ডিএফওর বাসভবনে গরুর খামার

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৫, ১২:৪০ এএম

ডিএফওর বাসভবনে গরুর খামার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম। গত বছর অক্টোবরে কাপ্তাই পাল্প উড বন বিভাগ থেকে বদলি হয়ে এখানে আসেন।

ডিএফও হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও পোস্টিং বাণিজ্য এবং পরিচালন খাতসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এর আগে কাপ্তাই বাগান বিভাগে (পাল্প উড) ছিলেন। তার আগে বন অধিদপ্তরে সুফল প্রকল্পের ডিপিডি ছিলেন।

সুফল প্রকল্পের পিডি গোবিন্দের সঙ্গে মিলেমিশে সারা দেশে সুফল প্রকল্পের নামে হরিলুট করা অর্থ থেকে কমিশনভিত্তিক অর্থ নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন। যোগ দেওয়ার পর পরিচালন ব্যয় খাত (মেইনটেনেন্স), সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প, সুফল প্রকল্পের এফআরসিআরপি বাবদসহ ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তা বরাদ্দ পান ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে লাখে ৩১% কেটে নেওয়া হয় বলে কয়েকজন রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান।

এদিকে, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার জন্য বরাদ্দ করা সরকারি বাস ভবনের পাশে গরুর খামার ও বন মোরগ দিয়ে পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে তোলা হয়েছে। আর সেখানে কাজ করছে আউট সোর্সিংয়ের চারজন কর্মচারী। প্রতি মাসে ৬৬ হাজার টাকা সরকারি বেতন (প্রতিজন ১৬ হাজার ৫০০ টাকা) নেওয়া কর্মচারীরা অফিসের চেয়ে ডিএফওর নিজের গড়ে তোলা খামার ও পোল্ট্রি ফার্মেই সময় ব্যয় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গরুর খামার ও বন মোরগ দিয়ে পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে তোলার বিষয়টি অবগত রয়েছেন বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। 

গরু ও মুরগি পরিচর্যায় নিয়োজিত রয়েছেন সরকারি বেতনভুক্ত আউট সোর্সিংয়ের চারজন কর্মচারী। তারা হলেন, জয়দেব, মো. ফোরকান, তন্ময় চাকমা ও কারি রাম। সরকারি বেতন নেওয়া ওই সব কর্মচারী বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অফিসের চেয়ে গরু ও মুরগি পরিচর্যার পেছনে সময় ব্যয় করেন। 

সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবনের ভেতরে যেতে চাইলে আউটসোর্সিং বনকর্মীরা বাধা দেন। পরে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনের সামনে একটি বড় গরুর গোয়ালাঘর তৈরি করা হয়েছে। ভেতরে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি গরু বাধা রয়েছে। গরু দেখাশোনায় থাকা ব্যক্তি এখানে বসবাস করেন। তবে বিষয়টি এড়িয়ে যান তন্ময় চাকমা ও কারি রাম। এ ছাড়া ভবনের বাইরে চারপাশে সবজি চাষ করার জন্য বাঁশের মাচা তৈরি করা হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বাস ভবনে সংরক্ষিত এলাকায় সরকারি এ বাস ভবনের ভেতরে রাখা গরুগুলোর তদারকিতে আছেন ডিএফও অফিসের আউট সোর্সিং স্টাফ তন্ময় চাকমা ও কারি রাম। সরকারি বাসভবনে গরু ও বন মুরগি রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, বিগত ২-৩ মাস থেকে এখানে গরু রাখা হয়। দিনে কিংবা রাতে সমান তালে আলোক বাতি ব্যবহার করে বিদ্যুতের অপচয় করতে দেখা যায় বাসভবনে গড়ে তোলা গরুর খামারে। 

গত বছর অক্টোবর মাসের পর থেকে সরকারি খরচে বরাদ্দ করা বাস ভবনের পাশে খামার তৈরি করা হয়েছে জানান স্থানীয়রা। গরু খামারে নিয়োজিত কর্মচারী তন্ময় চাকমা বলেন, এটা গরু রাখার ঘর কি না, আমি জানি না। আমাকে গরু দেখাশোনার জন্য রাখা হয়েছে। প্রতিদিন এখান থেকে গরু বের করে পরিচর্যা করা, ঘাস খাওয়াই এবং সন্ধ্যায় গোয়ালঘরে এনে গরু বেঁধে রাখি। গরুর দুধও বিক্রি করা হয়। মুরগিও বিক্রি করা হয়।

খামারের মালিক কে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে কথা না বলে, অন্যত্র মোবাইল ফোনে কথা বলতে চেষ্টা করেন। পরে জানান, ডিএফও নুরুল ইসলাম এই খামারের মালিক। 

অভিযোগের বিষয়ে ডিএফও নুরুল ইসলাম বলেন, সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরকারি খরচে খামার ও ফার্ম গড়ে তুলেন। এরপর এখন নতুনভাবে গরু কিনে ব্যক্তিগত খামার করা হয়েছে। আরও কিছু বিষয় জানতে চাইলে পরে জানাবেন বলে ফোনকল কেটে দেন এবং এ বিষয়ে প্রতিবেদন না করতে তার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিকে দিয়ে ফোনকলে অনুরোধ করান। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!