বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরো আবারও অর্থদণ্ডের মুখোমুখি হচ্ছেন। পুঁজিবাজারে তীর্যকভাবে সমালোচিত আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে অনিয়ম ও শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ফের তারা জরিমানার মুখোমুখি হচ্ছেন।
পুঁজিবাজারে অংশ নেওয়া ছয়টি কোম্পানির অনুসন্ধান শেষে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রমাণিত তথ্যে শতকোটি টাকা অর্থদণ্ডের ঘোষণা আসছে। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর গঠিত পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির’ দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিটি ১২টি বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করে চূড়ান্ত এই প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
তাদের অর্থদণ্ডের তথ্য পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরে প্রকাশ করবে বিএসইসি বলে জানিয়েছে কমিশনের বিশেষ একটি সূত্র। ঈদের আগে সংবেদনশীল পুঁজিবাজারে যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেজন্য ঈদ-পরবর্তী একসঙ্গে ছয়টি কোম্পানির তথ্য প্রকাশ করবে বিএসইসি। তবে এ বিষয়ে গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ে কমিশন ভবনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংশ্লিøষ্ট একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে আরও তথ্য জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ ছয়টি কোম্পানির তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনের কাছে ১১ ফেব্রুয়ারি জমা দিয়েছে বলে জানায় বিএসইসি। সেই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আরও পাঁচটি কোম্পানির তথ্য ও শাস্তির আওতায় থাকা একাধিক কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীর তথ্য প্রকাশ করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
কোম্পানিগুলো হলো- বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইসতিসনা, আইএফআইসি গ্র্যান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড, বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ফরচুন সুজ লিমিটেড ও কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড (পূর্বে পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালারস লিমিটেড)।
তার আগে গত বৃহস্পতিবার সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস, ফাইন ফুডস ও ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম কারসাজির অভিযোগে ১২ ব্যক্তি ও ৩ প্রতিষ্ঠানকে মোট ৭৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।
যাদের জরিমানা করা হয়েছে তারা হলেন- মো. আবুল খায়ের হিরো ১১ কোটি ১ লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবর ৭ কোটি ২১ লাখ টাকা, কাজী সাদিয়া হাসান ২৫ কোটি ২ লাখ টাকা, কনিকা আফরোজ ১৯ কোটি ১ লাখ টাকা, কাজী ফরিদ হাসান ৩৫ লাখ টাকা, কাজী ফুয়াদ হাসান ৩৫ লাখ টাকা, ডিআইটি কো-অপারেটিভ ৫ কোটি টাকা।
আরও আছেন- মোহাম্মদ শামসুল আলম ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ১ লাখ টাকা, সাজিয়া জেসমিন ৪৯ লাখ টাকা, সুলতানা পারভীন ১১ লাখ টাকা, এএএ এগ্রো এন্টারপ্রাইজ ৭৫ লাখ টাকা, আরবিম টেকনো ২৩ লাখ টাকা ও মো. ফরিদ আহমেদ ১ লাখ টাকা।
লোকসানি কোম্পানি আল-আমিন কেমিক্যাল: আল-আমিন কেমিক্যাল লোকসানি কোম্পানিটি ২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি এবং মোট শেয়ার সংখ্যা ৫০ লাখ। তার মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৫০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ২.৫৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৭.৪৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) বাজারে স্থানান্তরিত হয়। এরপর থেকে ওটিসি বাজারে লেনদেন হচ্ছে। তবে সম্প্রতি পুঁজিবাজারের বিকল্প মার্কেট এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা পরে নাকচ দেয়।
এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করতে কয়েকটি শর্তারোপ করে বিএসইসি। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- কোম্পানির শেয়ারের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ডিম্যাট আকারে হতে হবে, কমিশনের কাছে আগে জমা দেওয়া কৌশলগত ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা অনুযায়ী কোম্পানির উৎপাদন পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দিতে হবে, আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজকে কোম্পানির ঋণদাতা ব্যাংক থেকে একটি অনাপত্তি সনদ (এনওসি) জমা দিতে হবে এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং অব স্মল ক্যাপিটাল কোম্পানিস) রেগুলেশন-২০১৯, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং অব স্মল ক্যাপিটাল কোম্পানিস) রেগুলেশন-২০১৯ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সিকিউরিটিজ আইনগুলো কোম্পানিটিকে যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে।
২০২২ সালে বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ আরও পাঁচজনকে আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৮ দশমিক ১৭৫ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করার অনুমতি দেয় বিএসইসি। এর মধ্যে সাকিবের প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে মোনার্ক মার্ট (জাভেদ এ মতিন প্রতিনিধিত্বকারী) ২ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং মোনার্ক এক্সপ্রেস ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করেন।
এ ছাড়া আমিনুল ইসলাম সিকদার এবং মো. খায়রুল বাশার (ইশাল কমিউনিকেশনের প্রতিনিধিত্বকারী) ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ, এএফএম রফিকুজ্জামান ১০ শতাংশ, মাশুক আলম ৬ শতাংশ, মো. হুমায়ুন কবির (লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধিত্বকারী) ২ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং মুন্সী শফিউদ্দিন ৮ দশমিক ১৭৫ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করেন। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কোম্পানিটির কারখানা ফরিদপুরের কানাইপুরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এলাকায়। রাসায়নিক সার, ব্যাটারির পানি, পানীয় জল এবং সফটনার তৈরি করে থাকে।