায় মুখর থাকত রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট। পাশাপাশি ছিল জনপ্রিয় ও দুর্লভ বইয়ের দোকানসহ নানা প্রকাশনা সংস্থার অফিস। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এই পুরো মার্কেটেই এখন দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকান। 

তবে মার্কেটটিতে আনাগোনা করা তরুণদের ধরে রাখতে এসব ব্র্যান্ডও তৈরি করছে তরুণদের চাহিদামতো পোশাক। তাই কোনো ঈদ কিংবা অন্য কোনা উৎসব, এমনকি স্বাভাবিক সময়ে মার্কেটজুড়ে ভিড় জমান তরুণ ক্রেতারা। এই ঈদের কেনাকাটায়ও ব্যতিক্রম হয়নি। 

গতকাল শনিবার মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে ক্রেতদের কেনাকাটায় মুখর হয়ে উঠেছে মার্কেট। তবে ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও নানামুখী কারণে আগের মতো ততটা বিক্রির চাপ নেই বলে দাবি করে বিক্রেতারা জানান, বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে দেশীয় পোশাকের সমারোহ থাকলেও আশানরূপ সাড়া মিলছে না। তবে ক্রেতারা আজিজ সুপারে শপিং করে সন্তুষ্ট প্রকাশ করছে পোশাকের মান ও দাম নিয়ে।

একদিকে বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা, অন্যদিকে ডিজাইনে আধুনিকতার ছোঁয়া। আবার গরমকে প্রাধান্য দিয়ে আরামদায়ক কাপড়ের ব্যবহার। ক্রেতাদের আগ্রহের কথা মাথায় রেখে প্রতিবারের মতো শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট সেজেছে দেশীয় পোশাকে। আধুনিক ডিজাইনের দেশীয় পোশাক চোখে পড়ার মতো। 

ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়াতে ৫০টিরও বেশি ডিজাইনে থাকছে ব্লক ও হাতের কাজ। থ্রিপিসের দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০, ওয়ানপিস ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ আর পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে মানভেদে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। ক্রেতারা জানান, ঈদ উলপক্ষে আজিজ মার্কেটে নতুন নতুন পোশাক এসেছে। 

তবে দাম কিছুটা বাড়তি মনে হচ্ছে। আজিজের নিচে থেকে ছেলের জন্য টিশার্ট কিনেছি। নিজের জন্য কামিজ এবং থ্রিপিস নিয়েছি দ্বিতীয় তলা থেকে। শাড়ি নিয়েছি তৃতীয় তলা থেকে। প্রতি ঈদে আজিজ থেকে শপিং করি, এখানে দেশীয় ও সুতি কাপড়ের সমাহার থাকে। কাপড়ের মানও ভালো থাকে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, আজিজ সুপার মার্কেটের নিচতলায় প্লাস হাউজে পাঞ্জাবি ও শার্টের মেলা। প্লাসের বিক্রেতা মামুন জানান, ক্রেতার ভিড় ভালো, তবে গত ঈদের থেকে এবার এখনো আজিজ ততটা জমে ওঠেনি। আমরা আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যে আরও জমে উঠবে। 

নিচতলায় ইজি, হিসট্রোরি, এক্সেপো, ফেরারিসহ নানা ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। দ্বিতীয় তলায় মুনা, লন্ঠন, ইমেজ, হিজস্টোরি, বাংলা, গাওগ্রামের শোরুমগুলোতে শার্ট, পাঞ্জাবি টিশার্ট কিনতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। 

লন্ঠনের ম্যানেজার আশিক উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের পাঞ্জাবি পছন্দের শীর্ষে থাকে। দেশি পণ্য ও মানের দিক থেকে আমরা কোনো প্রকার আপস করি না। যে কারণে আমাদের কিছু নির্দিষ্ট ক্রেতা রয়েছেন, একই সঙ্গে ঈদ উপলক্ষে এবার বেশ শুরু থেকেই বেচাকেনা জমে উঠেছে।’ তৃতীয় তলায় বাটিক, ওড়না, থ্রিপিস, টুপিস, ওয়ানপিস ও শাড়ির দোকানগুলোতে নারী ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা যায়। 

তাসনিম নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘আজিজের ওয়ানপিস, ওড়না ও শাড়ি উৎসব থেকে শুরু করে সব সময় নিয়ে থাকি। তাদের দাম যেমন সাধ্যের মধ্যে, মানও অনেক ভালো।’

কাপড় ই বাংলার বিক্রেতা আনিস ক্রেতাসমাগমে খুশি হলেও দাবি করেন, আজিজ সুপার মার্কেট অনেকটাই হারিয়েছে সেই পুরোনো জৌলুস। তিনি এই মাকের্টে ১৩ বছর ধরে আছেন জানিয়ে বলেন, ঈদ উপলক্ষে বেড়েছে বেচাকেনা। তবে সেটি আগের তুলনায় অনেক কম। শেষ কয়েক দিনে বেচাকেনা আরও বাড়তে পারে।

দেখা যায়, ঈদকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন হাউজগুলো সেজেছে বাহারি সব পোশাকে। পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, শার্ট, প্যান্ট, টিশার্ট, ছোটদের পোশাক- সবকিছুতেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শতভাগ বাঙালিয়ানা। বিচিত্র রঙ্গের নকশায় পোশাকে তুলে ধরা হয়েছে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে।

ঢাবি শিক্ষার্থী তনু জাহান বলেন, ‘আমি এখান থেকে ঈদের শপিং করেছি। আমার বন্ধুদের সঙ্গে আজ তৃতীয়বারের মতো আসা। ফ্যাশন-সচেতন তরুণ-তরুণী ও সাধারণ ক্রেতাদের পছন্দ আজিজ মার্কেট। কম দামে ব্যতিক্রমী পোশাকের টানে এই মার্কেটে আমরা এসে থাকি।’ বিক্রেতারা জানান, ক্রেতাদের বেশির ভাগই শিক্ষর্থী। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। অনেকেই এসেছেন নিজের ও পরিবারের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে। বড়দের হাত ধরে কেনাকাটায় প্রাণবন্ত শিশুরাও।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!