ঈদযাত্রায় দূরপাল্লার গণপরিবহনের টিকিট যেন সোনার হরিণ। প্রতিবারই যাত্রীদের দুশ্চিন্তার অন্যতম বড় কারণ থাকে টিকিট পাওয়া নিয়ে। যাত্রাকালে শেষ মুহূর্তের ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে তাই অনেকেই আগে ভাগে টিকিট কেটে রাখেন অনলাইনে।
তারই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদুল ফিতরেও বিভিন্ন টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে অনলাইনে দৈনিক লক্ষাধিক টিকিট বিক্রি হয়েছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার প্রথম সারির প্রায় সব বাস অপারেটরের টিকিট এবার সংগ্রহ করা গেছে অনলাইনে।
সহজ ডট কম, বিডিটিকিটস এবং যাত্রীর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর পাশাপাশি বাস অপারেটররা নিজেরাও অনলাইনে টিকিট বিক্রি করেছেন।
২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টিকিট বিক্রি করেছিল সহজ ডট কম। বাস, ট্রেন এবং লঞ্চের টিকিট কেনার সুযোগ ছিল প্ল্যাটফর্মটিতে। সহজ ডট কম সূত্রে জানা যায়, বাস এবং ট্রেনের টিকিট উল্লেখযোগ্য হারে বিক্রি হলেও, লঞ্চের টিকিট বিক্রি হয়েছে খুবই নগণ্য।
গতবারের ধারাবাহিকতায়, এ বছর প্রায় আড়াই লাখের বেশি টিকিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। আরেক টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম বিডিটিকেটস এবারের ঈদযাত্রায় প্রায় ২০ লাখ টিকিট বিক্রির প্রত্যাশা করছে। তবে এখন পর্যন্ত ঠিক কী পরিমাণ টিকিট বিক্রি হয়েছে, সে বিষয়ে সহজ এবং বিডিটিকিটসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অবশ্য সহজ জানিয়েছে যে, ঈদের মৌসুমে গড়ে দৈনিক প্রায় ৩০ হাজার রেলের টিকিট বিক্রি করেছে প্ল্যাটফর্মটি। এ ছাড়াও সরাসরি সহজ এবং সহজের কারিগরি সহায়তায় কাউন্টার থেকে গড়ে দৈনিক ৯০ হাজার বাসের টিকিট বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে আরেকটি প্ল্যাটফর্ম অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছি। যদিও নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি প্ল্যাটফর্মটি।
গত বছরের ঈদুল ফিতরের তুলনায় এবারের ঈদে অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে অন্তত ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখছে প্ল্যাটফর্মগুলো। এ বিষয়ে সহজ ডট কম জানায়, সাধারণত ঈদ মৌসুমে টিকিটের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, যা বিক্রিতে প্রতিফলিত হয়।
গত বছর ১ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি বিক্রি হয়েছিল এবং এ বছর আমরা আশা করছি ২ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি টিকিট শুধু অনলাইনে বিক্রি হবে। অর্থাৎ প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি টিকিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
অনলাইন টিকিটিং সম্পর্কে যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া, করোনা-পরবর্তী সময়ে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রসার এবং টিকিট কেনার প্রক্রিয়া আরও সহজ ও সময়সাশ্রয়ী হওয়ায় যাত্রীরা অনলাইনে টিকিট কিনতে আরও বেশি আগ্রহী হচ্ছেন বলে মনে করে সহজ। গত বছর ৮০টি এবং এবার ১২০টিরও বেশি পরিবহন অপারেটরের টিকিট বিক্রি করেছে সহজ।
অন্যদিকে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং পরিবহন অপারেটরগুলোর তথ্যসূত্রে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের চলাচলের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ ১ এপ্রিলের আগের ৭ দিন গণপরিবহনে যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি।
অনলাইনে টিকিট নেওয়া যাত্রীদের ৮৪ শতাংশই ভ্রমণ করবেন ঈদুল ফিতরের আগের সাত দিনে। বাকি ১৬ শতাংশ ভ্রমণ করবেন ঈদুল ফিতরের পরের সাত দিনে।
অন্যদিকে অনলাইন টিকিট ক্রয়কারী যাত্রীদের ৯০ শতাংশই ভ্রমণ করবেন শনিবার এবং রোববার; অর্থাৎ সোমবার ঈদুল ফিতরের হিসেবের আগের দুই দিন। তবে এবারের ঈদের ছুটি পূর্বের তুলনায় বেশি হওয়ায় যাত্রীর চাপ সেভাবে বোঝা যায়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি টিকিটের সহজলভ্যতা থাকায় কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য কমেছে বলেও অভিমত তাদের।
অনলাইন টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম ‘যাত্রী’-এর কো-ফাউন্ডার ও চিফ বিজনেস অফিসার মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ছুটি লম্বা হওয়ায় এবার যাত্রীর চাপ সেভাবে বোঝা যাচ্ছে না। এবারের ছুটি বেশি হওয়ায় যাত্রীরা পরিকল্পিতভাবে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করেছে এবং বাস অপারেটররাও সেভাবে সুশৃঙ্খলভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
আগে একই দিনে প্রচুরসংখ্যক যাত্রী ভ্রমণ করত। এবার তেমনটা হয়নি। ফলে পরিবহন সংকট হয়নি এবং গণপরিবহনের দৈনিক চাহিদা কম ছিল। ফলে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য কম ছিল। যেহেতু টিকিটের সংকট নেই, তাই অসাধু প্র্যাকটিস নেই।
এদিকে অনলাইনে টিকিট কিনে সন্তুষ্ট যাত্রীরাও। অনলাইনে টিকিট কেনাবেচায় সব লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে হওয়ায় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে না তাদের। ফলে সাশ্রয়ে যাত্রীরা গণপরিবহনের টিকিট কিনতে পারছেনÑ বললেন যাত্রীরা।
রাজধানীর বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা সামিরা আক্তার ঈদযাত্রায় এবার টিকিট কিনেছেন অনলাইনে। নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সামিরা আক্তার বলেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা।
কোন অপারেটর কোন রুটের জন্য কত টাকা ভাড়া নিচ্ছে, এটা দেখা যায়; প্রমাণ থাকে। আবার অনলাইনে টিকিট কিনলে কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিটের অর্থ পরিশোধ করতে হয়। পেমেন্ট হলেই টিকিটটি কনফার্ম হয়।
ফলে কাউন্টারে নগদ অর্থ নিয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা নেই, টিকিট কিনতে বাড়তি টাকাও লাগছে না এবং কেউ বাড়তি অর্থ নিলে তার প্রমাণ থাকবে। এ ধরনের সুবিধাগুলো অনলাইন টিকিট কেনাকাটায় রয়েছে, তাই আমি অনলাইনেই টিকিট কিনেছি এবার।
আপনার মতামত লিখুন :