পোশাকশিল্পে অস্থিরতার শঙ্কা

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৫, ০১:৩৪ এএম

পোশাকশিল্পে অস্থিরতার শঙ্কা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শ্রমিক অসন্তোষের মুখোমুখি হয় তৈরি পোশাক শিল্প। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের সেই রেশ কাটেনি এখনো। সবচেয়ে বেশি অস্থিরতা ও অসন্তোষ দেখা দেয় গাজীপুর, আশুলিয়া-সাভার শিল্পাঞ্চলে। নানা অজুহাতে কারখানা অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চলছে। 

শিল্পাঞ্চলের অস্থিরতা বন্ধে সরকার ও মালিক পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও অস্থিরতা থামছে না কিছুতেই। এমন অস্থিরতার মধ্যেও নতুন করে শঙ্কা তৈরি করছে আসন্ন ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস। ইতিমধ্যেই বেতন-বোনাসকে ঘিরে আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছেন শ্রমিকরা। 

তাদের উসকানি দিয়ে শিল্পাঞ্চলে ফের অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল। ফলে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প এখন সংকটে। কথায় কথায় কারখানায় বিক্ষোভ, ধর্মঘট, আন্দোলন ও দাবি-দাওয়ার কবলে পড়ে ক্রয় আদেশ ও উৎপাদন ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। 

নানা ছুঁতোয় একদল কর্মী নানা ইস্যু সামনে এনে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে খারাপ বার্তা যাচ্ছে বহির্বিশ্বে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান এই খাত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ষড়যন্ত্রের। শিল্পে স্থিতিশীলতা না ফেরায় এর পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রের শিল্প ধ্বংসের ইন্ধন রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিদেশি অদৃশ্য শক্তি টাকা ছিটিয়ে দেশের এজেন্টদের দিয়ে শিল্পাঞ্চলগুলোকে অস্থিতিশীল করার জন্য পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ছে বলেও ধারণা তাদের। তবে সব ধরনের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই শিল্পাঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারত গেলেও তার দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে অচল করার সর্বশেষ ট্রাম্প কার্ড গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতাকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা। নানা অজুহাতে শ্রমিকদের ইন্ধন দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটছে। গাজীপুরের শ্রমিক অস্থিরতার নেপথ্যে কাজ করছে জাহাঙ্গীর বাহিনী। 

বিজিএমইএ বলছে, প্রায় ২০০ কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না হওয়ার শঙ্কা আছে। যার বেশির ভাগই ছোট এবং মাঝারি আকারের কারখানা। শিল্প মালিকদের শঙ্কা, বেতন-বোনাস নিয়ে আবারও শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হলে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সে ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে। 

সাম্প্রতি গাজীপুরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেডকোয়ার্টার্সে বিশেষ কল্যাণ সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম সড়ক অবরোধ করে ঈদের সময় যাত্রীদের চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘শ্রম মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন, ঈদের বোনাস ও মার্চ মাসের আংশিক বেতন ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। আমরা শ্রমিক ভাই ও বোনদের বলতে চাই, তাদের ন্যায়সংগত পাওনা আদায়ে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় আছি। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে থাকব।’

শ্রমিক নেতারা বলছেন, মালিকেরা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করলে শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে সরে আসার সুযোগ নেই। শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন নতুন কোনো দাবিতে নয়, বকেয়া বেতন ও ঈদের বোনাস পাওয়ার জন্য। অনেক কারখানায় শ্রমিকেরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনও পাননি। মার্চ মাসের শেষে ঈদের ছুটি। 

তার আগে মার্চের অর্ধেক বেতন দেওয়ার কথা বলেছেন মালিকেরা। এটা শ্রমিকদের প্রতি সুবিচার নয়। ঈদের আগে শিল্পাঞ্চলে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মালিক-শ্রমিক উভয়কে এগিয়ে আসতে হবে। 

ঈদের আগে যাতে সব কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেন, সেই নিশ্চয়তা থাকতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রেখে কখনো শিল্পাঞ্চলে স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যাবে না। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আগস্টের শেষদিকে গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় পোশাক শিল্পে শুরু হয় শ্রমিক অসন্তোষ। এ ছাড়া অসন্তোষ দেখা দেয় নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে। নির্ধারিত সময়ে বেতন প্রদান, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, বেতন বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে সড়ক, মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে শ্রমিকরা। 

বিক্ষোভের জেরে অনেক সময় কারখানায় ভাঙচুর, আগুন দেওয়া হয়। কারখানার কর্মকর্তাদের মারধরসহ বিভিন্ন বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়ছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। আর এ সুযোগে কিছু বহিরাগত কারাখানায় লুটপাট বা অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটায়। সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিকসহ দুই পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। 

এতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। একে একে বন্ধ হয়ে যায় বেশ কিছু কারখানা। দফায় দফায় বৈঠকে বসে সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিসহ নানাপক্ষ। বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যাংক থেকেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ ঋণ সুবিধা। সরকারের পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া হয় শ্রমিকদের ১৮ দফা। 

তারপরও মেলেনি সুফল। সর্বশেষ শ্রমিকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করে সরকার। যা গত ডিসেম্বরের বেতনের সঙ্গে ৯ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পাবেন শ্রমিকরা। সরকার ঘোষিত এ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ১৫ শতাংশ করার দাবিতেও অন্দোলন করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। 

গাজীপুরের এক শ্রমিক নেতা বলেন, শিল্পাঞ্চলে অরাজকতার সঙ্গে শ্রমিকরা জড়িত নয়। যারা বিশৃঙ্খলা করছে তারা বহিরাগত এবং আওয়ামী লীগের দালাল-চাটুকার। এরা আমাদের বাংলাদেশে যাতে গার্মেন্টস শিল্প না থাকে এ জন্য ওরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। অপর এক শ্রমিক নেতা বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুতের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপাকে ফেলতে নানামুখী অপতৎপরতা চলছে। আওয়ামী লীগের দোসররা শ্রমিকদের উসকে দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছে। আমাদের পোশাক খাতে অস্থিরতা মানেই ভারতের পোয়াবারো। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুরের এক গার্মেন্টস মালিক জানান, আমি তো নিয়ম অনুযায়ী কারখানা চালাচ্ছি। ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন দিচ্ছি। এরপরও আমার কারখানায় কেন ভাঙচুর করা হলো। একদল ছেলেপেলে কাজ বন্ধ করে কারখানা অচল করে দিতে চাইছে। এক দিন ফ্যাক্টরি বন্ধ ছিল। আমার তো ৩০ লাখ টাকা লস হয়ে গেছে। এটা কে দেবে বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি। 
এমন অস্থিরতার মধ্যে নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস। শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, চলতি মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস না পেলে, আবারও রাস্তায় নামতে পারে শ্রমিকরা। 

গতকাল মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরে বকেয়া বেতন এবং বোনাসের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ‘ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড’ কারখানার শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন চালক ও সাধারণ যাত্রীরা। পরে দাবি পূরণের আশ্বাসে প্রায় এক ঘণ্টা পর মহাসড়ক ছেড়ে দেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা জানান, কারখানাটিতে তিন শিফটে প্রায় সাড়ে চার শ শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিবছর ঈদ এলে মালিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন-বোনাস নিয়ে টালবাহানা করেন। কারখানাটিতে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির বেতন বকেয়া রয়েছে। সামনে ঈদ, এখনো বোনাস দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনার আগের দিন গত সোমবার বকেয়া বেতন পরিশোধ ও ঈদ বোনাসের দাবিতে গাজীপুর ভোগড়া বাইপাস মোড়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন আলেমা নিটওয়ার লিমিটেডের শ্রমিকরা। তাদের অভিযোগ, কারখানার তিন শতাধিক শ্রমিক প্রতি মাসে ঠিকমতো বেতন পান না। গত মাসের বেতন এখনো পায়নি। 

আবার কারখানার অনেক শ্রমিকের দুই মাসের বেতন বকেয়া আছে। বেতন দেওয়ার সময় হলেই কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করে। এদিন শ্রীপুরের কেওয়া নতুন বাজার এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন সোলার সিরামিক নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা।

গত ১৪ মার্চ গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় ঈদ বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে স্মাগ সোয়েটার লিমিটেডের নামে একটি সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা। জানা গেছে, কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ঈদের বোনাস দিয়েছে বেতনের ২৫ শতাংশ। 

তবে শ্রমিকেরা ৫০ শতাংশ বোনাস দাবি করে আসছেন। ঈদ বোনাস বৃদ্ধিসহ ওভারটাইম, মাতৃত্বকালীন বিল, টিফিন বিল, বাৎসরিক ছুটিসহ ১৪ দফা দাবিতে শ্রমিকেরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করেন। এতে ওই মহাসড়েকের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত ১৩ মার্চ গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে বেতন-বোনাসের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্বাধীন গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম শিল্পাঞ্চলে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। চলতি মাসেই ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রমিকদের ঈদের বোনাসও পরিশোধ করতে হবে। 

এ ছাড়া মার্চ মাসের আংশিক বেতন দেওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এতে আর্থিক চাপ আরও বাড়ছে কারখানা মালিকয এনামুল হক খান বাবলু জানান, শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া নিয়ে প্রায় ২০০ কারখানা আছে মাঝারি ধরনের রিস্কে। সব চেয়ে খারাপ যারা বেতন-বোনাস দিতে পারবে না। এমনভাবে আমরা আইডেন্টিফাই করেছি ৩৪টি ফ্যাক্টরি। যাদের অবস্থা খুবই খারাপ। এসব বেশির ভাগই একটু ছোট মানের কারখানা। 

তবে ২০ রোজার মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও পূর্ণ বোনাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। পাশাপাশি তারা ঈদের ছুটির আগে মার্চ মাসের বেতন পরিশোধের দাবিও জানিয়েছেন তারা। 

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার বলেন, শ্রমিকের জীবনের সংকটকে আড়াল করে রাখার কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। শ্রমিকের দাবির মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজা পুরোনো স্বৈরাচারী অপকৌশল। সরকারকে দায়িত্ববোধ থেকে শ্রমিকের বেতন-বোনাসের সমস্যার সুরাহা করতে হবে।

গাজীপুর ছাড়াও আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, উত্তরার বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রয়েছে বলে উল্লেখ করে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান বলেন, কোনো কোনো কারখানায় তিন-চার মাসের বেতনও বকেয়া রয়েছে। সেসব মালিকপক্ষ মিথ্যা কারণ দেখিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করছে। কোনোরকম পাওনা পরিশোধ করছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না।

তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে গার্মেন্টস শিল্প কারখানার শ্রমিকদের কাক্সিক্ষত ঈদ বোনাস ও সকল বকেয়া পাওনা ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কারণ বর্তমান বাজারে শ্রমিকরা যেই মজুরি পায় তা দিয়ে তাদের পরিবারের ব্যায় মেটানো সম্ভব হয় না। 

শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের বিষয়ে বিজিএমইএ সহায়ক কমিটির সদস্য এবং সংগঠনের সাবেক সহসভাপতি শহীদ উল্লাহ আজিম বলেন, সোমবার পর্যন্ত গাজীপুরের ১২৪ কারখানায় ফেব্রুয়ারির বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। বাকি দুই হাজার কারখানায় ইতিমধ্যে মজুরি পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি কারখানাগুলোও যাতে দু-এক দিনের মধ্যে মজুরি পরিশোধ করতে পারে, এ ব্যাপারে সহায়তা করছে বিজিএমইএ।

শ্রম আইন অনুযায়ী, সমাপ্ত মাসের মজুরি পরের মাসের প্রথম ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ করার কথা। ১৭ তারিখেও কেন এত কারখানা মজুরি পরিশোধ করেনি- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব কারখানার সামর্থ্য সমান নয়। ছোট অনেক কারখানার পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছে না। এ কারণে মজুরি পরিশোধে কিছুটা সময় লাগছে।

শঙ্কা আমলে নিয়ে এরই মধ্যে তা সামলানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বিজিএমইএ। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তা জরুরি। শিল্প মালিকদের শঙ্কা বেতন বোনাস নিয়ে আবারও শ্রমিক অসন্তোষ হলে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সেই ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে।

রশিদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এম কফিল উদ্দিন আহমেদ জানান, অগ্রিম লোন, এক্সপোর্ট প্রডিউসারের অ্যাগেইনেস্টে লোন। এগুলো দিয়ে যদি আমরা পার করতে পারি, তাহলে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদের ছুটিতে যেতে পারব। আমাদের এই মুহূর্তে কোনোভাবেই কাম্য নয় আরেকটি শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক। 

বিজিএমইএর প্রশাসক কমিটির সদস্য ও ক্লিফটন গ্রুপের পরিচালক এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ভালো অবস্থায় নেই। একই মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারির বেতন, ঈদের বোনাস ও মার্চের আংশিক বেতন পরিশোধ তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু ঈদে শ্রমিকরাও চাইবে তাদের বেতন-বোনাস নিয়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ভালোভাবে ঈদ করতে। সব কিছু মাথায় রেখেই আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সার্বিক বিষয় মনিটরিং করে যাচ্ছি। সরকারও এ বিষয়ে খুব তৎপর। আশা করছি বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না।

 

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!