ঢাকা বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

বহিষ্কার হয়েও থামছেন না মঠবাড়িয়ার দুলাল

শাওন সোলায়মান
প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৫, ১০:০১ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের পদ থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরেও থেমে নেই রুহুল আমিন দুলাল। দুলালের ত্রাসের রাজত্বে আতঙ্কে থাকেন খোদ বিএনপির নেতাকর্মীরাও। 

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করলে দুলালের রোষানলে পড়তে হয় পিরোজপুর জেলা যুবদলের সাবেক সহসম্পাদক মোস্তফা হাসান আবুল আলাকে। মামলার আগে তার সঙ্গে কেন কথা বলা হয়নি, এজন্য আবুল আলাকে শাসিয়েছেন রুহুল আমিন দুলাল। 

সম্প্রতি সেই কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে পিরোজপুরের রাজনীতিতে বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের পতনের পর বিভিন্ন ব্যবসার দখল এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিত্তবান ব্যক্তিদের অর্থের বিনিময়ে নিরাপত্তা ও ‘শেল্টার’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে। তবে সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।  

জানা যায়, গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক সদস্যপদসহ বিএনপির সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলালকে। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয় যে, মানুষকে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে এমন বহিষ্কারের পরেও রুহুল আমিন দুলালের বিতর্ক থেমে নেই। 

পিরোজপুরের জেলা ও মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সময়েই নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটান রুহুল আমিন দুলাল। খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হলে মাহফিলের ব্যানারে তার নাম না থাকায় সেই ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়। ব্যানার ছেঁড়ার একটি ভিডিও রয়েছে রূপালী বাংলাদেশের কাছে। আবার একটি মামলাকে কেন্দ্র করে পিরোজপুর জেলা যুবদলের সাবেক সহসম্পাদক মোস্তফা হাসান আবুল আলাকে শাসিয়েছেন দুলাল। 

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মঠবাড়িয়া থানায় মামলা দায়ের করেন আবুল আলা। বর্তমানে তিনি মঠবাড়িয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য। এ বিষয়ে দুলাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘২০১২ সালে বিএনপির সমস্ত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিলেন মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র রফি উদ্দিন আহমেদ ফেরদৌস। 

পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবীর, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবু বকর সিদ্দিক বাদল, উপজেলা যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব তাহসিন জামান রোমেল, উপজেলার ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান মিলটন, জেলা যুবদলের সাবেক সহসম্পাদক মোস্তফা হাসান আবুল আলাসহ অসংখ্য নেতাকর্মী ঐ মিথ্যা মামলায় জেলে ছিলেন এবং অজ্ঞাত আসামি হিসেবে বিএনপির ৪০০-৫০০ নেতাকর্মী সে সময় হয়রানির শিকার হন। সেই মামলায় পুনঃতদন্তের জন্য অনুরোধ করলে পুলিশের সার্কেল এসপি বিষয়টি পুনঃতদন্ত করেন। 

তদন্ত করে ওই মামলায় আমাদের যে অন্যায়ভাবে আসামি করা হয়, সে বিষয়টি উঠে এলে আমাদের বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করার পরামর্শ দেন। আমি সেই মামলার বাদী হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ২৬ জন এবং অজ্ঞাত শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করি। কিন্তু এই মামলা তুলে নিতে আমাকে ফোনে হুমকি দেন এবং জামায়াতের কর্মী ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুলালের ভয়ে প্রকাশ্যে নেতাকর্মীরা কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। তবে দুলালের এহেন আচরণে ক্ষোভে ফেটে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। 

অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে মামলা থেকে বাঁচানোর জন্যই চাপ প্রয়োগ করছেন রুহুল আমিন। এছাড়া আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রায়ই দেখা যায় দুলালকে। মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মঠবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র রফি উদ্দিনের বাড়িতে খোশগল্পে দেখা যায় রুহুল আমিনকে। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে মামলার অন্যতম আসামি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বায়েজিদ আহমেদ খানের সঙ্গেও সখ্য রয়েছে তার। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুহুল আমিন দুলাল। 

মামলার বাদীকে হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত রুহুল আমি দুলাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘হামলা হয়েছিল আমার ওপর। তাই আমার সাথে কথা না বলে মামলা করে কীভাবে? এজন্যই তাকে (আবুল আলা) ফোন করেছিলাম। তবে মামলা প্রত্যাহারের কথা বলিনি।’ 

অভিযোগকারীরা জামায়াতের লোক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছেন তারা জামায়াত থেকে বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী। আমাকে দুর্বল করার মাধ্যমে বিএনপিকে দুর্বল করে, তারা জামায়াতকে মঠবাড়িয়ায় পুনঃস্থাপন করতে চায়। 

মঠবাড়িয়ার ৮০ ভাগ লোক আমাকে সমর্থন করে।’ তবে পিরোজপুর জেলা ও মঠবাড়িয়া উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা দুলালের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। পিরোজপুর জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান শাহীন বলেন, ‘আবুল আলা ছাত্রদলের রাজনীতির পরে এখন যুবদলের রাজনীতি করেন।’ 

মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা কেউ জামায়াতি না। তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই তিনি সবাইকে এই ট্যাগ দেন। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অনেক অভিযোগ আছে। 

দলের সাধারণ সম্পাদক, সদস্যসচিব বরাবর অভিযোগ বেশি আসে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন, জানতে পারবেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণেই তো তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এগুলো তো সত্যই।’