ঢাকার প্রথম শাহী ঈদগাহ বা ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ বাংলাদেশের একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। যা বর্তমানে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের মুঘল স্থাপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন এবং বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দ্বারা তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
এই ঈদগাহটির নির্মাণের পেছনে ছিল শাহ সুজা`র প্রধান অমাত্য মীর আবুল কাসেম এর উদ্যোগ, এবং এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে, মোগল আমলে।

ইতিহাস:
ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহটি মুল শহর থেকে কিছুটা দূরে ছিল, কারণ সেই সময় ঢাকার পুরনো শহরে বড় কোনো ঈদগাহ ছিল না, যদিও সেখানে কয়েকটি ছোট ঈদগাহ ছিল। তাই মীর আবুল কাসেম ঈদগাহের জন্য স্থান খোঁজেন এবং শেষে ধানমন্ডি এলাকার দিকে মনোনিবেশ করেন। ধানমন্ডি অঞ্চলের সাত মসজিদ এলাকার কাছে, যা তখন একটি খোলা জায়গা ছিল এবং জল ও স্থলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল। তিনি এখানে ঈদগাহটি নির্মাণ করেন।
সেসময় পান্ডু নদীর একটি শাখা ধানমন্ডি ঈদগাহের পাশে প্রবাহিত হত, যা বর্তমান বুড়িগঙ্গা নদীর সাথে মিলিত হত। প্রথমে এটি শুধুমাত্র সুবেদার, নায়েবে নাজিম এবং অভিজাত মুঘল কর্মকর্তাদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। তবে, সাধারণ জনগণ সেখানে নামাজ পড়ার সুযোগ পেত না। পরবর্তীতে, ঈদগাহটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ফলে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসল্লিরা এখানে এসে ঈদ জামাতে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন।
শাহী ঈদগাহের স্থাপত্য:
ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহটি একটি উন্মুক্ত চত্বর, যা আশপাশের ভূমি থেকে প্রায় ১.৮৩ মিটার (৬ ফুট) উঁচু অবস্থানে নির্মিত। প্রাথমিকভাবে, ঈদগাহ চত্বরের পরিমাপ ছিল ৭৪.৬৮ মিটার x ৪১.৭৬ মিটার, এবং বর্তমানে এটি একটি প্রায় আয়তাকার খোলা চত্বর।
এখানে, পশ্চিম দিকের আদি প্রাচীর এখনো টিকে আছে, যা ঈদগাহের মূল নির্মাণশৈলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঈদগাহের বেষ্টন-প্রাচীরের উচ্চতা প্রথম অবস্থায় ছিল ৪.৫৭ মিটার (১৫ ফুট)।

ঈদগাহের পশ্চিম দেয়ালে কেন্দ্রীয় মিহরাব এবং এর দু’পাশে তিনটি অপেক্ষাকৃত ছোট মিহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অর্ধ-অষ্টভুজাকৃতির, যার মধ্যে চতুঃকেন্দ্রিক সামান্য ঢালু খিলান রয়েছে।
- কেন্দ্রীয় মিহরাব: এর উচ্চতা ৩.০৫ মিটার, এবং এর প্রায় ২.৭৪ মিটার উচ্চতা থেকে ক্রান্তিস্তর শুরু হয়েছে। মিহরাবটি ২.২৬ মিটার চওড়া এবং অর্ধ-অষ্টভুজাকৃতি অংশের ১.৩৫ মিটার দেওয়ালের অভ্যন্তরে প্রবিষ্ট, ফলে দেয়ালের মধ্যভাগে প্রশস্ততা বেশি দেখা যায়। এটি পেছন বা রাস্তা থেকে দেখলে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।
- পার্শ্ব মিহরাবগুলো: এগুলোর উচ্চতা ২.৬৭ মিটার এবং প্রশস্ততা ১.৩৭ মিটার।
সবগুলো মিহরাবই আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে সংস্থাপিত, যা মোগল স্থাপত্যের একটি ঐতিহ্যবাহী বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিচিত।
বর্তমান অবস্থা:
১৯৮১ সাল থেকে, ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত হয়ে আসছে এবং এটি বর্তমানে ঈদের নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিত এবং মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই ঈদগাহটি ঢাকার মুসলমানদের জন্য একটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে, যা বর্তমানেও ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।