বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

ইসলামী বন্ড মার্কেট চাঙ্গা করতে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগের আদেশ

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৫, ০১:৩০ এএম

ইসলামী বন্ড মার্কেট চাঙ্গা করতে  বাধ্যতামূলক বিনিয়োগের আদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের চালু করা সুকুক মার্কেট চাঙ্গা করতে বিমা কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক বিনিয়োগের আদেশ জারি করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। 

এ জন্য ইসলামী বিমা কোম্পানিগুলোকে ইসলামী জীবনবিমার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে সরকারি সিকিউরিটিজ ইসলামী বন্ড বা সুকুক-এ বিনিয়োগ করতে বলা হয়েছে। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এ-সংক্রান্ত আদেশ দিয়েছে। এ-সংক্রান্ত চিঠি রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে।

জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের ১৭৯তম সভা এবং সেন্ট্রাল শরীয়াহ কাউন্সিল ফর ইসলামিক ইন্স্যুরেন্স অব বাংলাদেশের বরাত দিয়ে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরিচালক মোহা. আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, ইসলামী বিমা কোম্পানিসমূহ ইসলামী জীবনবিমার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে সরকারি সিকিউরিটিজ ইসলামী বন্ড বা সুকুক এ বিনিয়োগ করবে। 

এ অবস্থায়, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য লাইফ ও নন-লাইফ ইসলামী বিমা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হলো। লাইফ ও নন লাইফ বিমা খাতের ১৬টি ইসলামি বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে, আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড, নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স পিএলসি।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে বহু দেন-দরবার ও কাঠখড় পুড়িয়ে স্টক এক্সচেঞ্জে চালু হয় ট্রেজারি বন্ডের সেকেন্ডারি বাজার। কিন্তু এ বাজারে কেউ কেনাবেচা করে না। ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলো প্রথাগতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এ বন্ড কেনাবেচা করছে। এ অবস্থায় বন্ড বাজারকে গতিশীল করতে সব মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকার ডিলার, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে তালিকাভুক্ত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনা ও ঝুঁকি হ্রাস করতে নিজ পোর্টফোলিওর অন্তত ১ শতাংশ তালিকাভুক্ত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ থাকতে হবে। এ বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে। এর আগে ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তালিকাভুক্ত ডেট সিকিউরিটিজে অন্তত তিন শতাংশ বিনিয়োগ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে ওই বছরের ২৩ মে একটি নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। কেউ এ নির্দেশনা পরিপালন করতে না পারায় ওই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ জুন ২০২৩ করা হয়েছে। 

মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকার ডিলার প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, বন্ড বাজারে কারও আগ্রহ নেই। প্রথম দিকে বেক্সিমকোর সুকুকে (শরিয়াহ বন্ড) কিছুটা আগ্রহ থাকলেও অন্য কোনো বন্ডের ক্রেতা নেই, বিক্রেতাও পাওয়া যায় না। আর এখন বেস্কিমকোরটাতেও আগ্রহ নেই। কেউ বিক্রি না করলে, অন্য কেউ কীভাবে বন্ডে বিনিয়োগ করবে। যদিও বন্ডে বিনিয়োগ লাভজনক, কিন্তু টাকা আটকে থাকে।

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএর সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বন্ড বাজারে বিনিয়োগ করাতে পারলে এ বাজার সক্রিয় হবে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে আসবে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে এ ধারণার বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। যতদিন বন্ডের থেকে ব্যাংকে বেশি সুদ বা মুনাফা মিলবে, ততদিন কেউ আগ্রহী হবেন না। জাপানের মতো দেশে, যেখানে ব্যাংক সুদহার ঋণাত্মক, সেখানে এটা সম্ভব। এখানে ফিক্সড ইনকাম বিনিয়োগে সবাই সঞ্চয়পত্রকে এক নম্বরে রাখেন।

ডিএসইর ব্রোকার ডিলারদের সংগঠন ডিবিএর সাবেক সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘ব্রোকার ডিলাররা এখন বিনিয়োগ নয়, কীভাবে টিকে থাকবে, সে উপায় খুঁজছে। লেনদেন কমায় আয় কমেছে। অফিস ভাড়াসহ অন্যান্য খরচও মিটছে না। কর্মীদের বেতনও দিতে পারছে না অনেকে। এ অবস্থায় ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের অর্থ কোথায় পাবে। শেয়ার বিক্রি করে যে বন্ড কিনবে, সে উপায়ও নেই।

মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, বাধ্য করলে সবাই হয়তো ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করবে। এতে কিছু আর্থিক ক্ষতি হবে। এটা মনে করা ঠিক হবে না যে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে একবার বন্ড কিনে আবার বিক্রি করবেন, আবার কিনবেন। কারণ বন্ডে সুদ নির্দিষ্ট; কিন্তু প্রতিবার কেনাবেচায় লেনদেন ফি আছে। এতে খরচ বাড়বে।

উল্লেখ্য, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এখন ২৪৭টি ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত আছে। এর বাইরে বেসরকারি বন্ড আছে ১০টি। ইসলামী সুকুক হলো, একটি ইসলামী আর্থিক পদ্ধতি- যেখানে শেয়ার বা বন্ডের পরিবর্তে প্রকৃত সম্পদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অর্থায়ন করা হয়। 

ইসলামী সুকুক হলো, ওইসব আর্থিক দলিল যা ইসলামী শরিয়াহর নীতি মেনে পরিচালিত হয় এবং সুদমুক্ত ব্যবস্থার ভিত্তিতে আয় দেওয়া হয়। সুকুকে, বিনিয়োগকারীরা মূলত প্রকল্প বা সম্পদে মালিকানা লাভ করেন এবং সেই প্রকল্প বা সম্পদ থেকে আয় লাভ করেন। এটি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা আবাসন প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়। সুকুকের বৈশিষ্ট্য হলো এটি সম্পদের প্রকৃত মালিকানা এবং আয় নিশ্চিত করে, যেখানে সুদের কোনো সংশ্লেষ থাকে না।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!