ঢাকা শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫

চড়া দামেও ক্রেতার চাপ বেইলি রোডে

এফ এ শাহেদ
প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৫, ০১:০৮ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পবিত্র রমজানের দ্বিতীয় দশকের শেষ দিকে রাজধানীর বেশির ভাগ শপিংমলে উপচে পড়া ভিড়ের সঙ্গে চলছে বেচাকেনার ধুম। বিক্রেতারা বলছেন, বেইলি রোডের শপিং মলগুলোতে তুলনামূলক পণ্যের দাম কিছুটা বেশি হলেও মানের বিবেচনায় সেটি উপেক্ষা করে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। 

আর এই ভিড় চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। একই চিত্র ইস্টার্ন প্লাজায় দেখা গেলেও ভিন্ন চিত্র দেখা যায় শান্তিনগর টুইন টাওয়ার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্সে। পুরোপুরি জমে ওঠেনি সেখানকার বেচাকেনা। বিক্রেতারা আশা করছেন ২০ রোজার পর চিত্র বদলে যাবে, বাড়বে ক্রেতাদের চাপ। 

রমজানের শুরু থেকেই বিকিকিনি ভালো হচ্ছে বলে জানান বেইলি রোড ও ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের বিক্রেতারা। ক্রেতা টানতে বিপণিবিতানগুলোতে আলোকসজ্জার পাশাপাশি নিত্যনতুন পোশাকের পসরা সাজিয়েছে এসব শপিংমল। প্রতিবছরের মতো এবারও মার্কেটে পুরুষের চেয়ে নারী ক্রেতাদের ভিড়ই বেশি। 

বেইলি রোড, ইস্টার্ন প্লাস ও টুইন টাওয়ার ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার ছোট-বড় শপিংমল, বিপণিবিতানগুলো সেজেছে বর্ণিল সাজে। রাজধানীবাসীও পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছেন পুরোদস্তুর। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডের ছোট-বড় শপিং সেন্টার ও নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দমতো জামা, জুতা, আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনাকাটা করছেন তারা। 

বেইলি রোডের সিরাজ ক্যাপিটাল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি দোকান সাজানো চোখধাঁধানো সাজসজ্জায়। ইফতারের পরপরই এখানে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের আনাগোনা। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে পছন্দমতো কেনাকাটা করছেন সব শ্রেণির ক্রেতারা। বেইলি রোডের এই মার্কেটে রয়েছে সব বয়সি মানুষের জন্য বাহারি রকমের পোশাক। 

বিশেষ করে মিশু ও মেয়েদের জন্য রয়েছে ফ্রক, জামাসহ পাকিস্তানি ও ভারতীয় থ্রিপিসের সমাহার। দোকানগুলোতে হালকা সবুজ, আকাশি, ঘিয়ে, ধূসর, হালকা গোলাপি রঙের স্টিচ ও ননস্টিচ টুপিস, থ্রিপিসসহ রয়েছে বাহারি শাড়ি। এখানে পাওয়া যাচ্ছে দেশি তাঁতে বোনা শাড়ি, জামদানি প্রিন্টের হাফ সিল্ক শাড়ি, সুতির শাড়ি; রয়েছে তরুণদের প্যান্ট, শার্ট ও পাঞ্জাবি।

সিরাজ ক্যাপিটাল সেন্টারে নবরূপ কালেকশন দোকানের ম্যানেজার আমজাদ জামসেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বেইলি রোডের শপিংমলগুলোতে তুলনামূলক পণ্যের দাম কিছুটা বেশি হলেও মানের বিবেচনায় ক্রেতারা সেটি উপেক্ষা করে কেনাকাটা করেন। আমাদের এখানে থ্রিপিস সর্বনিম্ন ২ হাজার থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকার পর্যন্ত রয়েছে। পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ান দুই ধরনেরই থ্রিপিস রয়েছে। ওয়ান পিস পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়।

লেডি ফ্যাশন দোকানের বিক্রেতা সোহাগ বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার ভারত থেকে কম পোশাক এসেছে, যার প্রভাব পড়েছে পাকিস্তানি ড্রেসের ওপর। যেহেতু পাকিস্তানি অনেক ড্রেস দুবাই-দিল্লি হয়ে আসে, তাই দাম কিছুটা বেশি। আমাদের মার্কেটে দশম রোজার পর থেকে ক্রেতার চাপের সঙ্গে বেড়েছে বেচাবিক্রিও। 

মার্কেটে গত বছরের মতো এবারও তরুণী ও নারীদের চাপ বেশি, ছেলেমেয়ে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করছেন তারা। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ছেলে ক্রেতার সংখ্যা যেমন কম, তাদের আগ্রহও কম দেখা যাচ্ছে। যারা আসছেন, তার বেশির ভাগই দেখে দেখে চলে যাচ্ছেন। 

নয়াপল্টনের বাসিন্দা জাফরুল ইসলাম বলেন, ‘বেইলি রোডের মার্কেটগুলোতে দাম একটু বেশি হলেও প্রতি বছর এখান থেকে কেনাকাটা করি। এখানে মোটামুটি সব ব্র্যান্ডের পণ্য রয়েছে। জ্যামের কারণে অন্য কোথাও যাওয়া হয় না। এরই মধ্যে যে ভিড় শুরু হয়েছে, বাচ্চাদের নিয়ে আসা যায় না। তাই বাচ্চাদের আগেই কিনে দিয়েছি। এখন আমার আর ওয়াইফের জন্য কিনতে এসেছি। তবে পাঞ্জাবির ভালো কালেকশন দেখিনি, যা দেখছি তার দামটা এবার বেশি মনে হচ্ছে।’

বেবি শপের ম্যানেজার আলতাব মাহমুদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য বাহারি ডিজাইনের পণ্য রয়েছে আমাদের কাছে। মার্কেটের প্রতিটি ফ্লোরে কিডস শপ রয়েছে। ৬ থেকে ১০ বছর বয়সি মেয়েদের জন্য হীরামান্ডি, আফগান নামে ড্রেস রয়েছে। 

হীরামন্ডি পাওয়া যাচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। আফগানি ড্রেস পাওয়া যাচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে।’ বেইলি রোডের টাঙ্গাইল তাঁতঘরসহ বিভিন্ন দোকানে ১ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে হাফ সিল্ক, তাঁতের শাড়ি, সিল্ক ও জর্জেটের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া এমব্রয়ডারি, কাটওয়ার্ক, পুঁতি ও জরির কাজ করা শাড়ি বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায়।

বেইলি রোড এলাকাজুড়ে রয়েছে ইজি ফ্যাশন, টুয়েলভ, জেন্টল পার্ক, ইনফিনিটি, রিচম্যান, দর্জিবাড়ি, ইল্লিয়্যিন, ক্যাটস আই, রাইজ, র’নেশন, প্লাস পয়েন্ট, আড়ং প্রভৃতি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের  শোরুম। রয়েছে জামদানি হাউস, আঁচল শাড়ি, কালাঞ্জলী শাড়িজসহ অনেক অভিজাত শাড়ির দোকান। এছাড়া বাটা, এপেক্স, ওরিয়ন, বে ইত্যাদির শোরুম।

ইফতারের পর স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে ইস্টার্ন প্লাস শপিংমলে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী আজম উদ্দিন। প্রায় এক ঘণ্টা যাচাই-বাছাই করে ছেলেমেয়ের জন্য পোশাক কিনে খুশি বলে জানান তিনি। দাম বাজেটের বাইরে দাবি করে তিনি বলেন, ‘যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, আমাদের মতো মধ্যবিত্তের সেই হারে বেতন-বোনাস বাড়েনি। 

যে কারণে উৎসবের সময় আমাদের পড়তে হয় একধরনের মানসিক চাপে।’ ঈদের শপিং ইস্টার্ন প্লাস থেকে প্রতি বছর করেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে সব ধরনের পোশাক পাওয়া যায়। এবার এখান থেকে শপিং করলে পুরস্কার জেতার সুযোগ রেখেছে, এটি রোমাঞ্চকর। 

ক্রেতা সামান্তা বলেন, ‘বাজেট আছে নিজের গহনা, শাড়ি ও স্বামীর পোশাকের জন্য। এবার আমাদের ঈদটা স্পেশাল, যে কারণে বাজেটে কোনো ঘাটতি নেই। নিজের জন্য শাড়ি, থ্রিপিস, শাশুড়ির জন্য শাড়ি, স্বামীর জন্য ঘড়ি, জুতা কিনেছি। তবে স্বর্ণের জিনিস নেওয়ার চিন্তা থাকলেও ঈদের পরে নিতে হবে।’ ইস্টার্ন প্লাসে স্বল্প পরিসরে সব ধরনের আইটেম পাওয়া যায় এবং এখানে কিছু খাবারের দোকান বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি করে বলে জানান তিনি।

ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের নিচতলায় রয়েছে মেয়েদের মেকআপ জারা ব্র্যান্ডসহ সব ধরনের কসমেটিকস আইটেম এবং বাচ্চাদের খেলনা ও থ্রিপিসের সমারোহ। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে থ্রিপিস, নতুন ডিজাইনের ওয়ান-টুপিস, কারচুপি বুটিকস, সুতি বুটিকস, মাল্টি কালারের মেয়েদের নানা পোশাক, জুয়েলারি ও জুতার শপ। 

তৃতীয় তলায় রয়েছে মেহেদী ফ্যাশনের বিশাল শাড়ি কালেকশন এবং ওড়না, ওয়ানপিস, টুপিস ও থ্রিপিসের সমারোহ। চতুর্থ তলায় রয়েছে ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, টিশার্টসহ শিশুদের পোশাক। 

ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটে ছেলেদের সুতি, এমব্রয়ডারি, সিকুয়েন্স, স্প্যানডেক্স, লিনেন পাঞ্জাবির দাম দেড় হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। দোকানভেদে মেয়েদের টপস, ওয়ানপিস, টুপিস, থ্রিপিস, জাম্প স্যুট, ওয়েস্টার্ন ২ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় মিলছে। শিশুদের জামা-কাপড় ২ হাজার থেকে ৬ হাজারের মধ্যে।

শান্তিনগর টুইন টাওয়ার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে সেখানে রয়েছে মেয়েদের সালোয়ার, ওড়না, বোরকা, শাড়ির একচ্ছত্র আধিপত্যের সঙ্গে ছেলেদের পোশাক। 

টুইন-টাওয়ার শপিংমলের তৃতীয় তলার কালার-প্লে শাড়ি হাউজের বিক্রেতা সাম্মি জাহান বলেন, এ বছর এখনো পুরোপুরি জমে ওঠেনি আমাদের বেচাকেনা। তবে আমরা আশা করছি, এক-দুই দিনের মধ্যেই জমে উঠবে।  অন্য এক বিক্রেতা জানান, ক্রেতার চাপ কিছুটা কম রয়েছে। যারা আসছেন, সবাই নকশা আর আরামদায়ক কাপড়ের পোশাকের ওপর বেশি চোখ রাখছেন।