ঢাকার অধিকাংশ বাজারে মৌসুমি ফল ও ফসলের সরবরাহ বেড়েছে। বাজারে কৃষিপণ্যের সঙ্গে আমদানিপণ্যের সরবরাহ বাড়ায় দামও কমেছে। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ভোক্তা চাহিদার শীর্ষে থাকায় বেড়েছে মুরগি ও গরু মাংসের দাম।
আমনের মৌসুমে চালের দাম বাড়ায় বাজার এখনো চড়া। মসলার বাজারেও দাম অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
অন্যদিকে রমজানের শুরুতে ঢাকার অধিকাংশ দোকানে সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঘাটতিতে তীব্র ভোগান্তির শিকার হয়েছেন গ্রাহক। ভোজ্যতেল নিয়ে গ্রাহকের সেই অসন্তুষ্টি আর নেই। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যেকোনো ধরনের ফল আমদানিতে কর প্রত্যাহার করায় ফলের দামও কমেছে। ফলে প্রায় এক যুগ পরে নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে মূল্যস্ফীতি।
ঢাকার কারওয়ান বাজার, মগবাজারের চারুলতা মার্কেট ও মালিবাগ বাজার ঘুরে গতকাল শুক্রবার দেখা গেছে, সবজির বাজারে এখনো স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা। কম টাকায় ব্যাগ ভরে সবজি কিনতে পারছেন। ২০, ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে কেনা যাচ্ছে বেশির ভাগ সবজি। ঢ্যাঁড়স ও উচ্ছের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দর এখন তলানিতে। প্রতি কেজি আলু কেনা যাচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। পেঁয়াজের দরও কমছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়।
ভোজ্যতেলের বাজারে সয়াবিনের সরবরাহ বেড়েছে। খোলা সয়াবিন ও পামওয়েলের সরবরাহে ঘাটতি দেখা যায়নি। পাঁচ লিটারের বোতলের সরবরাহ কিছুটা কম রয়েছে। দুই-তিন মাস ধরে বোতলজাত তেলের সরবরাহ ঘাটতি নিয়েই চলছে বাজারÑ বলেন কিচেন মার্কেটের একজন বিক্রেতা।
তবে রসুনের দরে পরিবর্তন নেই। আগের মতোই আমদানি করা রসুনের কেজি ২০০ থেকে ২১০ এবং দেশি রসুনের কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অস্বাভাবিক দর দেখা গেছে এলাচের। খুচরা ব্যবসায়ীরা মানভেদে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি করছেন ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দরে।
তবে বড় আকারের এক কেজি এলাচি ৫ হাজার ৪০০ টাকা ও ছোট আকারের এলাচি ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ১৫ দিনের মধ্যে এলাচির দাম কেজিতে ৪০০ টাকার মতো বেড়েছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লেও কিছুটা কমেছে সোনালি মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। আর সোনালি জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা দরে। সপ্তাহখানেক ব্রয়লারের কেজি ছিল ১৯০ টাকার মতো।
দর বাড়ার কারণ হিসেবে কারওয়ান বাজারের নুরজাহান চিকেন ব্রয়লার হাউসের বিক্রয়কর্মী মো. নবী বলেন, প্রতিবছর রোজার শেষদিকে মুরগির দর বেড়ে যায়। তা ছাড়া এখন চাহিদা বাড়ায়, দামও বাড়তি। প্রতিদিনই একটু একটু করে দর বাড়ছে মুরগির।
পবিত্র ঈদুল ফিতর সমানে রেখে বেড়েছে মুরগি ও গরু মাংসের দাম। সোনালি মুরগির দামের সঙ্গে বাজারে কমেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। বর্তমানে ঢাকার বাজারগুলোতে এক ডজন ডিম ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য পাড়া-মহল্লায় দাম বেশি নেওয়া হয়।
তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম কিছুটা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বেচা হতে দেখা যায়। তবে গরুর মাংস তিন মাস আগে ৩০ টাকা বৃদ্ধি করে ৭৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও এখন ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম বাড়তি
চালের বাজারে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। গত সপ্তাহের মতোই সরু চাল ৭২ থেকে ৮৫, মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৬৫ এবং মোটা চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে- বলেন কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের চাটখিল রাইস এজেন্সির মালিক শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, আমন মৌসুমে যা দাম বেড়েছে, নতুন করে বাড়েনি। তবে আমদানি বন্ধ করলে আবার দাম বাড়তে পারে জানান তিনি।
বাজারে সরু তথা মিনিকেট চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে রশিদ, ডায়মন্ড, সাগর, মোজাম্মেল ইত্যাদি ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল জনপ্রিয়।
খুচরা দোকানে এসব ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ৮৫ টাকা ৮৮ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি দাম মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের। প্রতি কেজি মোজাম্মেল চাল ৯৮ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমন মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে মিনিকেট চালের মজুদও শেষের দিকে। সরবরাহ কমায় ও ধানের দাম বাড়ায় মিনিকেট চালের দামও বেড়েছে। দাম বাড়ায় মিনিকেটের বিক্রি আগের তুলনায় কমেছে। তবে মাঝারি ও মোটা চালের দাম বাড়েনি।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতারা স্বল্প পরিসরে ঈদের পণ্য কেনাকাটা শুরু করেছেন। বিশেষ করে সেমাই, নুডলস, পোলাওয়ের চাল, বিভিন্ন ধরনের মসলা প্রভৃতি বেচাকেনা হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, পাঁচ-ছয় দিন পর থেকে পুরোদমে ঈদের বেচাকেনা শুরু হবে। বেশির ভাগ ঈদপণ্যের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে দাম বেড়েছে এলাচির।