বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

মশক নিধনে কাজে আসেনি বিসিসির ‘অলআউট কর্মসূচি’!

হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৫, ১১:১৫ এএম

মশক নিধনে কাজে আসেনি বিসিসির ‘অলআউট কর্মসূচি’!

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বরিশাল নগরীতে মশার উপদ্রব রোধে ‘অলআউট কর্মসূচি’ ঘোষণা করেছিল সিটি করপোরেশন। ৪ মার্চ থেকে টানা সাত দিন ক্রমান্বয়ে করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে এই কর্মসূচি চালানো হলেও বরিশাল শহর থেকে পুরোপুরি মশা তাড়ানো সম্ভব হয়নি। বরং দিনরাত শহরে মশার উৎপাত বেড়েই চলছে। চলন্ত বসন্তকালে মশার অস্বাভাবিক বিস্তারে বরিশাল নগরবাসীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে মশকনিধনে আরও জোরদার অভিযান চাইছে শহরবাসী। 

নগরবাসী বলছে, মশার বিস্তারের কারণে বরিশাল অঞ্চলে কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেড়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের তৎপরতা আগের চেয়ে বাড়ানো হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বাসিন্দারা বলছেন, ফগার মেশিন হাতে মশকনিধনকর্মীদের প্রতিনিয়ত ছুটে চলা, বিভিন্ন এলাকার ঝোপ ও বদ্ধ নালায় হ্যান্ড স্প্রে করার চিত্র চোখে পড়লেও এসব কোনো কাজে আসছে না।

নগরের একাধিক বাসিন্দা গত কয়েক বছরের মশার উপদ্রবের অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, আগে নভেম্বর-ডিসেম্বরে মশার উপদ্রব বেশি থাকলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন কথা বলছে। মার্চ মাসেই সর্বত্র মশার ব্যাপক বিস্তৃতি দেখা যাচ্ছে। দিনেও থাকছে মশার দাপট। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, মশার তাণ্ডবে দিনের বেলাতেও অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে ব্যবহার হচ্ছে মশার কয়েল নতুবা মশারি। আর রাতের পরিবেশ তো আরও ভয়াবহ। 

তবে বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, মশানিধনে আগের চেয়ে অনেক বেশি তৎপর সংস্থাটি। তারপরও মশা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। যার পরিপ্রেক্ষিতে সবশেষে ৪ মার্চ সিটি করপোরেশন ‘অলআউট কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। কিন্তু সপ্তাহখানেকের প্রচেষ্টায়ও ৫৮ বর্গমাইলের ৬ লাখের বেশি মানুষকে মশার হাত থেকে পুরোপুরি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

বিসিসি সূত্র জানিয়েছে, অলআউট কর্মসূচির আওতায় ৪ মার্চ অপরাহ্ণ থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১০ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে একযোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করে। সাত দিনব্যাপী এই কর্মসূচি চলে শহরের ত্রিশটি ওয়ার্ডে। এবং হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, যারা নিজ নিজ বাসস্থান পরিষ্কার রাখবেন না, তাদের জরিমানার মুখোমুখি করা হবে। তবে কর্মসূচি সমাপ্ত হলেও শহরের কোনো বাসিন্দাকে জরিমানা করার খবর পাওয়া যায়নি। এবং শহর থেকে মশাও সম্পূর্ণরূপে নিধন করা সম্ভব হয়নি। 

শহর থেকে মশা পুরোপুরি নিধন না হওয়া নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তারা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, বরিশালের ভেতর দিয়ে ২২টি খাল প্রবাহিত হয়েছে। একসময় বর্ষাকালে এসব খালে পানি প্রবাহিত হলেও এখন অনেক জায়গায় খাল শুকিয়ে নর্দমায় পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা, ঝোপঝাড় ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে মশার বংশবিস্তার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ওষুধ ছিটিয়েও তেমন একটা সুফল মিলছে না।

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তা স্বপনকুমার দাস রূপালী বাংলাদেশকে জানান, প্রতিদিন ২৮টি ফগার মেশিনের মাধ্যমে ২৮০ লিটার এডাল্টিসাইড (বড় মশা মারার ওষুধ) প্রয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া চারটি ওয়ার্ডে লার্ভিসাইড (মশার লার্ভা ধ্বংসের ওষুধ) ব্যবহার করা হয়। কিন্তু চারদিকে মশার উপযোগী পরিবেশ থাকায় এই সমস্যার সমাধান কঠিন হয়ে পড়ছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. মনজুরুল হক শুভ্র রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, মশার উপদ্রব রোধে সিটি করপোরেশন একটি ‘পাইলট প্রকল্প’ হাতে নিয়েছিল। পাশাপাশি যাঁদের বাড়িঘর অপরিচ্ছন্ন পাওয়া যায়, তাদের নোটিশ দেওয়া হয়। ১০ জনকে এ ধরনের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ধাপে ধাপে অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরিশাল সিটির ২০নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এলবার্ট রিপন বল্লভ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বরিশাল শহরে আগে ২২টি খাল প্রবহমান ছিল, এসব খালের একটিও এখন সচল নেই। এসব খাল উদ্ধার করে প্রবাহনিশ্চিত করাসহ ড্রেনের পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা সচল করতে না পারলে মশক নিধনের যেকোনো কার্যক্রম সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। 

এ ছাড়া নগরের অধিকাংশ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি, ইট-পাথর-বালু সড়কে স্তূপ করে রাখাসহ নির্মাণসামগ্রী যত্রতত্র রাখায় তা জনভোগান্তির পাশাপাশি মশা-মাছির উৎপত্তিস্থলে পরিণত হয়েছে। এ জন্য সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। মশার বিস্তারে বরিশাল নগরসহ সর্বত্র বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এতে নগরবাসীর মধ্যে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছর বরিশাল নগরসহ বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন ৮ হাজার ৪৫৭ রোগী। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫৮ জন। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৯০ জন।

আগে বিভাগে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি লক্ষ করা গেলেও গত বছর থেকে বছর জুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে, এটা উদ্বেগজনক। এ জন্য মশার বিস্তার রোধে ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত উদ্যোগে কাজ করতে হবে, এমন মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!