ঢাকা বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

ঈদের পরে চাপ বাড়াবে বিএনপি

রুবেল রহমান
প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২৫, ০১:১৬ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদ। শেষ হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজান ঘিরে চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর ইফতার রাজনীতি। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিন দল বিএনপির ইফতার পার্টি। সারা দেশে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ইফতার পার্টি করছেন বিএনপি নেতারা। 

ইফতার রাজনীতিতে পিছিয়ে নেই জামায়াতে ইসলামী কিংবা জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির মতো রাজনৈতিক দলও। বিএনপির বড় আয়োজনে যুক্ত থাকছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সব ছাপিয়ে আলোচনা এখন জাতীয় নির্বাচনের। কবে হবে সেই নির্বাচন? ডিসেম্বরে নাকি আরও পরে। 

তা নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতির মাঠে। প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি গণমাধ্যমে ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও ঠিক আস্থায় নিতে পারছে না বিএনপি। বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চান তারা। ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আদায় করতে ঈদের পর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে দলটি। 

প্রধান উপদেষ্টার ওপর আস্থা আছে মুখে বললেও পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরপরই সরাসরি জাতীয় নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে বিএনপি। ইফতার পার্টির মাধ্যমে সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও সাধারণ জনগণের মধ্যে দলটির জনপ্রিয়তা আরও বাড়াতে নানা কৌশলে এগোচ্ছেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা। ইফতার পার্টির পাশাপাশি ঈদসামগ্রী বিতরণও করছে দলটির জেলা পর্যায়ের নেতারা। 

এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বিএনপি নেতারা। সরকারের নানা সংস্কারকাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শেখ হাসিনার বিচারসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সব কিছু বিবেচনা করে একমাত্র নির্বাচনের লক্ষ্যে বিএনপি এখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। 

এরই মধ্যে বর্ধিত সভা করে ৩০০ আসনে নিজ নিজ এলাকায় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিজ এলাকায় অবস্থান নেওয়ার কথা বলেছে বিএনপির কেন্দ্র। সেই লক্ষ্যে এলাকায় নির্বাচনী মাঠ গোছানোর কাজ করছেন বিএনপি নেতারা। 

এরই মধ্যে ধারাবাহিকভাবে জেলা-উপজেলার পুরোনো কিংবা অকার্যকর কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দিয়ে যাচ্ছে বিএনপির কেন্দ্র। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগ্রহ আছে এমন একাধিক প্রার্থী এখন মাঠে। সর্বোপরি প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন আদায় করতে ঈদের পর ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের ওপর আরো চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে বিএনপি। 

‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মনে করে বিএনপি। এমন ঘটনায় উত্তপ্ত এখন রাজনীতির ময়দান। নির্বাচন নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, তখন এমন আলোচনা সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। যদিও শামসুজ্জামান দুদু মনে করেন, আওয়ামী লীগ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। 

আর অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ বলেছেন, কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা নেই সরকারের, আর তাই দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করাই মঙ্গলজনক। 

তা ছাড়া নতুন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে যতটা সম্ভব অবমূল্যায়ন করা এবং ক্ষমতাহীন করাই উদ্দেশ্য, যার ফলশ্রুতিতে একটি দুর্বল ও প্রায় অকার্যকর সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। 

শনিবার সকালে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে একমত হতে পারেনি। বিএনপি বলছে, কিছু রাজনৈতিক দলের বক্তব্য আর সংস্কার কমিশনের বক্তব্য একই সুরে গাঁথা। তাতে বাড়ছে সন্দেহ। বিএনপি মনে করে, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার প্রয়াশ হতে পারে এই ধরনের পদক্ষেপ। 

এরই মধ্যে জরুরি অবস্থা জারি কিংবা আওয়ামী লীগ ফেরার গুজবে সরগরম অন্তর্জাল। নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে যখন চলছে সংলাপ, তখন আওয়ামী লীগ ফেরার আলোচনায় নড়েচড়ে বসছে রাজনৈতিক দলগুলো। 

যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই আপাতত। তবে ফ্যাসিবাদ ও গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চায় বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। নির্বাচনী আলোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগ ফেরার আলোচনাকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দিয়েছে শেখ হাসিনা নিজেই, আর ফেরার সুযোগ নেই তাদের। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যে অন্যায় করেছে, ভিন্নমতের মানুষের ওপর যে নিপীড়ন পালিয়েছে, তাদের বিচার দেশের মানুষ করবে। আমরা নির্বাচন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার দিকে তাকিয়ে আছি, তিনি বলেছেন ডিসেম্বরে নির্বাচন। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, তার কথা তিনি রাখবেন। তবে নানা ধরনের কথা শুনছি, আমরা আমাদের প্রস্তুতি রাখছি। ঈদের পর আমরা নতুনভাবে চিন্তা করব। 

নতুন দল এনসিপির এটা প্রথম নির্বাচন, তাদের তো এটা শেষ নির্বাচন নয়। তারা সব কিছু নিজেদের মতো কেন চাইছে সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। রূপালী বাংলাদেশকে এমন কথা জানান ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির ১নং সদস্য আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার। বলেন, এসব অজুহাতে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করলে সংকট এবং বিপদ আরও বাড়বে। 

নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাইলে রাজপথে নামবে বিএনপি। দুই মহানগরের নেতারা প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ইফতার মাহফিল করছেন, সেখান থেকে একটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে- নির্বাচন দিতে না চাইলে আদায় করে নিতে হবে। অধিকার কেউ দেয় না, আদায় করে নিতে হয়। 

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সম্প্রতি সরকার থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠন করেছেন নাহিদ ইসলাম। প্রশ্ন হলো, সরকারে থাকা বন্ধুদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিতে পারেন তারা, এমন সন্দেহ করছে বিএনপি। 

বন্ধুর কাছ থেকে বন্ধু সুবিধা নেবে সেটা খুব স্বাভাবিক। তারা একসঙ্গে আন্দোলন করেছে। একসঙ্গে সরকারে ছিল। তারা বাড়তি সুবিধা নিতে পারে। নির্বাচনের আগে সরকার থেকে পদত্যাগ করে দলেও যোগ দিতে পারে। আমরা চাইব না এমন কোনো পরিস্থির তৈরি হোক। নির্বাচন করে তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুক। রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। তবে অবশ্যই ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সরকারে যোগ্য লোকের অভাব নেই, তাদের যার যার সেক্টরে খুব সুনাম। আমরা চাই তাদের সুনাম অক্ষুণ্ন থাকুক। তবে রাজনৈতিক দক্ষতার অভাব রয়েছে তাদের। দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই তাদের।

ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা, আমরা বিশ্বাস করি তার কথা তিনি রাখবেন। আরও আগে নির্বাচন হলে মানুষের সমস্যা আরও কমে আসবে। কথা না রাখলে আমাদের নামতে হবে রাজপথে। এই সরকার একটি দুর্বল সরকার। এনজিও পরিচালনা আর রাষ্ট্র পরিচালনা এক নয়।

তিনি বলেন, সংস্কারের নামে বিলম্ব করার চক্রান্ত চলছে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। দেশ অস্থিতিশীল হতে পারে বলে মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই নেতা। 

বিএনপি চায় স্বল্প পরিসরে সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। সংস্কারের যেন আবার সংস্কার প্রয়োজন না হয়। তাতে করে সংকট আরও বাড়বে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের তাগিদ বিএনপি নেতাদের।