বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
বিআইডব্লিউটিএর সাবেক প্রকৌশলী

হানিফের ভাগ্নে প্রকৌশলী সুলতান এখনো দাপুটে

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৫, ১১:৪৪ এএম

হানিফের ভাগ্নে প্রকৌশলী সুলতান এখনো দাপুটে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআইডব্লিউটিএ) পতিত সরকারের সুবিধাভোগী দোসররা এখনো সক্রিয়। তারা নানাভাবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিআইডব্লিউটিএতে অচলাবস্থা সৃষ্টির জোর পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মূলে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল আলম হানিফের ভাগ্নে  সুলতান খান। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার হত্যার আসামি সুলতান খানের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় হত্যা মামলা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ সুলতানকে অজ্ঞাত কারণে গ্রেপ্তার করছে না। সুলতান নিজেকে সৎ, মেধাবী,  নিষ্ঠাবান ও বিএনপির পরিচয় দিয়ে মামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। মামলা থেকে রেহাই পেতে কোটি টাকা মিশনে নেমেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ডেজিং বিভাগে পোস্টিং ছিল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খানের। তিনি প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফের ভাগ্নে। মামার পরিচয়েই বিগত ১৫ বছর তিনি এককভাবে বিআইডব্লিউটিএকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। 

সুলতানের হুকুম ছাড়া কেউ কোনো কাজ করলে তার ওপর নেমে আসত খড়গ। বদলি, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন সুলতান সিন্ডিকেট। সুলতানের একান্ত বিশ্বস্ত শ্রমিক লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সনজিব কুমার দাসকে দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সৎ ও মেধাবী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা নিউজ করিয়ে সুলতান থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওইসব কর্মকর্তারা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে কোনঠাসা ছিলেন।
গত বছরের ২ অক্টোবর সুলতান আহমেদ খানকে বিআইডব্লিউটিএ ডেজিং বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত চলছে। কিন্তু এখনো তিনি বেপরোয়া। তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটতে পারে বলে আকাক্সক্ষা করা হচ্ছে। সুলতান খুব ঠান্ডা মাথায় তার বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ সুলতান ও তার দলবলসহ গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফের ব্যাবসায়িক পার্টনার ভাগিনা ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সুলতান আহমেদ খানের হাত থেকে বিআইডব্লিউটিএ রক্ষা পেলেও তার দাপট এখনো কমেনি। বিআইডব্লিউটিএ উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বন্ধ করতে পতিত সরকারের দোসররা ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। 

তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা ধরনের মন্তব্য করেন অফিসে বসেই। সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএতে শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও অবসরপ্রাপ্ত নিম্নমান সহকারী রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়ে শ্রমিক দলের সভাপতি মাজহারুল ইসলামকে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। 

হামলার মূল নায়ক ছিলেন হানিফের ব্যাবসায়িক পার্টনার ভাগিনা বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সুলতান আহমেদ খান। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলাও করা হয়েছে। 

বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফের প্রভাব খাটিয়ে বিআইডব্লিউটিএকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সুলতান আহমেদ খান। এছাড়া সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের প্রভাব খাটিয়ে সুলতান বাহিনী দুর্নীতি করত বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযোগ রয়েছে সুলতান পাবনা ও কুষ্টিয়া ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ পেয়ে সরকারি ১২শ’ কোটি টাকা কাজ না করে লুটপাট করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, নদী খনন প্রকল্পের মাটি বিক্রি করেই প্রায় ৬-৭শ কোটি টাকা লোপাট করে নিয়েছেন ড্রেজিং বিভাগের এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। 

এসব ঘটনায় গত বছরের ২ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সুলতান আহমেদ খানকে নৌপরিবহন অধিদপ্তরে সমপদে প্রেষণে পদায়ন করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোসাম্মত শুকরিয়া পারভীন স্বাক্ষরিত এ আদেশ জারি করা হয়। এ ছাড়া একই দিনে বিআইডব্লিউটিএ থেকে তাকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সুলতান আহমেদ খানকে বদলি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে মো. সুলতান আহমেদ খান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, তার সবই বানোয়াট। আমাকে ফাঁসাতে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ সিন্ডিকেট সদস্যরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কম গুরুত্বপূর্ণ ডিজি-শিপিং বিভাগে বদলি করা হয়েছে। চাকরির মেয়াদ বেশিদিন নেই, দুর্নীতি বা অপরাধ করে থাকলে সরকারের সংস্থাগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

১৯৯৬ সালে বিআইডব্লিউটিএতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চাকরিতে প্রবেশ করেন সুলতান আহমেদ খান। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১০ জন নিয়োগের কঠোর সিদ্ধান্ত থাকলেও শুধু মামার জোরে ১৩ নম্বর ব্যক্তিসহ সর্বমোট ১৩ জনকেই চাকরি দিতে বাধ্য করা হয় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে। এতে বেতন ভাতা বাবদ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে হয়েছে সংস্থাটিকে। 

মামার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় সম্পূর্ণ গায়ের জোরে একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে তার কপাল খুলে যায়। সুলতান এখন শতকোটি টাকার মালিক। থাকেন উত্তরার একটি আলিশান ফ্ল্যাটে। তিনি সবসময় বলে বেড়াতেন আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবে। তাই তাকে স্পর্শ করার ক্ষমতা কারো নেই বিআইডব্লিউটিএতে। সুলতান নিজেকে অসুস্থ দাবি করে বলেন, আমার একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক নিউজ করাচ্ছেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!