ভয়েস মেইল সেবা (ভিএমএস) ও মাল্টিমিডিয়া মেসেজ সার্ভিস (এমএমএস) বন্ধ করতে যাচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও) বাংলালিংক। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই সেবা দুটির চাহিদা না থাকায় গ্রাহকদের জন্য এসব সেবা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে অপারেটরটি।
এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অনুমতিও পেয়েছে বাংলালিংক। দ্রুতই গ্রাহকদের এ বিষয়ে অবহিত করবে বলেও জানিয়েছে অপারেটরটি। এর আগে ২০২৪ সালে আরও একটি অপারেটর এই সেবাগুলো বন্ধ করেছিল।
ভয়েস মেইল সার্ভিস বা ভিএমএসের মাধ্যমে একজন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী অপর প্রান্তের ব্যবহারকারীর জন্য একটি অডিও বার্তা রাখতে পারেন। অপর প্রান্তের ব্যবহারকারী অন্য কোনো কলে থাকলে বা ফোন রিসিভ না করলে বা তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকলে কল দেওয়া ব্যবহারকারীরা সেই অডিও কল সংরক্ষণের সেবা নিতে পারেন।
এজন্য আলাদা করে মোবাইল ডেটা বা ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, এমএমএসের মাধ্যমে এসএমএসের মতো টেক্সট মেসেজের পাশাপাশি ছবি, অডিও, ভিডিও এবং অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট পাঠানো যায়। তবে এমএমএস সফলভাবে পাঠাতে প্রেরক ও প্রাপক উভয়ের ফোনে যথাযথ সেটিংস এবং ফিচার থাকতে হয়।
মোবাইল ফোন সার্ভিস সম্পর্কিত রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইনের অনুচ্ছেদ ১২.৯ অনুযায়ী, মোবাইল অপারেটররা গ্রাহকদের এসব সেবা দিয়ে থাকে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের ব্যাপক প্রচলনের আগে অনেক মোবাইল ব্যবহারকারীর কাছে এমএমএস ছিল বেশ আকর্ষণীয় বিষয়।
তবে বর্তমান সময়ে এই সেবা সেকেলে হয়ে উঠেছে। গত মাসে বিটিআরসিকে দেওয়া এক চিঠিতে বাংলালিংক জানায়, সফলভাবে ডেলিভারি হওয়া ভিএমএস ও এমএমএসরে সংখ্যা খুবই নগণ্য। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৪০টি ভিএমএস এবং ৮০টি এমএমএস সফলভাবে ডেলিভারি হয়।
অপারেটরটির ব্যবহারকারীদের নেওয়া ভিএমএস ও এমএমএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোবাইল ফোন গ্রাহকসংখ্যা যতটা বাড়ছে, সেই তুলনায় ভিএমএস সেবার প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ তুলনামূলক কম। সাবস্ক্রিপশনের সংখ্যা বাড়লেও সেই তুলনায় ভিএমএস হিট কাউন্ট কম। একই অবস্থা এমএমএসের ক্ষেত্রেও।
গত ডিসেম্বরে বাংলালিংকের গ্রাহকদের মাঝে ভিএমএসের সাবস্ক্রিপশন সংখ্যা ছিল ৭৫৫; তবে হিট কাউন্ট ছিল মাত্র ১৯৬টি। একইভাবে গত ৩১ ডিসেম্বর বাংলালিংকের গ্রাহকেরা ৩০২টি এমএমএস আদান-প্রদানের চেষ্টা করেছেন, তবে সফলভাবে ডেলিভারি হয়েছে মাত্র ১১৬টি।
টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ই-মেইল, হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও ক্লাউড সেবার মতো নতুন প্রযুক্তিগত সেবা এখনকার ব্যবহারকারীদের কাছে বেশি প্রিয়। এই অ্যাপলগুলোর মাধ্যমে দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগ করা হয়, যা ভিএমএস ও এমএমএসের স্থান দখল করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ভিএমএস ও এমএমএস বন্ধে বাংলালিংকের আবেদনটি মঞ্জুর করেছে বিটিআরসি। তবে বিষয়টি সেবা বন্ধের ৯০ দিন আগে গ্রাহকদের জানাতে বাংলালিংককে নির্দেশনাও দিয়েছে কমিশন। মোবাইল ফোন সার্ভিস সম্পর্কিত রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইনের অনুচ্ছেদ ১১ অনুযায়ী, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি সাপেক্ষে এ ধরনের সেবা বন্ধের অন্তত ৯০ দিন আগে গ্রাহকদের অবহিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই সেবার এখন আর চাহিদা নেই। এগুলোর ব্যবহার নেই বললেই চলে। প্রযুক্তিই বদলে গেছে। বিটিআরসির অনুমতি যেহেতু পাওয়া গেছে, সেবাগুলো দ্রুতই বন্ধের কার্যক্রম নেব।
তবে ঠিক কবে থেকে এই সেবা বন্ধ করা হবে, সেটা এখনই বলতে পারছি না। যেহেতু অনুমতি পাওয়া গিয়েছে, আমার মনে হয়, গ্রাহকদের এখন থেকেই বিষয়টি বলে দেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :