পুরান ঢাকার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা চাঙা

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৫, ১২:৪৯ এএম

পুরান ঢাকার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা চাঙা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে চাঙা হয়ে উঠেছে পুরান ঢাকার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা। ঈদের আনন্দে মাততে ছোট-বড়, ধনী-গরিব কেউ যেন পেছনে নেই। ক্রেতারা সামর্থ্য অনুযায়ী ছুটছেন শপিংমল থেকে শুরু করে ছোট-বড় মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে। 

রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুর, চকবাজার, নওয়াবপুর, সদরঘাট, বংশাল পাইকারি বাজারগুলোতে ব্যস্ততম সময় পার করছেন পাইকারি ও খুচরা সব ব্যবসায়ী। সেখানকার পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে প্রতিদিন বেচাবিক্রি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। 

এই পুরান ঢাকার পাইকারি কাপড়ের মার্কেট থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলার খুচরা দোকানগুলো পণ্য সংগ্রহ করে থাকে। রোজার শুরু থেকেই পাইকারদের কাছ থেকে নতুন পোশাকসহ কাপড়ের মালামাল সংগ্রহ করছেন রাজধানীসহ দেশের সব প্রান্তের খুচরা ব্যবসায়ীরা।

পুরান ঢাকার মার্কেটগুলোর মধ্যে সদরঘাটের শরীফ মার্কেট পাঞ্জাবির জন্য, ইস্ট বেঙ্গল সুপার মার্কেট, গুলশান আরা সিটি পাইকারি কাপড়ের জন্য এবং ইসলামপুর হকার্স মার্কেট ও লেডিস পার্ক হকার্স মার্কেট পাইকারি ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। 

দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে তুলনামূলক কম দামে পণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন। সদরঘাট লঞ্চঘাটের সুবিধার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি কেনাকাটার জন্য এখানে ভিড় জমান, ঈদ বা যেকোনো উৎসব ঘিরে ভিড় বেড়ে যায় আরও কয়েক গুণ। 

নিউমার্কেটের খুচরা বিক্রেতা আল-আমিন সরকার জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দোকানে পাঞ্জাবি কিনতে এসেছি। ইসলামপুর পায়কারি মার্কেটের ব্যবসায়ী নাজমুল হক জানান, আমারা সুলভ মূল্যে মালামাল সরবরাহ করে থাকি। 

এখান থেকে ৭০০ টাকায় যেসব বিক্রি করি, সেসব থ্রিপিস তারা খুচরা ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি করে থাকে। একইভাবে  ইসলামপুর, চকবাজার, নওয়াবপুর, সদরঘাট, বংশাল মার্কেট থেকে বাচ্চাদের যেসব পোশাক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়, তা খুচরা বাজারে বিক্রি হয় হাজার টাকার ওপরে। 

পাবনা থেকে ইসলামপুরে পাইকারি মাল কিনতে আসা আশরাফ আলী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রোজার প্রথমে দোকানের জন্য যেসব শাড়ি, থ্রিপিস, টুপিস ও বোরকা কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম, তা এরই মধ্যে বিক্রি হওয়ায় আরও একবার অনলাইনের মাধ্যমে নিয়েছি। তবে সরাসরি ঈদের সময় দেখে মাল নিলে তাতে সুবিধা বেশি হওয়ায় ইসলামপুরে আসা। আমরা এখান থেকে যে দামে মাল কিনতে পারি, তাতে লাভ ভালো থাকে। একই সঙ্গে কাপড়ের মান ভালো হওয়ায় ক্রেতারাও খুশি হন।  

আহাদ উদ্দিন বলেন, শরীফ মার্কেটে ভালো মানের পাঞ্জাবিগুলো পাইকারি দামে পাওয়া যায়। ফলে, প্রতি বছর এখান থেকেই কিনি। এবার গরমের বিষয়টা মাথায় রেখে দেশীয় খাদি ও সুতি পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি, তবে অন্যবারের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি। ঈদের বিক্রি শুরু হয়ে গেছে, চাঁদরাত পর্যন্ত আরও ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করি। 

ইস্ট বেঙ্গল সুপার মার্কেটের বিক্রেতা ছগির মাতবর জানান, ‘আগের বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি কিছুটা কম। আমরা সারা দেশের খুচরা ক্রেতাদের সঙ্গে পাইকারি ব্যবসা করি। খুচরা বিক্রি কিছুটা ২০ রমজানের পর কমেছে। রমজান শুরুর আগেই চাপ বাড়তে থাকে, যা ২০ রমজান পর্যন্ত থাকে, এরপর কিছুটা নিম্নমুখী হয়। এ বছর এখন পর্যন্ত যে বিক্রি হয়েছে, তা আশানুরূপ নয়। তবে বাকি দিনগুলোতে আশা করছি পুষিয়ে যাবে।

লেডিস পার্ক হকার্স মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক কাজল খান জানান, গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি বেশ ভালো। যেহেতু পাইকারি বিক্রি রমজানের শেষের দিকে কমে আসে, আমরা আশাবাদী শেষ মুহূর্তে ব্যবসা আরও বাড়বে। সারা দেশে ঈদের যে কেনাকাটা, তা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

জমেছে খুচরা বেচাকেনা: পুরান ঢাকার পাইকারি বাজারের পাশাপাশি লক্ষ্মীবাজার ও আশপাশের এলাকায় খুচরা ব্যবসাও জমে উঠেছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দোকান ও ফুটপাতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রিপিস, জুতা, প্যান্ট, কসমেটিকসসহ নানা পণ্যের দোকানে ক্রেতাদের ব্যস্ততা দেখা গেছে। 

লক্ষ্মীবাজারের পোশাক ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বিক্রি তত বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এবার বেশ আগে থেকেই ভালো বেচাবিক্রি হচ্ছে। দেশীয় কাপড়ের পাশাপাশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। গরম মাথায় রেখে ক্রেতারা সুতি কাপড়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। পুরান ঢাকায় সন্ধ্যার ইফতারের পর চাপ বাড়ছে। 

পুরান ঢাকার ফুটপাতের দোকানগুলোতেও যথেষ্ট ভিড় দেখা যায়। বাংলাবাজার, সদরঘাট ও আশপাশের ফুটপাতের দোকান থেকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে পোশাক ও আনুষঙ্গিক পণ্য কিনছেন। কম দামে যাচাইবাছাই করে সাধ্যের মধ্যে পণ্য কিনতে পেরে খুশি তারা। 

ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা শাওন আলতাফ বলেন, গত বছর যে দাম ছিল, তার থেকে এ বছর সবকিছুর দাম বেশি মনে হচ্ছে। তবে ঈদের কেনাকাটা তো করতেই হবে। তাই বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে কম দামে ভালো জিনিস খুঁজছি। সঙ্গে ছেলেকে নিয়ে এসেছি, তার জন্য আগে প্যান্ট, শার্ট-জুতা কিনে স্ত্রীর জন্য কিনব। এরপর কিনব মা-বাবার জন্য, তারপর যদি টাকা থাকে নিজের জন্য ভাবব। 

কাপড় ব্যবসায়ী আল-মিকাত বলেন, ঈদের বাকি কয়েক দিনে বিক্রি আরও বাড়বে। এই সময়ে ভালো ব্যবসা হলে সারা বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। গত বছর থেকে নানা কারণে বেচাবিক্রি ভালো হয়নি। আশা করছি এবারের রমজানের ঈদে যে বিক্রি হবে, তাতে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব। একই সঙ্গে ঈদের আগে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় পুরান ঢাকার বাজার আরও জমে উঠবে বলে আশা আমাদের।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!