তুমুল গণআন্দোলনে হাজারো প্রাণের বিনিময়ে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত হয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা।
ফ্যাসিবাদের দোসর এডমিন (প্রশাসন) ও পুলিশ ক্যাডারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি, ওএসডি কিংবা গ্রেপ্তারের মতো কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের সাত মাসের বেশি অতিবাহিত হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারের দোসররা।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব দুই মোমেনের সহচর এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে অসহযোগিতা, সরকারকে বিদেশের কাছে অজনপ্রিয় ও অগ্রহণযোগ্য করে তোলার কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বিদেশে ইতিবাচক ন্যারেটিভ তৈরি করতে পারেননি।
সাবেক রাষ্ট্রদূতসহ আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নেওয়া ও বিগত রেজিমের দোসর প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতো কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে মরক্কোর সাবেক রাষ্ট্রদূত হারুন আল রশিদ সরকারি নির্দেশ অমান্য করে প্রধান উপদেষ্টা ও বর্তমান সরকারকে সমালোচনা করে কানাডায় পালানোর মতো দুঃসাহস দেখিয়েছেন।
বিদেশি মিশন ও ঢাকায় এমন আরও অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। কেবল চাকরি টিকিয়ে রাখতে সামনে কেউ কেউ বর্ণচোরার মতো নিজেকে বিএনপি-জামায়াতপন্থি বলেও দাবি করছেন। এমন কর্মকর্তাদের দ্রুত শনাক্ত করে শুধু চেয়ার বদল নয়, কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে সরকারকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু হারুন আল রশিদ নয়, এমন আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন, ৫ আগস্টের পর তারা সরকারি নির্দেশ মেনে দেশে ফেরেননি। নানা অজুহাতে দেশে ফিরতে গড়িমসি করছেন। সাংবাদিক শাবান মাহমুদ ছাড়াও পররাষ্ট্র ক্যাডারের কয়েকজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিনেও সরকারি আদেশ মানেননি।
তারা আরও বলছেন, ফ্যাসিস্টদের গণহত্যার বিপক্ষে ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষে সমর্থন আদায়েও বিভিন্ন দেশে থাকা মিশনসমূহ কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনেও বাস্তব কোনো পরিকল্পনা নেই। এসব কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে সরকারে ইতিবাচক কর্মকাণ্ড বিদেশিদের চোখে আরও ধূসর হচ্ছে।
এদিকে পলাতক ও সরকারপ্রধানের কড়া সমালোচক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদ এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, একজন পেশাদার কূটনীতিকের অপেশাদার আচরণের জন্য তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
মরক্কোতে সদ্যবিদায়ী বাংলাদেশের এই রাষ্ট্রদূত হারুন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনে কানাডায় পালিয়ে গেছেন। রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার লক্ষ্যে তিনি সেখানে অবস্থান করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর তাকে দেশে ফিরে ‘অনতিবিলম্বে’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি দেশে না ফিরে কৌশলে কানাডা চলে যান।
শুক্রবার তার একটি ফেসবুক পোস্ট সবার নজর কাড়ে। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘ড. ইউনূসের অধীনে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত বাংলাদেশ-বিশ্বের নীরবতা বেদনাদায়ক’। ‘৫ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈধ সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।’ এমনটিও দাবি করেছেন এই কূটনীতিক।
কূটনীতিক হারুনের ফেসবুক পোস্ট সামনে আসার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কূটনীতিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মরক্কোতে বাংলাদেশের সদ্যবিদায়ী রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদ তার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি লেখা পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি পূর্ববর্তী নিপীড়ক ফ্যাসিবাদী সরকারের গুণকীর্তনের পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে গত ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে পরিস্থিতি ক্রমে নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে চিত্রিত করার অপচেষ্টা করেছেন।
পোস্টে হারুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ, প্রচেষ্টাসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করেছেন। এতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতি এবং বাস্তবতাকে সম্পূর্ণরূপে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ফেসবুকে এ ধরনের লেখা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এর বিষয়বস্তু গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এরূপ রচনা লেখকের গোপন উদ্দেশ্য বা অসৎ অভিসন্ধির ইঙ্গিত দেয়।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের আমলে ২৭তম পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন ফরেন সার্ভিসের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন। হাসিনার আমলে এই কর্মকর্তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রটোকল বিভাগে দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি দিল্লিতে তিন বছর, টোকিওতে তিন বছর, ইসলামাবাদে এক বছর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও তিনি দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও, তিনি গ্রিস, কাতার ও চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
প্রফেসর ইউনূসের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা তুলে ধরে বহির্বিশ্বে তেমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই ব্যর্থতা পররাষ্ট্র সচিবের এ ব্যাপারে উদাসীনতার ফল। বহুপক্ষীয় কূটনীতিতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আওয়ামী দোসরদের অনেককে তিনি বঞ্চিত কর্মকর্তা অভিহিত করে সুপারিশ প্রণয়ন করেছেন। ফ্যাসিস্ট আমলে জসীম উদ্দিন জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন। ওই সময়ে তিনি শেখ হাসিনার হাত থেকে এই পদক গ্রহণ করেন। ওই ছবির একটি পোস্ট তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে আপলোড করে লিখেছেন, ‘২০১৮ সালের ২৩ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে আমি প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে জনপ্রশাসন পদক গ্রহণ করি।’ কট্টর আওয়ামী সমর্থক ছাড়া কাউকেই জনপ্রশাসক পদক দেওয়া হতো না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের সাত মাসের বেশি অতিবাহিত হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারের দোসররা। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র সচিবের আশপাশের অনেকেই ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুগত সুবিধাভোগী কর্মকর্তা।
স্বৈরাচারের দোসর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনকে কর্মকর্তাদের ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভের মুখে সরিয়ে দেওয়া হলেও তার নিয়োগকৃত স্বৈরাচারের অনুগত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা এ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে আছে এখনো। এই মুহূর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে হস্তক্ষেপ করছে পলাতক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সহযোগী কুখ্যাত সামিয়া সিন্ডিকেট।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করছেন কোনো ত্যাগ-তিতিক্ষা ছাড়া বর্তমান সচিব এবং উপদেষ্টা তাদের কাক্সিক্ষত পদ পাওয়ার পর বৈষম্য নিরসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ তো নেননি বরং ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের প্রত্যক্ষভাবে প্রশ্রয় দিয়ে শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছেন।
পলাতক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের রাজশাহী এলাকার অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় শতাধিক কর্মচারীকে অবৈধভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি স্থায়ীকরণের ষড়যন্ত্র চলছে।
এসব অবৈধ নিয়োগ এবং চাকরি স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামিয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সাবেক মহাপরিচালক (প্রশাসন) এবং সাবেক পলাতক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের আপন ভাইয়ের বন্ধু ডিএম সালাউদ্দিন মাহমুদ এবং কয়েকজন সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বস্তরের কর্মচারীদের মধ্যে এই অবৈধ নিয়োগের ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি দূতাবাস বর্তমানে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী সরকারের সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির সুপারিশে টাকার বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত তার নিজ এলাকার প্রায় ৩০ জন কর্মচারী বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি করছেন।
এরমধ্যে একজন হলেন ইতালির মিলানে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে কর্মরত মোক্তার আহমদ। দীপু মনির ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন মোক্তার আহমদ। দীপু মনির সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। সেই মোক্তার টানা প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময় মিলানে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে বহাল তবিয়তে ছিলেন। মোক্তার তার ফেসবুকে নিয়মিত সরকারবিরোধী পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন।
সামিয়া আনজুম: পলাতক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের ঘনিষ্ঠ সহচর ও মোমেনের স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সামিয়া আনজুম লস এঞ্জেলসের কন্সাল্ জেনারেলের দায়িত্বে আছেন। আলগা মোমেন ও তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে সামিয়ার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মোমেন দায়িত্বে থাকাকালে বিদেশে পদায়ন, নিয়োগ, স্পর্শকাতর সব বিষয়ে সামিয়া সিন্ডিকেট প্রভাব বিস্তার করার বিষয়টি মন্ত্রণালয় সবার কাছে ওপেন সিক্রেট। অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারী পর্যায়ের ব্যক্তিদের সামিয়া ও তার পরিচালিত সিন্ডিকেটের কাছে ধরনা দিতে হতো। এমনকি সামিয়ার কাছে বিরাগভাজন হবার কারণে অনেকেই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভালো পোস্টিং পায়নি।
বিদেশে কোনো কর্মকর্তা পড়ালেখার বিষয়েও এই নারী কর্মকর্তার অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েও মুনতাসির মোর্শেদ নামে এক কর্মকর্তা শুধু সামিয়া আনজুমের আক্রোশের শিকার হয়ে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আরেক কর্মকর্তা শাহ আহমেদ শফি হেনস্তার শিকার হয়ে ৪ বছর রাষ্ট্রদূত পদ পাননি সামিয়ার যৌন হয়রানির মিথ্যা অভিযোগ ও আক্রোশের কারণে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত পাঁচ বছরে আলগা মোমেনের সময়ে সব অনাচার এবং বৈষম্যের মূল হোতা কুখ্যাত সামিয়া। ফ্যাসিস্ট সরকারের থিংক ট্যাংক সি আর আইর প্রধান ববি সিদ্দিকী, তার স্ত্রী পেপে সিদ্দিকী এবং অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে সামিয়ার ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি সর্বজনবিদিত।
ইকবাল আহমেদ: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সুবিধাভোগী, অযোগ্য ও দলবাজ কর্মকর্তা ফ্লোরিডায় নিযুক্ত কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ বিগত ১০ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিরোধীপক্ষের অফিসারদের সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণসহ তাদের মন্ত্রণালয়ে কোনঠাসা করে রেখেছিলেন।
তিনি দলবাজ ও চাপাবাজ হিসেবে বহুল আলোচিত। সামিয়া আনজুম এবং ইকবাল আহমেদ মিলে আলগা মোমেনের সময়ে মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র এবং সিনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অন্যায় নির্যাতন চালাত। দলবাজ সামিয়া ও ইকবাল যৌথভাবে মন্ত্রণালয়ের স্পর্শকাতর সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করত এবং পোস্টিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিল।
ফারুকুল ইসলাম: সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের একান্ত সহযোগী ফারুকুল ইসলাম টরেন্টোতে বাংলাদেশের কনসাল্ জেনারেল হিসেবে কর্মরত। ২৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সুবিধাভোগী তেলবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত।
কুখ্যাত সামিয়া সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য এই ফারুক। আলগা মোমেনের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রমোশন, পোস্টিংসহ স্পর্শকাতর সব বিষয়ে ফারুকের ভূমিকা ছিল লক্ষ্যণীয়।
ফারজানা দিনা: ফারজানা দিনা পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রুহানীর স্ত্রী। খুনি পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রূহানি বর্তমানে পলাতক। গোলাম রূহানী ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর আপন ছোট ভাই। বিগত সরকারের সময়ে বিরোধী মত দমনে দক্ষ এই কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ফারজানা দিনা সচিবের প্রশ্রয়ে বহাল তবিয়তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার দাপট বজায় রেখেছেন।
কানাডায় পালিয়ে যাওয়া কে এই হারুন আল রশিদ: সরকারি নির্দেশ মেনে দেশে ফিরে না এসে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া হারুন আল-রশিদকে ২০২৩ সালের অক্টোবরের শুরুতে আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে হারুন রাষ্ট্রদূত করে পাঠায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ২০তম বিসিএসের পররাষ্ট্র ক্যাডারের এ কর্মকর্তা ওই সময় কানাডায় উপ হাই কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।
২০০১ সালে ফরেন সার্ভিসে যোগ দেওয়া হারুন এর আগে রোম, কায়রো, মেক্সিকো সিটি ও মাদ্রিদে বিভিন্ন কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন পদ সামলানোর ধারাবাহিকতায় জনকূটনীতি অনুবিভাগে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনের সময় অটোয়া মিশনে পাঠানো হয় তাকে। গত অগাস্টে সরকার পরিবর্তনের পর ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন এই কূটনীতিক।
আপনার মতামত লিখুন :