রমজান মাসের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে ঈদের কেনাকাটা তুঙ্গে। দিনের প্রচণ্ড গরম ও যানজট এড়াতে রাতের বেলাই হয়ে উঠেছে কেনাকাটার প্রধান সময়। তবে রাত গভীর হলেও ভিড়ের কমতি নেই রাজধানীর শপিংমলগুলোতে।
ব্যবসায়ীদের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি, কারণ মধ্যরাত পর্যন্তও চলছে বেচাকেনার ব্যস্ততা। রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে বিকেলের পর থেকেই বাড়তে থাকে ক্রেতাদের চাপ। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিড় আরও ঘন হয়ে ওঠে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদ ঘিরে এখনো জমজমাট রাজধানীর মার্কেটগুলো। অনেকে রেডিমেট পোশাকের পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষদের ভিড় ফুটপাতের দোকানগুলোতে। আর ঈদের কেনাকাটা শেষে স্বচ্ছলদের চোখ জুয়েলারি-কসমেটিক পণ্যে।
তবে শেষ সময়ে ভিড় কিছুটা কমায় স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করছেন সাধারণ মানুষ। বিক্রেতারাও চাচ্ছেন না বাড়তি দাম। ঈদের কেনাকাটা শেষে রাজধানী থেকে অনেকেই এখন গ্রামের বাড়ির পথে।
তবে বেতন-বোনাস দেরিতে পাওয়ায় কেরানীগঞ্জের নিরব-ময়না দম্পতির ঈদ কেনাকাটা শুরু হয় গতকাল শুক্রবার। রাজধানীর নিউমার্কেটে এসে তারা খোঁজ করেন স্বল্পমূল্যের পোশাকের।
এই দম্পতি জানান, বেতন-বোনাস পেতে দেরি হয়েছে। এখনও দুইদিন-তিনদিন বাকি আছে। তাই শেষ সময়ে কেনাকাটা করছি। রাত বারোটার সময়ও সরগরম রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা।
হাজার হাজার ক্রেতা নিউমার্কেট, চন্দিমা মার্কেট, নুরজাহান মার্কেটসহ আশেপাশের দোকানে শেষ মুহুর্তের কেনাকাটা করছেন। এখানকার মার্কেটগুলোতে যত দূর চোখ যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ। যেন জনস্রোত। বিপণিবিতান কিংবা ফুটপাত, কোথাও দাঁড়ানোর এক চিলতে জায়গা নেই। মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতারা দোকান ঘুরে ঘুরে পছন্দের পোশাকসহ প্রয়োজনীয় জিনিস কিনছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরে জুমার নামাজের পর থেকেই ক্রেতারা বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় জমাতে শুরু করেন। তবে সন্ধ্যার পর থেকেই মূলত ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে। রাত যত বাড়তে থাকে, ক্রেতাদের উপস্থিতিও তত বাড়তে থাকে।
এ অবস্থায় মধ্যরাতেই ঈদের কেনাকাটা বেশি জমে ওঠে। রাত ১১ টার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় দেখা যায়, পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন ক্রেতারা। বাবা-মায়ের হাত ধরে এসেছে ছোট শিশুরাও। মধ্যরাতে এমন জমজমাট কেনাকাটা দেখে বোঝার উপায় নেইÍ
এটি রাতের একটি সময়, যেখানে সাধারণত শহর ঘুমাতে শুরু করে। ক্রেতারা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, সারাদিন রোজা রেখে কেনাকাটা করা বেশ কষ্টসাধ্য। এছাড়া অফিস, ব্যক্তিগত ব্যস্ততা ও তীব্র গরমের কারণে দিনের বেলায় শপিং করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ছুটি শুরু হওয়াতে বিকেল গড়ানোর পর থেকে শুরু হয় কেনাকাটার ধুম, যা গভীর রাত পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
মিনহাজুর রহমান নয়ন নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদে সবার জন্যই কিছু না কিছু কিনতে হয়। দিনের বেলা সময় পাই না, তাই রাতেই মার্কেটে আসি। কিন্তু মধ্যরাতেও এত ভিড় হবে ভাবিনি। তবে ভালো লাগছে এমন জমজমাট মার্কেট দেখে।
বিক্রেতারা জানান, শুরুতে বেচাকেনা কিছুটা কম থাকলেও এখন বাজার পুরোদমে জমে উঠেছে। রাতের বেলাতেও চলছে দফায় দফায় দর-কষাকষি। পোশাক, কসমেটিকস, জুয়েলারি থেকে শুরু করে সব দোকানেই ভিড় লেগেই আছে। এই সময়টা আমাদের জন্য স্বর্ণযুগ বলতে পারে! রাত ১২টা, ১টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখছি, তারপরও ক্রেতাদের চাপ কমছে না।
আশা করছি, চাঁদরাত পর্যন্ত এমন বেচাকেনা চলবে। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, কেনাকাটার উন্মাদনাও তত বাড়ছে। অনেকেই শেষ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, চাঁদরাত পর্যন্ত এমনই জমজমাট থাকবে বাজার।
ক্রেতারা বলছেন, দিন হোক বা রাত পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনকে ঘিরে চলছে কেনাকাটার উৎসব। ক্রেতাদের পদচারণে মুখরিত শপিংমলগুলো জানান দিচ্ছে, ঈদের আনন্দ যেন শুরু হয়ে গেছে আগেভাগেই!